'শেষের কবিতা'র অমিত-লাবণ্য বাস্তবে রবি ঠাকুর ও রাণু! হলফ করে বলা যায় না, কিন্তু হলেই বা মন্দ কী?
- Published by:Rukmini Mazumder
- news18 bangla
Last Updated:
কলকাতা থেকে শিলংয়ে বেড়াতে এসেছিলেন 'শেষের কবিতা'র অমিত রায়। সেখানেই, আচমকা পাহাড়ের বাঁকে দেখা হয় অমিত আর লাবণ্যর। তৈরি হয় চিরকালীন প্রেমগাঁথা 'শেষের কবিতা'
কলকাতা থেকে শিলংয়ে বেড়াতে এসেছিলেন 'শেষের কবিতা'র অমিত রায়। সেখানেই, আচমকা পাহাড়ের বাঁকে দেখা হয় অমিত আর লাবণ্যর। তৈরি হয় চিরকালীন প্রেমগাঁথা 'শেষের কবিতা'।
অমিত সুনীতি চাটুজ্যের সঙ্গে শব্দতত্ত্ব নিয়ে তর্ক করতে আগ্রহী, একজন সৃষ্টিশীল কবি হিসেবে সে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মানে একমাত্র রবি ঠাকুরকেই, তাঁর প্রতিটি কথা ঠাকুরবাড়ির আভিজাত্যকেই মনে করিয়ে দেয়! কাজেই, উপন্যাসের অমিত রায় হতেই পারেন খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
এর আগে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কোনও রচনায় স্বনামে এবং প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত থাকেননি, যেমনটা রয়েছেন 'শেষের কবিতা'য়। উপন্যাসের পাতায় পাতায় এসেছে 'রবি ঠাকুর'। লাবণ্যকে পাঠানো অমিতের শেষ কবিতাটি তো 'রবি ঠাকুর'-এরই কবিতা, শেষ মুহূর্তে সে-কথা ব্যক্ত করেছে অমিত। রবি ঠাকুর যে লাবণ্যর 'ভালোলাগা', 'ভালোবাসা'র কবি, অমিত তা জানত। তাই লাবণ্যকে লেখা তাঁর শেষ চিঠির শেষ বাক্যে লিখেছিল, ''তোমারই কবির উপর ভার দিলুম আমার শেষ কথাটা তোমাকে জানাবার জন্য।''
advertisement
advertisement
শেষের কবিতা লেখার পাঁচ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলং এসেছিলেন। বয়স তখন ৬২। কিন্তু তিনি সত্যিসত্যিই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, বয়সের মাপকাঠিতে নয়, 'দুর্লভ যুবকত্ব নির্জলা যৌবনের জোরেই...।''
১৯২৩-এ 'নির্জলা যৌবনের' অধিকারী 'ছাব্বিশ'-এর রবীন্দ্রনাথ অমিতের মতোই, শিলং-এর পথে পথে ঘুরেছিলেন এক সপ্তদশী সুন্দরীকে সঙ্গে নিয়ে। মেতেছিলেন গল্পে, কৌতুকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা দুজনকে অসমবয়সি মনে করলেও, কবির ভ্রমণসঙ্গিণীর কাছে তিনি ছিলেন 'সাতাশ' বছরের তরুণ! কবি ঠাট্টা করে বলতেন, 'সাতাশ'কে লোকে 'সাতাশি' শুনবে, বরং 'ছাব্বিশ' ভাল! অনেকে বলেন, শিলং পাহাড়ে কবির সেই ভ্রমণসঙ্গিণীর নাম ছিল রাণু-- রাণু অধিকারী। তবে, এটা হলফ করে বলা যায় না! কিন্তু মিল রয়েছে অনেক।
advertisement
আমিত্রসুদন ভট্টাচার্য তাঁর 'রবীন্দ্রনাথ রাণু ও শেষের কবিতা'য় এমন কিছু সাদৃশ্যে তুলে ধরেছেব। যেমন, রাণু ও লাবণ্য, দুজনেই রবি ঠাকুরের প্রতি অনুরক্ত। পোশাক-আসাকেরও মিল রয়েছে অনেক। শেষের কবিতা লেখা সময় কবি বলেছেন, লাবণ্য তাঁর খুব চেনা। দু'জনের বাবার একই পেশা। লাবণ্যর বাবা অবিনাশ দত্ত এক পশ্চিমি কলেজের অধ্যক্ষ, রাণুর বাবা ফণিভূষণ অধিকারি ছিলেন দিল্লির হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ।
advertisement
শোভনলালের সঙ্গে যেমন লাবণ্যর, তেমনি আট বছরের সম্পর্কর শেষে রাণুরও বিয়ে হয়ে যায় শিল্পপতি পুত্র বীরেন্দ্রর সঙ্গে। শেষের কবিতার সমাপ্তি যেমন, কেটির সঙ্গে অমিতের এবং লাবণ্যর সঙ্গে শোভনলালের আসন্ন বিয়ের খবর দিয়ে, তেমনি রাণু-রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে যে জীবন-উপন্যাস, তারও সমাপ্তি রাণুর বিয়ের সম্ভাবনার সংবাদেই!
অমিত-লাবণ্যর প্রেম গড়ে উঠেছিল শিলং পাহাড়ে। আবার এই শিলং পাহাড়েই রাণুকে খুব কাছ থেকে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। টানা প্রায় দেড়মাস, শিলং-এর 'জিৎভূমি' বাড়িতে। রবীন্দ্রনাথ শিলং-এ এসেছিলেন মোট তিনবার। ১৯১৯,১৯২৩ ও ১৯২৭। দ্বিতীয়বারের সঙ্গী রাণু। তাঁর বিয়ে হয় ১৯২৫-এ। ১৯২৭-এ শিলং-এ এসে রবি ঠাকুর রাণুকে লিখলেন, 'রাণু, শিলঙে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু এ আর এক শিলং।''
Location :
First Published :
May 08, 2020 12:27 PM IST