ফ্লপ মাস্টার জেনারেল থেকে সুপারস্টার, এলিজাবেথ টেলারের উন্মাদনা... আজও বাঙালির একটাই 'নায়ক'
- Published by:Rukmini Mazumder
- news18 bangla
Last Updated:
২৪ জুলাই, ১৯৮০। সমস্ত মায়া, রুপোলি পর্দার হাতছানি হেলায় কাটিয়ে পৃথিবী ছাড়লেন উত্তম। আজ তাঁর ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাঙালি মননে আজও তাঁর ক্যারিশ্মা এতটুকু ফিকে হয়নি... আজও তিনি এক ও একমাত্র, অবিসংবিদিত মহানায়ক!
#কলকাতা: ২৪ জুলাই, ১৯৮০। সমস্ত মায়া, রুপোলি পর্দার হাতছানি হেলায় কাটিয়ে পৃথিবী ছাড়লেন উত্তম। আজ তাঁর ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাঙালি মননে আজও তাঁর ক্যারিশ্মা এতটুকু ফিকে হয়নি... আজও তিনি এক ও একমাত্র, অবিসংবিদিত মহানায়ক!
অভাবের সংসার... নুন আনতে পান্তা ফুরায়...পড়াশোনা শেষ না করেই টাকা রোজগারের তাগিদে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে ক্লার্কের কাজে যোগ দিলেন উত্তম কুমার। তখনই আহিরীটোলায় নিজেদের থিয়েটার গ্রুপ ‘সুহৃদ সমাজ’-এ নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন ! থিয়েটার করতে করতেই টালিগঞ্জে ডাক পেলেন! অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় তখন নিউ থিয়েটার্সের মাইনে করা সহকারী পরিচালক। উত্তমকুমার অডিশন দিতে গেলেন, কিন্তু ভাগ্যের দশায় মশা! ছবিটা পেলেন না! কিন্তু অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেল। এরপর প্রায় প্রতিদিনই টালিগঞ্জ যেতে শুরু করলেন উত্তমকুমার। ততদিনে অনেকের সঙ্গেই সখ্যতা গড়ে উঠেছে কমবেশি, এর তার সঙ্গে গল্পগুজবের ফাঁকে খোঁজ নিতেন, কোনও ছবির খবর আছে কিনা...
advertisement
ছবির প্রতি এক অদম্য আগ্রহ ছিল উত্তমকুমারের! কোনও বাছবিচার ছিল না, যে-কোনও চরিত্রেই অভিনয় করতে রাজি হয়ে যেতেন, অভিনয়ের এক চূড়ান্ত খিদে তাকে কুড়েকুড়ে খেত! নিউ থিয়েটার্সের দিলীপ সরকার বলেছিলেন, “উত্তম ছবিতে অভিনয় করার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী ছিলেন। একবার উনি এসেছেন, তখন নিউ থিয়েটার্সে একটা ছবির শুটিং চলছিল। পরের দিন বিয়েবাড়ির একটা দৃশ্যের শুটিং হবে, তার জন্য বরযাত্রীর লোক লাগবে। তাঁকে বলতেই রাজি হয়ে গেলেন। পরের দিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে তৈরি। এই ছিলেন উত্তম।”
advertisement
advertisement
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একের পর এক সিনেমা করলেও সব কটাই ফ্লপ হয়। তার মধ্যে ‘বসুবাড়ি’ ছবিটি তাও যা একটু চলেছিল। সেইসময় উত্তমকুমারকে দেখলেই টালিগঞ্জের লোকজন মুখ ফিরিয়ে নিতেন। উত্তমের নাম-ই হয়ে উঠল ফ্লপমাস্টার জেনারেল। এমনকী তখনকার হিট নায়ক-অভিনেতারা প্রযোজক-পরিচালকদের বলতেন, ‘কেন ওকে নিচ্ছেন ছবিতে! টাকাটা জলে ফেলবেন কেন?’ সেইসব কথা কানে যেত উত্তমের, কিন্তু তিনি দমে যাননি! তিনি যে মহানায়ক হতে এসেছিলেন... অল্পসল্পতে হাল ছেড়ে দেওয়া কি আর তাঁকে মানায় ? মুখ বুজে সব সহ্য করতেন , কাউকে একটা কথাও বলেননি, উপরন্তু সেই সমস্ত লোকের সঙ্গে পরবর্তী কালে, যখন তিনি সাফল্যের শীর্ষে, তখনও হেসে কথা বলেছেন।
advertisement
১৯৫৩-তে উত্তমের কামব্যাক নির্মল দের ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর হাত ধরে! সুপার ডুপার হিট! তখনকার ভাষায় যাকে বলে কিনা বাম্পার হিট ছবি! এই ছবিই জন্ম দিল বাংলা ছবির হিট জুটি ‘উত্তম-সুচিত্রা'র।
সত্যজিৎ রায়ও উত্তমকুমারকে নিয়ে ছবি করেছেন। তাঁর কথা মাথায় রেখেই ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘নায়ক’ উত্তমের কেরিয়ারের ১১০তম ছবি। সত্যজিৎ রায় তাঁকে নেওয়ার পর বুদ্ধিজীবী মহলে কলকে পেয়েছিলেন তিনি। তার আগে উত্তমকুমারকে অভিনেতা বলেই স্বীকৃতি দিত না বুদ্ধিজীবী মহল, তিনি ছিলেন শুধুমাত্র 'ম্যাটিনি আইডল'! হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর ‘নায়ক’ দেখে উচ্ছ্বসিত, উত্তমের সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছিলেন।
advertisement
১৯৭৬ সাল... তখন জরুরি অবস্থা চলছে। মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’ নাম দিয়ে এক বিকল্প অনুষ্ঠান আয়োজিত হল। রেডিওতে সেই অনুষ্ঠান করেছিলেন উত্তমকুমার। তবে বাণীকুমারের জায়গায় তাঁকে মেনে নেয়নি জনতা। ওই এক বারই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র প্রচার বন্ধ হয়েছিল। উত্তমও সরে দাঁড়ালেন বিনয়ের সঙ্গে।
শুধু অভিনেতা নন, প্রযোজক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন উত্তমকুমার। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’য় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। সুবোধ ঘোষ ও তরুণ রায়ের দু’টি ছোট গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন উত্তমকুমার। ‘বন পলাশির পদাবলী’র পরিচালনার কাজ আজও দর্শকমনে অমলীন। উপন্যাসটির লেখক রমাপদ চৌধুরী বলেছিলেন, “দেখার পর মনে হয়েছিল, আমার লেখার থেকেও ছবিটি ভাল হয়েছে। এত বড় ক্যানভাসে এমন ছবি করার জন্য ক্ষমতা লাগে, সেটা উত্তমকুমারের আছে।”
view commentsLocation :
First Published :
July 24, 2020 1:17 PM IST