Explained: যুদ্ধ ও এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আবহে কি দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তেই থাকবে?

Last Updated:

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির দাম আগুন। ইতিমধ্যেই দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

#নয়াদিল্লি: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে (Russia-Ukraine War) হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত ও সঙ্কটজনক সময়। করোনাভাইরাস বিশ্ব থেকে এখনও বিদায় নেয়নি। তার মধ্য়েই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। যে সমস্ত বিষয়গুলিতে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে, তার মধ্যে অন্যতম খাদ্য সঙ্কট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সার ও গম রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম এই বছর রেকর্ড মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা, বন্যা এবং তাপপ্রবাহ কৃষির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অফ এক্সপার্টস অন সাসটেইনেবল ফুড সিস্টেম (International Panel of Experts on Sustainable Food Systems) শুক্রবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেছে, মার্চ মাসে গমের দাম ১৪ বছরে সর্বোচ্চ পৌঁছে যায়। একই পরিস্থিতি ভুট্টার ক্ষেত্রেও। খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি গরিব দেশগুলিতে সমস্যা ক্রমেই গুরুতর করে তুলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির দাম আগুন। ইতিমধ্যেই দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
advertisement
জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যাপক দারিদ্র্য এবং যুদ্ধ এখন বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় এবং ব্যাপক আকারে ঝুঁকি তৈরি করছে। ব্যবস্থা নেওয়া না হলে খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম পরানো মুশকিল। কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে নজর দিলেই হবে না। বরং পণ্যের অনুমান মোকাবিলা, ঋণ প্রদান, রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা কমানো, বাণিজ্য চুক্তি পুনর্নির্মাণ এবং জাতীয় শস্যের মজুতের পরিমাণ ধরে রাখার দিকে নজর দিতে হবে। যদি এই বিষয়গুলিকে অবহেলা করা হয়, তাহলে বিশ্ব নিজেকে ভবিষ্যতের বিপর্যয়কর এবং পদ্ধতিগত খাদ্য সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে।
advertisement
খাদ্যের দাম এখন এত বেশি কেন?
রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিশ্বের মোট গমের চাহিদার ৩০ শতাংশ রফতানি করে। যুদ্ধের কারণে গমের রফতানি কমেছে। সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশই আসে এই দুই দেশ থেকে। ফলে এই ধরনের পণ্যের উৎপাদন কমার জেরে সেগুলির দাম ইতিমধ্যেই চড়েছে। রাশিয়ার সার উপাদানের প্রাথমিক বাজার হল ব্রাজিল, এস্তোনিয়া, চিন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, মেক্সিকো, পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং লাটভিয়া। ইউএস সেন্টার ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড সিকিউরিটির ব্রিজিট হিউ বলেছেন, যেখানে গমের ফলন হয়, সেখানে গমের জাতীয় মজুত তুলনামূলকভাবে বেশিই থাকে। কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে রফতানি কমে যাওয়াতে বিশ্ব বাজারে গমের আকাল দেখা দিয়েছে। আগে থেকেই মজুত করা অবশিষ্ট গমের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যার ফলে দামও বাড়ছে। এতে বিশেষ করে দরিদ্র, ঋণে জর্জরিত দেশগুলিতে পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছে। কারণ এই দেশগুলি আমদানির উপর খুব বেশি নির্ভর করে।
advertisement
আফ্রিকার গম আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে আসে। বিশ্বব্যাপী গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় লেবাননে রুটির দাম ৭০ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি দাম বেড়েছে ভুট্টা, চাল এবং সয়াবিনেরও। কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে গম রফতানিতে বাধাই দাম বৃদ্ধির পেছনে একমাত্র দায়ী নয়।
বিশ্বব্যাপী সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কি ফলন বাড়ানো যায় না?
advertisement
কয়েকটি গম-উৎপাদনকারী দেশ ইতিমধ্যেই আরও ফলন বাড়িয়েছে। ভারতও বলেছে যে তারা চাহিদা মেটাতে গমের রফতানি বাড়াবে। যদিও বর্তমান তাপপ্রবাহ গমের ফলন কম করতে পারে। কিন্তু রাসায়নিক সারের ঘাটতির কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা মার খাচ্ছে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী কৃষি ও খাদ্যের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। রাশিয়া প্রচুর পরিমাণে সারের মূল উপাদন, যেমন পটাশ এবং ফসফেট উৎপাদন করে। সরবরাহের খরচ বৃদ্ধি, বেলারুশের উপর নিষেধাজ্ঞা (আরেকটি প্রধান পটাশ সরবরাহকারী) এবং চরম আবহাওয়ার মিলিত সমস্যায় গত বছর সারের দাম বাড়ে। যা সরাসরি খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। রাশিয়া এবং বেলারুশ গত বছর মোট রফতানির ৪০ শতাংশ পটাশ উৎপাদন করেছিল। যুদ্ধের কারণে এবার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
advertisement
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: খরা, তাপপ্রবাহ থেকে বন্যা এবং নতুন নতুন কীটপতঙ্গ, কৃষকরা বর্তমানে এই সমস্য়াগুলির মুখোমুখি হচ্ছে। তাই সঠিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন নিয়ে তারা উদ্বেগে রয়েছে। কার্বন নির্গমন ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সমস্যা আরও খারাপ হতে চলেছে। সেই সঙ্গে ক্রমেই কমছে গম, ভুট্টা এবং ধান রোপণের জন্য উপলব্ধ জমির পরিমাণ। এর জন্য দায়ী শিল্প। কৃষিজমি ধ্বংস করে শিল্পের নির্মাণ হচ্ছে। আবার ব্রাজিলের মতো দেশে বনাঞ্চল ধ্বংস করে কৃষি জমির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের উপরে।
advertisement
পরিবেশ ও সমাজ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থাকা টিম বেন্টন বলেন, "খাদ্য উৎপাদন, প্রকৃতি রক্ষা, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি স্থাপন ও কার্বন নির্গমন কম করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে পরিমাণ সীমিত হলে, জমি এই শতাব্দীর কৌশলগত বৈশ্বিক সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।" তাই অনেকেই মনে করছে, আরও কৃষি জমির দখল ও ভবিষ্যতের বিশ্ব খাদ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্য থেকেই ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
advertisement
কী করলে খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকবে?
বিশ্বের মোট শস্যের উৎপাদনের একটি বড় অংশ গবাদি পশুদের খাওয়ানোর জন্য যায়। মানুষকে মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার কম খেতে বলা হলে শস্যের সরবরাহ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যেতে পারে। ফ্রান্সের একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ পিয়েরে-মারি আউবার্ট বলেছেন, এই বছর রফতানি বাজারে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ঘাটতি ২০-২৫ মিলিয়ন টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ইউরোপীয়রা যদি একা তাদের প্রাণীজ পণ্যের ব্যবহার ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয় তবে তারা ১৮-১৯ মিলিয়ন টন চাহিদা কমাতে পারে। খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেসব দেশ আমদানির উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, সেই দেশগুলিকে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে জোর দিতে হবে। শস্য সংরক্ষণ বাড়াতে হবে। রফতানির জন্য অর্থকরী নয়, এমন খাদ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এছাড়াও অল্প সংখ্যক রফতানিকারকদের দ্বারা বাজারের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য মুছে ফেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র কয়েকটি শস্যের উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের শস্য রোপণ করা খাদ্য নিরাপত্তা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নীতি পরিবর্তন: খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনা কাজের। যেমন আফ্রিকার নতুন মহাদেশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল, এই ব্যবস্থা কয়েকটি দরিদ্র দেশকে দূরবর্তী উৎপাদক এবং খারাপ সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য স্মার্ট ফার্মিংয়ে জোর দিতে হবে, এটি বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে। দরিদ্র দেশগুলিকে এজন্য ঋণ দিতে হবে।
খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে কী হবে?
বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আফগানিস্তান, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান এবং সিরিয়ার মতো যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলিতে সমস্যা মারাত্মক আকার নিয়েছে। ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে আন্তর্জাতিক সাহায্য ব্যবস্থা এমনিতেই ধুঁকছিল। আর এখন, বেশি দাম দিয়ে কম পরিমাণ শস্য কেনা যাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান গেরনট ল্যাগান্ডা থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেছেন, "এটা এতটা খারাপ কখনও ছিল না। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যোগ হওয়া খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি ও মূল্যবৃদ্ধি হল একটি ছুটন্ত ট্রেন, যা থামাতে পারা যাবে না।" তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেছেন, "পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। যেহেতু ব্যয়বহুল খাদ্যপণ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে এবং সরকারি তহবিল ফাঁকা করতে পারে, তাই এটি জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার সমস্ত প্রচেষ্টাকে লাইনচ্যুত করতে পারে। যা আরও বেশি দারিদ্র্য, অশান্তি এবং ক্ষুধার একটি দুষ্ট চক্র চালাতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যের দামে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। সস্তায় খাদ্য না পাওয়া অনেকটাই বাস্তব হতে চলেছে।"
রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য সংস্থা শুক্রবার বলেছে যে মার্চ মাসে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছনোর পর বিশ্ব খাদ্যের দাম এপ্রিলে কিছুটা কমেছে। তবে কঠিন বাজার পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা সেই ঝুঁকিতেই থেকে গিয়েছে। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো টোরেরো কুলেন বলেছেন, "সূচকের সামান্য হ্রাস খানিক স্বস্তি এনেছে। বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের খাদ্য-ঘাটতি দেশগুলির জন্য। কিন্তু তারপরও খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক উচ্চতার কাছাকাছি রয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।"
বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Explained: যুদ্ধ ও এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আবহে কি দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তেই থাকবে?
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
  • ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে

  • দুর্যোগ চলবে উত্তরবঙ্গেও

  • উইকেন্ডে গিয়ে আবহাওয়ার উন্নতি

VIEW MORE
advertisement
advertisement