Explained| Migraine|| মাথা ব্যথা করছে? মাইগ্রেনের ব্যথা নাকি সাধারণ মাথা ব্যথা জানেন? কী ভাবে বুঝবেন?

Last Updated:

Migraine Attack: শরীরকে দুর্বল এবং মস্তিস্ককে পঙ্গু করে ফেলে এই মাইগ্রেন। যাঁরা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন তাঁরাই জানেন এর যন্ত্রণা কী প্রবল।

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।
#নয়াদিল্লি: মাথাব্যথা শুরু হয়েছিল ২৬ বছর বয়সী সাইশা সিংয়ের। বলা হয়েছিল যে তিনি টিভির পর্দায় একটু বেশি সময় চোখ রাখেন বলে এই সমস্যা হচ্ছে। এরপর তাঁর চোখ পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তাঁকে অ্যান্টি অ্যাংজাইটি পিল দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা অনুমান করেছিলেন তাঁর মস্তিষ্কে টিউমার হয়েছে। এমনকী মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। সাইশার ভয় ছিল যে শেষ পর্যন্ত তাঁর মাইগ্রেন হতে পারে। মাইগ্রেন ঝুঁকিপ্রবণ যন্ত্রণা দেয়। সে কথা জানতেন বছর ২৬ এই মেয়েটি। যদিও মাইগ্রেনের কারণে কেউ মারা যায়নি। কিন্তু শরীরকে দুর্বল এবং মস্তিস্ককে পঙ্গু করে ফেলে এই মাইগ্রেন। যাঁরা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন তাঁরাই জানেন এর যন্ত্রণা কী প্রবল।
মাইগ্রেনের সমস্যা এবং মাথাব্যথা:
মাইগ্রেনের সমস্যা এবং মাথাব্যথা দুটো কিন্তু একেবারেই এক নয়। নানা কারণে মাথা ব্যথা হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে, ঠিকমথো ঘুম না হলে কিংবা একটানা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকলেও কিন্তু মাথা ব্যথা হয়। তবে মাইগ্রেন মূলত স্নায়ুর সমস্যা। এই রোগের সঙ্গে একাধিক স্নায়ু জড়িত। যদি কারও এক মাসের মধ্যে ১৫ দিন মাথা ব্যথা থাকে এবং আটদিন তীব্র মাথা ব্যথার সঙ্গে শারীরিক কোনও সমস্যা থাকে তাহলে কিন্তু ধরে নিতে হবে যে এই মাথাব্যথার কারণ হল মাইগ্রেন। মাইগ্রেনের ব্যথা ওষুধ খাওয়ার এক ঘন্টার মযেই যে কমে যায় তা কিন্তু নয়। তিন মাসের মধ্যে পরপর যদি কয়েকদিন টানা অসহ্য মাথা ব্যথা থাকে এবং মাথার দুপাশে ব্যথা, চোখে অন্ধকার দেখা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, শব্দে অস্বস্তি থাকে তাহলে তা কিন্তু মাইগ্রেনের সমস্যা। দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা আর দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনের মধ্যে কিন্তু ফারাক রয়েছে। আর তাই ক্রনিক মাইগ্রেন সনাক্ত করতে অনেক সময়ই দেরি হয়ে যায়। মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমির পাশাপাশি মাইগ্রেনে কিন্তু গন্ধের সমস্যাও থাকে। তীব্র গন্ধ, তীব্র আলো বা শব্দ কোনওটাই তখন সহ্য হয় না। আর এখান থেকেই আসে গা গোলানো বা বমির সমস্যা। মাইগ্রেনের ব্যথা একবার হলে তা কিন্তু সারতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে।
advertisement
advertisement
দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনের অনেক রকম কারণ রয়েছে। আর এর জন্যই চাপ বাড়ে স্নায়ুতে। এছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে স্নায়ুর জটিল সমস্যা দেখা যায়। মাইগ্রেনের প্রভাব পড়ে রোজকার জীবনযাত্রাতেও। এতে ব্যহত হয় কাজের রুটিন। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই কিন্তু মাইগ্রেনের সমস্যায় বেশি ভোগে। ঘুম ঠিকমতো না হলে, দীর্ঘদিন প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুম হলে, অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে, কফি বা চকোলেট বেশি খেলে সেখান থেকেও কিন্তু আসে মাইগ্রেনের সমস্যা। আর মাইগ্রেনের এই সমস্যার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে হরমোনেরও। প্রতিমাসে মাসিকের সমস্যা, গর্ভধারণ এবং মেনোপজের সময় যে অস্বাভাবিক হরমোনের পরিবর্তন হয় তার প্রভাবই কিন্তু পড়ে এই মাইগ্রেন সমস্যায়। সহজ ভাষায়, মাইগ্রেন হল এমন একটি অবস্থা যেখানে মাথার সংবেদনশীল স্নায়ু আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে যায়। বার বার অসহ্য মাথাব্যথা হয়। এই রোগটি বিশ্বব্যাপী প্রতি পাঁচজন নারীর একজন এবং প্রতি বিশজন পুরুষের একজনকে কাবু করে। ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের একটি উল্লেখযোগ্য পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে। দেখা যায় রোগটি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। এটি সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যেই দেখা যায় বেশি। চিকিৎসা করলেও এই রোগ সহজে নিস্তার দেয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগটির প্রভাব কমে।
advertisement
তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী মিশন হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টারের দুর্ঘটনা ও জরুরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডিরেক্টর ডা. নরেন্দ্র নাথ জেনা জানিয়েছেন, “মাইগ্রেনের কোনও প্রতিষ্ঠিত কারণ নেই। যদিও ধারণা করা হয় যে এটি মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণে হয়, যা জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। স্নায়ু সংকেত, নিউরোট্রান্সমিটার এবং মস্তিষ্কে রক্তনালী। হরমোনজনিত, মানসিক, শারীরিক, পুষ্টি, পরিবেশগত এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কারণগুলিকে মাইগ্রেনের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু মহিলা তাদের ঋতুস্রাবের সময় মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন।সম্ভবত ইস্ট্রোজেনের মতো হরমোনের মাত্রার পরিবর্তনের কারণে। এই সমস্যা হয়।"
advertisement
আরও পড়ুন: বিদেশিদের জন্য ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করা কি আইনত বৈধ?
কীভাবে একটি মাইগ্রেন সনাক্ত করতে হয়:
অমৃতা হাসপাতাল কোচির নিউরোলজির সহকারী অধ্যাপক এবং স্ট্রোকের বিভাগীয় প্রধান ডা. বিবেক নাম্বিয়া জানান, "কিছু সাধারণ এবং জটিল মাইগ্রেন রয়েছে।
সাধারণ মাইগ্রেন একটি ব্যাধি, যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই মাথাব্যথা যা সাধারণত কপালের একপাশে হয়। ধীরে ধীরে শুরু হয়, বাড়তে থাকে এবং সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছায় এবং তারপর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় মস্তিষ্কের সাময়িক ক্ষমতা। কখনও কখনও বমি বমি ভাব হয়, বমি হওয়ার অনুভূতি হয় এবং তারপর কিছু সময় বিশ্রাম বা ঘুমানোর মাধ্যমে এটি নিজে থেকেই কমে যায়। অনেকেই এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পেইনকিলার বা ব্যথা উপশমকারী ওষুধ খান। এটি সাধারণত কয়েক ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
advertisement
কিন্তু যদি কোনও মাথাব্যথা একটানা তিন চার দিনের বেশি চলতে থাকে তখন মাইগ্রেনের রোগ নির্ণয়ের বিষয়ে বিশেষ ভাবনা চিন্তা করতে হয়। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করতে হবে। সাধারণ ধরনের মাইগ্রেনের যন্ত্রণা দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয় না।
মাইগ্রেনের ব্যথা একবার শুরু হলে কাজে ব্যাঘাত ঘটে। সেদিনকার মত সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল, অফিস থেকে ঘর সংসারের কাজ সব পণ্ড। এছাড়াও মাইগ্রেনের ব্যথার সঙ্গে একাধিক সমস্যা জড়িত। এই ব্যথা হলেই কিছুতে ঘুম আসে না। বমির সমস্যা, গা গোলানো, মাথা ঘোরা, মাথার দু পাশে অসহ্য যন্ত্রণা এসব তো থাকেই। তবে মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে তা ফেলে না রেখে কিন্তু চিকিৎসা করানো উচিত। ওষুধে কাজ হয় অনেক সময়। এছাড়া কেউ কেউ বলেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সব সমস্যাও কিন্তু চলে যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই মাইগ্রেন সেরে গিয়েও আবার ফিরে এসেছে।
advertisement
ব্যথা থেকে সাময়িক ভাবে রেহাই পেতে বেশিরভাগই কিন্তু পেইন কিলার খান। তবে একটানা পেইন কিলার খাওয়া ঠিক নয়। কারণ বেশিদিন এই ওষুধ খেলে মাথা ব্যথার সমস্যা আরও বাড়ে। এছাড়াও অতিরিক্ত এই ওষুধ খেলে পরবর্তীতে অন্য কোনও ওষুধ কিন্তু আর কাজ করে না। এই সমস্যায় শরীরের ডিটক্সিফিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যথার ওষুধে সাময়িক স্বস্তি পেলেও সুস্থ হতে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। নিউরোলজি, সাইকিয়াট্রিক বা সাইকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে এক্ষেত্রে। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করা, ডায়েটে নজর দেওয়া এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা দরকার। এছাড়াও চেষ্টা করতে হবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অনেক সময় ডিপ্রেশন থেকেও মাইগ্রেন আসে। আর তাই মাইগ্রেনের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
advertisement
এটাকে কমন মাইগ্রেনও বলা হয়। অরাযুক্ত মাইগ্রেন এর চেয়ে এর প্রকোপ অনেক বেশি। এ মাথাব্যথা ৪-৭২ ঘণ্টাব্যাপী হয় এবং কমপক্ষে নিচের যে কোনও দুটি লক্ষণ থাকতে পারে।
ক) চিন চিন বা দপ দপ করে ব্যথা
খ) অর্ধেক মাথায় ব্যথা
গ) বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
ঘ) আলো ভীতি বা শব্দ ভীতি
ঙ) অতীতে এ ধরনের মাথাব্যথার কমপক্ষে পাঁচবার অভিজ্ঞতা ও কোনো মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রোগ না থাকা
চ) অরা-যুক্ত মাইগ্রেন (Migrane with Aura)
কমপক্ষে শতকরা পনেরো ভাগ মাইগ্রেন রোগী তাঁদের মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগে কিছু লক্ষণ অনুযায়ী আসন্ন মাথাব্যথার আক্রমণ বুঝতে পারে। সাধারণত এ রোগীরা মাথাব্যথা শুরুর পূর্বের আধাঘণ্টা সময়ের মধ্যে চোখে আলোর ঝলকানি, চোখের সামনের কিছু অংশ অন্ধকার দেখা, রাস্তাঘাট উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা দেখা ইত্যাদি দেখতে পান। কোনও কোনও সময়ে রোগী শরীরের অংশ বিশেষ অনুভূতির অস্বাভাবিকতা অনুভব করেন। কারও কারও কিছুক্ষণের জন্য শরীরের অংশ বিশেষ অবশ, কথা বলার অস্বাভাবিকতাও হতে পারে।
জটিল মাইগ্রেন হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন: হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেনের রোগী শরীরের একপাশে এক হাত বা পায়ের দুর্বলতা সহ মাথাব্যথা অনুভব করে। যদিও এই অবস্থাটি স্ট্রোকের মতো হয়। তবে রোগী সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। রেটিনাল মাইগ্রেন হল এক ধরনের মাইগ্রেন যা কয়েক মিনিটের জন্য সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে রোগী।
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের কি মাইগ্রেনের প্রবণতা বেশি?
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই রোগের সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি।
কোন বয়সে মাইগ্রেন বেশি হয়?
মাইগ্রেনের মাথাব্যথা যেকোন বয়সে আঘাত হানতে পারে। তবে ২০ বছর বয়সেই মাইগ্রেনের প্রথম সমস্যা দেখা যায়। প্রথমটির সম্ভাবনাই বেশি।
সাধারণ চিকিৎসা:
যে সব খাবার মাইগ্রেনের ব্যথাকে ত্বরান্বিত করে সেসব খাবার পরিত্যাগ করা দরকার।
যদি কোনও মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে থাকেন, তবে তিনি বড়ি খাওয়া বন্ধ রাখবেন, এবং অন্য যে কোনও প্রকার বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করবেন।
পরিবেশগত কারণে যদি ধোঁয়া বা ধুলাবালি বা প্রচন্ড গরম বা শীতের হাওয়ায় বাইরে বের হতে হয় তবে মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Explained| Migraine|| মাথা ব্যথা করছে? মাইগ্রেনের ব্যথা নাকি সাধারণ মাথা ব্যথা জানেন? কী ভাবে বুঝবেন?
Next Article
advertisement
OPPO India নিয়ে এল F31 5G Series, যেমন টেকসই, তেমনই মসৃণ, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ! ফিচার দেখে নিন বিশদে
OPPO India নিয়ে এল F31 5G Series, যেমন টেকসই, তেমনই মসৃণ, শক্তিশালী পারফরম্যান্স !
  • OPPO India নিয়ে এল F31 5G Series

  • যেমন টেকসই, তেমনই মসৃণ

  • ফোনের ফিচার দেখে নিন বিশদে

VIEW MORE
advertisement
advertisement