#নয়াদিল্লি: একে তো বিশ্ব বাজার থেকে ধার নেওয়া ক্রমাগত ঋণের বোঝা, অন্য দিকে গোটা দেশের সর্বত্র খাদ্য এবং জ্বালানি সঙ্কট। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবল অর্থ সঙ্কটের কোপে পড়ে হাবুডুবু অবস্থা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার।
শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা কী ?
অর্থনীতির হাল ফেরাতে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সরকার শুধুমাত্র বিদেশ থেকে অপরিহার্য পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববাজার থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা কমাতে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সরকার ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধের লক্ষ্য মাত্রা নিয়েছে। এর ফলে গোটা শ্রীলঙ্কা জুড়ে তৈরি হয়েছে প্রবল খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট। পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অগ্নিমূল্য হওয়ার কারণে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন জনগণ। কিন্তু সরকারও তার ঋণ পরিশোধের সিদ্ধান্তে অনড়। কারণ বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সরকারের তহবিলে রয়েছে ২.৩১ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্ব বাজার থেকে নেওয়া ঋণের তুলনায় নগণ্য। এছাড়াও সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় তার রেশ পুরোমাত্রায় গিয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারের ওপর। এই অবস্থায় জ্বালানি সঙ্কটের কারণে দ্বীপরাষ্ট্রের কয়েক হাজার পেট্রোল ও ডিজেল পাম্পগুলিতে লম্বা লাইন দেওয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে শ্রীলঙ্কা সরকার দেশের সর্বত্র সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানা গিয়েছে।
বিশ্ব বাজারে শ্রীলঙ্কার বর্তমান ঋণের পরিমাণ কত?
তালিকাটা বেশ লম্বা। প্রাথমিক ঋণদাতাদের মধ্যে রয়েছে চিন এবং এশিয়ান উন্নয়ন (ADB) ব্যাঙ্ক। শ্রীলঙ্কার ঋণের আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডে রয়েছে ৩৬.৪ শতাংশ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৪.৬ শতাংশ, এর পরেই রয়েছে জাপান- শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া তাদের ঋণের পরিমাণ ১০.৯ শতাংশ। চিন সরকার দিয়েছে ১০.৮ শতাংশ ঋণ। তবে ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কাকে জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধ কিনতে সাহায্য করার জন্য ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, সেই দেশে তীব্র জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় ৪০ হাজার টন ডিজেল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্রেডিট বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (ACU) পক্ষ থেকে আগামী দু'মাসের জন্য যথাক্রমে দুই ধাপে ৪০০ মিলিয়ন এবং ৫১৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গত কয়েক বছরে চিন সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ঋণের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে। দেশের রাস্তাঘাটসহ একাধিক পরিষেবার উন্নয়নে চিন থেকে ওই টাকা ঋণ হিসাবে নেয় শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন: পুতিনের পরিণতি কী? সেই বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী শুনেই চমকে যাচ্ছে বিশ্ব! এবারও মিলবে?
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির হাল কী রকম?
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব ছাড়াও সরকারী কোষাগারের অব্যবস্থাপনা এবং অসময়ে ট্যাক্স কাটছাঁটের ফলে সঙ্কট আরও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে দোসর সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার জেরে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রবল জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে জ্বালানি খরচ একধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তার ওপর আগে থেকেই শ্রীলঙ্কা সরকার গভীরভাবে ঋণে জর্জরিত। বর্তমান ঋণের পরিমাণ সে দেশের জিডিপির থেকেও প্রায় ১১৯ শতাংশ বেশি। যার অর্থ বর্তমান শ্রীলঙ্কা সরকার তার দেশে যে পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম, ঋণের পরিমাণ তার ঢের গুণ বেশি।
আরও পড়ুন: তৃণমূল দাঁড়িয়ে থেকে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়াবে! শাসক নেতার মন্তব্যে শোরগোল
শ্রীলঙ্কা সরকারের অর্থের ভাণ্ডার শূন্য হওয়ার কারণ কী?
প্রথমেই যে বিষয়টির ওপর নজর দেওয়া প্রয়োজন তা হল, শুধুমাত্র দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা নয়, বিগত দু'বছর যাবত করোনা আবহে গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক হাল বেশ শোচনীয়। একটি স্বনামধন্য দৈনিক পত্রিকার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, করোনা আবহে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে গিয়ে ওই সময় বিশ্ববাজার থেকে গত দু'বছরে লাগামহীন ঋণ নেওয়ার কারণে তা পরিশোধ করতে গিয়ে এবং দেশের মানুষের কাছে সস্তা জনমোহিনী রাজনীতি করতে গিয়ে বর্তমান সরকারের একাধিক কর মকুবের কারণেই শ্রীলঙ্কার অর্থের ভাণ্ডার ক্রমাগত শূন্য হতে শুরু করে। গত দু'বছরে শ্রীলঙ্কা সরকারের অর্থের ভাণ্ডারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায় ৭০ শতাংশ। মূলত তার থেকেই শুরু হয় অর্থনৈতিক অবমূল্যায়ণ।
আরও পড়ুন: সেফটি ট্যাংকে পড়ে মৃত শিশু, পরিবারের দাবি 'জীবিত'! চুঁচুড়ায় প্রবল চাঞ্চল্য
অর্থনীতির হাল ফেরাতে শ্রীলঙ্কা সরকারের কী করা উচিত?
এবিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ- বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সরকারের উচিত আগামী তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। এমনটা করলে শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের ওপর চাপ কমবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে বিচক্ষণ এবং যুক্তিপূর্ণ ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sri Lanka