Coronavirus: উপসর্গে ধরা দেয় না, লং কোভিডে কাহিল শিশুরা; সচেতন হন এখনই!
- Published by:Uddalak B
Last Updated:
Coronavirus:সাধারণত, কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হলে দিন কুড়ির মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার কথা আক্রান্তের। কিন্তু নানা শারীরিক কারণে অনেকেই সেই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি।
#নয়াদিল্লি: গত প্রায় দু’বছর ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে কোভিড ১৯। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত সারা বিশ্বের সমস্ত বয়সের মানুষ। প্রথম দিকে ছাড় মিললেও, পরে বেশ ভাল পরিমাণেই আক্রান্ত হয়েছে শিশুরা। আর তাদের উপসর্গও অনেক সময়ই থেকেছে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মতোই। কিন্তু শিশুরা কি আদৌ কাহিল হয়েছে মারণ কোভিডের তাণ্ডবে? গবেষণা বলছে, হয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়ে শিশুদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কোভিডের। কোভিডের উপসর্গ মৃদু হলেও লং কোভিডে তাদের সমস্যা তৈরি হয়েছে পরেও।
লং কোভিড বা কোভিডের দীর্ঘায়িত অসুস্থতা। সাধারণত, কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হলে দিন কুড়ির মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার কথা আক্রান্তের। কিন্তু নানা শারীরিক কারণে অনেকেই সেই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। রোগ যন্ত্রণা থেকেছে অনেক দিন। আবার অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে আপাত ভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও কিছু মৃদু উপসর্গ বা অসুস্থতা তাড়া করে বেড়িয়েছে বেশ কয়েক মাস।
advertisement
তবে দীর্ঘায়িত কোভিড (Long-haul COVID) বলতে ঠিক কী বোঝায়, অর্থাৎ কোন রোগীকে লং কোভিডে আক্রান্ত বলা হবে, বা হবে না তা নিয়ে আজও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। সংক্রমিত হওয়ার পর থেকে যতদিন শরীরে ভাইরাল বাঁচে, রোগ ছড়ায়, রোগের বাড়া-কমা, সবটা নিয়েই এই অসুস্থতা।
advertisement
ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকায় প্রায় ২১টি গবেষণা চালানো হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশুর মধ্যেই লং কোভিডের উপসর্গ রয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৮০,০৭১ টি শিশুর উপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। তার প্রায় ২৫ শতাংশ শিশুরই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর এমন কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল যা ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হয়েছিল যে সংক্রমণের ১২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন কোনও উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
advertisement
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তাঁরা লক্ষ্য করে দেখেছেন লং কোভিডে আক্রান্ত শিশুদের বেশির ভাগই ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী। তুলনায় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কোভিডের প্রভাব অনেক কম পড়েছে।
কী ভাবে বোঝা যাবে শিশুদের সংক্রমণ?
advertisement
কোভিড সংক্রমণ বোঝার জন্য লালারসের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কিন্তু লং কোভিড পরীক্ষার জন্য কোনও নির্দিষ্ট পদ্ধতি এখনও নেই। এমনকী কোন শিশু লং কোভিডে আক্রান্ত হতে পারে, তারও কোনও সুনির্দিষ্ট তালিকা নেই। পরিসংখ্যান বলছে, খুব সামান্য উপসর্গ নিয়ে কোভিড সংক্রমিত কোনও শিশুও দীর্ঘদিন তার শরীরে বয়ে নিয়ে যেতে পারে কোভিড। মৃদু উপসর্গ মানেই যে লং কোভিডের সম্ভাবনা কমে গেল, তা নয়। এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার লং কোভিডের উপসর্গও খুব ভয়ঙ্কর হবে, এমনও কোনও মানে নেই। দেখা গিয়েছে অনেক সময় অভিভাবকেরা বুঝতেই পারেন না তাঁদের সন্তানের লং কোভিড চলছে। এমনকী বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসকও ওই অসুস্থতাকে লং কোভিড বলে চিহ্নিত করতে পারেননি।
advertisement
ডালাসের ইউটি সাউদওয়েস্টার্ন মেডিক্যাল সেন্টার (UT Southwestern Medical Center) –এর শিশু সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জেফ্রি কান (Dr. Jeffrey Kahn) বলেন, ‘সব থেকে গুরুতর বিষয় হল, এমনও লক্ষ করা গিয়েছে যে, কোভিড সংক্রমণের ৪ সপ্তাহ পরে লং কোভিডের উপসর্গ আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল অনেক সময়ই শিশুটির প্রথম সংক্রমণের কথা জানাই যায়নি, কারণ কোনও উপসর্গই ছিল না।’
advertisement
ক্লান্তি কি শিশুদের লং কোভিডের উপসর্গ?
ছোট হোক বড়—ক্লান্তি কোভিডের অন্যতম লক্ষণ। অনেক সময় লং কোভিডে মূখ্য উপসর্গ হয়ে দেখা দিতে পারে এই ক্লান্তি। চিকিৎসকদের দাবি, শিশুরা অনেক সময়ই ক্লান্তি বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোভিড বা কোভিড পরবর্তীকালে। লং কোভিডের ক্ষেত্রে অনেক শিশুই জানিয়েছে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালেই মনে হচ্ছে মাথাটা যেন হাল্কা হয়ে গিয়েছে। যে কোনও সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেই এটা হতে পারে। আসলে মানুষ যখনই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখনই তার এ রকম মনে হয়ে। লং কোভিডে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এই ক্লান্তিটাই খুব বড় হয়ে ওঠে। ক্লেভল্যান্ডের এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অ্যামি এডওয়ার্ডস বলেন, ‘আসলে বিষয়টা এনার্জি বা শক্তি সংক্রান্তই। যেমন ধরা যাক একটি লং কোভিডে আক্রান্ত শিশুর কাছে মাত্র এক বালতি এনার্জি রয়েছে। সেই এনার্জি তাকে খুব সতর্ক ভাবে খরচ করতে হবে। এই পরিমাণ এনার্জি নিয়েই তাকে স্কুলে যেতে হবে, খেলতে হবে, টিভি দেখতে হবে। একবার পুরো এনার্জিটা শেষ হয়ে গেলেই মাথা ঘুরতে পারে।’
advertisement
মাথা ব্যথা বা মস্তিষ্কের জড়তাও কি থাকে?
লং কোভিড বাচ্চাদের মধ্যে মাথা ব্যথার সমস্যা বেশ বাড়িয়ে তুলেছে। সেই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে মস্তিষ্কের সাময়িক জড়তা বা Brain Fog। এই ব্রেন ফগ আসলে কোনও রোগ নয়। বরং অসুস্থতার কারণে মাঝে মধ্যে ভাবনা চিন্তায় জড়তা আসে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায় অনেক সময়ই। কোনও বিষয়ে মনোনিবেশ করতে না পারার সমস্যায় ভুগতে পারে লং কোভিডে আক্রান্ত শিশুরা। চিকিৎসকদের দাবি বহু শিশুই আসছে যারা মাথা ব্যথার সমস্যায় ভুগছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াচ্ছে যে তারা স্কুল যেতে পারছে না। পড়াশোনায় মন দিতেও পারছে না। ফলে নানা ভাবে পিছিয়ে পড়ছে তারা। সমস্যা তৈরি হচ্ছে মানসিক। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার সমস্যাতেও ভুগছে লং কোভিডে আক্রান্ত শিশুরা। চিকিৎসক বিজ্ঞানীদের দাবি অন্য যে কোনও রকম সংক্রমণেই এই ব্রেন ফগ হতে পারে। কিন্তু গত কয়েক বছরের নজির বলছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সেই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
পেটের গোলমালও লং কোভিডের কারণেই?
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে শিশুদের পেটের সমস্যা বিষয়ে। সেখানে বুলগেরিয়ার একগুচ্ছ ঘটনার কথা তুলে ধরে দেখান হয়েছে, শিশুরা মারাত্মক পেটের ব্যথার আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষত স্কুলে যাওয়া শিশুদের মধ্যে। করোনার প্রথম ঢেউ যখন সে দেশে শীর্ষে পৌঁছেছে তখনই এই সমস্যাও প্রবল হয়ে উঠেছিল। শিশুদের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল গন্ধ চলে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি, ক্ষুধামান্দ (disosmia, nausea, vomiting, loss of appetite)-এর মতো সমস্যা। আর এর ২ সপ্তাহের মধ্যেই অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। অথচ, অসুস্থ বেশির ভাগ শিশুর অভিভাবকই প্রায় সুস্থ ছিলেন। দেখা গিয়েছে লং কোভিডে একাধিক শিশুর স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিতে বেশ পরিবর্তন হয়েছে।
শিশুর হৃদযন্ত্রেও প্রভাব ফেলে লং কোভিড?
সমস্যা এতখানিই হতে পারে যে তা হৃদযন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। কোভিড পরবর্তী কালে বহু শিশুর মধ্যেই বুক ধড়ফড়ানি, বুকে ব্যথা সেই সঙ্গে মাথা ঘোরার মতো ব্যাপক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। গবেষকদের দাবি, এমন সমস্যা অবশ্য তখনই দেখা দিয়েছে যখন প্রাথমিক কোভিড অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে শিশুরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেষ্টা করেছে। শিশুদের মধ্যে গাঁটে ব্যথা বা ভয়ঙ্কর ক্লান্তির সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে হাঁটা চলা করতেও অসুবিধা অনুভব করেছে অনেকে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার অসহ্য পায়ে ব্যথার কথাও জানা গিয়েছে। চিকিৎসকেরা বহু শিশুকেই এমন সব উপসর্গ নিয়ে ফের হাসপাতালে যেতে দেখেছেন।
সে সব ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি সমস্যা হয়েছে শিশুদের মনের। লং কোভিডের উৎপাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা খেলাধুলো করতে পারেনি। একটু চলা ফেরা করলেই তাদের মাথা ঘোরা শুরু হয়েছে। পড়া মনে রাখতে না পারার মতো ভয়ঙ্কর সমস্যাতেও তাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
প্রতিকারের উপায় কী?
ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বে কোভিডের টিকা দেওয়ার কাজ বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্যও কোভিড টিকার বন্দোবস্ত করার চেষ্টা চলছে এ দেশে। আর এ সবের মধ্যেই কোভিডের বিধি বেশ খানিকটা আলগা হয়ে পড়েছে। তার মধ্যেই ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (National in Viorlogy) সতর্কতা জারি করেছে শিশুদের বিষয়ে। NIV পুণের অধিকর্তা প্রিয়া আব্রাহাম জানিয়েছেন, ১২ বছরের নীচে যে শিশুর আগে থেকেই কোনও অসুখ রয়েছে তাদের কোভিড টিকা দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা দরকার।
তাঁর দাবি, শিশুদের উপসর্গ কম থাকে। আর সেটাই ভয়ের কারণ হতে পারে। লুকোনো কোনও অসুখ থাকলে তা শিশুটির পক্ষে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি শিশুদের থেকে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।
Location :
First Published :
May 14, 2022 11:03 AM IST