Explained: চতুর্দেশীয় বৈঠকে জয়শঙ্কর: চিনের দাদাগিরি রুখতেই কি নতুন ‘Quad’ গড়ছে ভারত, আমেরিকা, আমিরশাহি ও ইজরায়েল?
- Published by:Debalina Datta
Last Updated:
Explained: গত ১৮ অক্টোবর ইজরায়েল, আমেরিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিদেশ মন্ত্রীদের সঙ্গে চতুর্দেশীয় বৈঠক করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। এই চার দেশের মধ্যে এমন বৈঠক এটাই প্রথম।
#নয়াদিল্লি: চিনকে ঘিরে বিশ্বের রাজনীতি এবং অর্থনীতি নতুন মোড় নিচ্ছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার মধ্যে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। নতুন এই অকাস (AUKUS) চুক্তি গোটা অঞ্চলকে এক জটিল অবস্থায় এনে ফেলেছে। ১৮ অক্টোবর ইজরায়েল (Israel), আমেরিকা (America) এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (UAE) বিদেশ মন্ত্রীদের সঙ্গে চতুর্দেশীয় (Quad) বৈঠক করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর (S Jaishankar)। এই চার দেশের মধ্যে এমন বৈঠক এটাই প্রথম। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটা নতুন কোয়াডের উত্থানের প্রথম পর্যায়। এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ায় বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি সমুদ্রপথের নিরাপত্তা জোরদার করার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে চার বিদেশ মন্ত্রীর বৈঠকে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে আলোচনায় অবশ্যই চিনের (China) প্রসঙ্গ এসেছে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) যে ভাবেই হোক চিনকে রুখতে চাইছে। আফগানিস্তানে তালিবানের উত্থানের পরে সংবেদনশীল হয়ে রয়েছে এশিয়ার পরিস্থিতি। তার উপরে চিনের অতি সক্রিয়তা ভারত ও আমেরিকা, দুই দেশের পক্ষেই উদ্বেগের। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ‘কোয়াড’ গোষ্ঠীর মাধ্যমে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের দাদাগিরি রুখতেই সক্রিয় হয়েছে আমেরিকা। তাই ইজরায়েল ও আমিরশাহির সঙ্গে নতুন এই মঞ্চে আনা হয়েছে ভারতকে।
বৈঠকের পরে এস জয়শংকর ট্যুইটারে লেখেন, "বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে। আর্থিক উন্নতি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও নিবিড় ভাবে কাজ করার বিষয়ে কথা হয়েছে আমাদের মধ্যে। পরবর্তী পদক্ষেপগুলি দ্রুত নেওয়ার বিষয়েও সহমত হয়েছি আমরা।"
advertisement
advertisement
কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে?
আব্রাহাম চুক্তির এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটনে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন (Antony Blinken), ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী ইয়াইর ল্যাপিড (Yair Lapid) ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিদেশমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ (Sheikh Abdullah bin Zayed) মিলিত হন। তার ঠিক এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই চার দেশের বিদেশমন্ত্রীর মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকটি হয়। ইজরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ প্রশস্ত করেছে এই আব্রাহাম চুক্তি।
advertisement
বৈঠকের পর মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস (Ned Price) এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, চার দেশের বিদেশমন্ত্রী বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, শক্তি সহযোগিতা এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি-সহ মধ্য প্রাচ্য ও এশিয়ায় অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সহযোগিতার আদান-প্রদান নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
advertisement
আরও পড়ুন - ICC T20 World Cup: Ind vs Pak ম্যাচে গ্যালারিতে চাঁদের হাট, নেটিজেনরা কিন্তু অন্য কথা বলল, জানেন কি!
চিন কেন আলোচনায়?
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, চার দেশের বিদেশমন্ত্রীদের মধ্যে এই বৈঠক আসলে এশিয়ায় চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে মোকাবিলা করার জন্য একটি নতুন গোষ্ঠীর উত্থানকেই নির্দেশ করছে। বিশেষ করে যখন পশ্চিম এশিয়ার কথা আসে, এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কয়েক জন ঘনিষ্ঠ মিত্রের সঙ্গে চিনের সাম্প্রতিক অংশীদারিত্ব মার্কিন বিদেশ নীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তবে, নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে পিছিয়ে নেই আমেরিকাও। আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর তারা বেশ কয়েকটি বড় পদক্ষেপ করেছে। ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াড বৈঠক করেছে তারা। এ ছাড়াও সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার মধ্যে নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। যার আওতায় তারা নিজেদের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় করবে। তিন দেশের অংশীদারিত্বের ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রথম বারের মতো পরমাণুশক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরিতে সক্ষম হতে চলেছে। অকাস (Aukus) নামের এই চুক্তির আওতায় থাকবে-- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম টেকনোলজি ও সাইবার নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলি। উভয় গোষ্ঠীরই মূল উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। তবে আসলে চিনকে বার্তা দেওয়াটাও এর মধ্যে রয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরেই এই চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে চিন। তাদের বক্তব্য, এই ধরনের চুক্তির ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হবে।
advertisement
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (Observer Research Foundation) প্রকাশিত একটি নোটে বলা হয়েছে যে, কী ভাবে চিনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট গ্রুপ (Shanghai International Port Group) ইজরায়েলের হাইফায়তে ১.৭ বিলিয়ন ডলারের কন্টেনার টার্মিনাল তৈরি করেছে। এই টার্মিনাল মার্কিন ও ইজরায়েলের নৌবাহিনীর ব্যবহার করা একটি বন্দরের কাছেই রয়েছে। ইজরায়েল ও আমেরিকা আশঙ্কা করছে, তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালাতেই টার্মিনাল তৈরি করেছে চিন। ওই নোটে যোগ করা হয়েছে যে, ভূমধ্যসাগরের অন্য প্রধান ইজরায়েলি বন্দর আশদোদকেও আপগ্রেড করছে চিন।
advertisement
কোভিড টিকা পাঠানোর পর থেকেই চিনের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিরও উষ্ণ সম্পর্ক শুরু হয়েছে। চিন থেকেই প্রথম আমিরশাহিতে টিকা গিয়েছিল। চায়না ওশান শিপিং কোম্পানি (কসকো) ৩৫ বছরের ছাড় চুক্তি করেছে খলিফা বন্দরে একটি নতুন কন্টেনার টার্মিনাল তৈরির জন্য। কিন্তু আমেরিকার জন্য সব চেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল, ফাইভ জি টেলিকম নেটওয়ার্কগুলির জন্য Huawei বেছে নেওয়া। কারণ, আমিরশাহিকে উন্নত এফ-৩৫ ফাইটার জেট বিক্রি করার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন বলেছে, এটি কাকতালীয় হতে পারে না যে, আমরশাহির টেলিকম সংস্থা ইটিসালাত এবং ডু ফাইভ জি হার্ডওয়্যার প্রযুক্তির জন্য এরিকসন ও নোকিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
advertisement
ভারতের স্বার্থ কী?
ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। ঘটনাচক্রে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর ইজরায়েলে থাকাকালীন ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। আসলে সেই সময় ইজরায়েলে সরকারি সফরে ছিলেন জয়শংকর। ভারত ও ইজরায়েলের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে চলা অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনাই ছিল বিদেশমন্ত্রীর সফরের অন্যতম কারণ।
ইজরায়েলের বিদেশ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী নভেম্বর মাসে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর বিষয়ে কথা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে। পাশাপাশি, পারস্পরিক টিকা স্বীকৃতির বিষয়েও একমত হয়েছেন দুই বিদেশ মন্ত্রী।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেড়েই চলেছে। আমিরশাহিতে সব চেয়ে বেশি প্রবাসী ভারতীয় বাস করেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা-সহ নানা বিষয়ে সমঝোতা রয়েছে। ১৯৭২ সালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়। ওয়াশিংটন ভিত্তিক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের (Middle East Institute) মতে, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।
Location :
First Published :
October 25, 2021 9:49 PM IST