ফাঁসি দেওয়ার আগে সত্যিই কি অপরাধীর অন্তিম ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়? জেল ম্যানুয়াল কী বলে?
- Published by:Ananya Chakraborty
- news18 bangla
Last Updated:
ছবিতে বিষয়টি যে ভাবে দেখানো হয়ে থাকে, আদতে কি সেটা হয়? জেনে নিন
#নয়াদিল্লি: আপাতত স্থির হয়ে আছে যে চলতি মাসের শেষের দিকেই বা আগামী মাসের শুরুর দিকে অমরোহার শবনমকে ফাঁসি দেওয়া হবে। আর সেই সূত্রেই উঠে আসছে ফাঁসি দেওয়ার প্রক্রিয়াটি নিয়ে নানা বিতর্ক এবং আলোচনা। এর মধ্যে সব চেয়ে যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে থাকে, তা হল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তর অন্তিম ইচ্ছা। দেশের নানা ছবিতে বিষয়টি যে ভাবে দেখানো হয়ে থাকে, আদতে কিন্তু ঘটনা হুবহু সে রকম নয়।
অন্তিম ইচ্ছা:
যে দিন আদালত থেকে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়, ঠিক সেই দিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে যায় জল্লাদের। মৃত্যুদণ্ডের রায়ের একটি কপি অপরাধীর পরিবারকে, একটি কপি অপরাধীকে এবং একটি কপি জল্লাদকে পাঠানো হয়। পবন জল্লাদ এর মধ্যেই বারদুয়েক মথুরায় ঘোরাফেরা করেছেন সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না তা দেখার জন্য।
advertisement
এর পরেই আসে অন্তিম ইচ্ছার প্রসঙ্গ। অপরাধীকে কিন্তু এক্ষেত্রে মাত্র কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে থেকেই অন্তিম ইচ্ছা বেছে নিতে বলা হয়। সে বিশেষ কিছু খেতে চায় কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। জানতে চাওয়া হয় মৃত্যুর আগে সে উপাসনায় বসতে চায় কি না! এছাড়া সে কোনও উইল করে যেতে চায় কি না, সেই সুযোগও তাকে দেওয়া হয়।
advertisement
advertisement
অন্তিম ইচ্ছা সীমিত করে রাখার কারণ প্রকৃতপক্ষে একটাই, যা দিল্লি কারাগারে দীর্ঘ দিন ধরে কর্মরত আইনজ্ঞ সুনীল গুপ্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। অপরাধী যদি ফাঁসির হুকুম রদ করে দেওয়ার অনুরোধ জানায়, তা মেনে চলা সম্ভব হবে না। সেই জন্যই জেলের ম্যানুয়ালে অন্তিম ইচ্ছা বলে কোনও কিছুর উল্লেখ নেই।
ফাঁসির সময়ে কারা উপস্থিত থাকেন:
প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ফাঁসির সময়ে জল্লাদ ছাড়াও জেল সুপারিনটেনডেন্ট, ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট এবং মেডিক্যাল অফিসাররা উপস্থিত থাকেন। জেলা আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেটও সেখানে উপস্থিত থাকেন, তিনিই মৃত্যু-পরোয়ানায় সই করেন। এছাড়া অপরাধী যদি চায়, তাহলে সেই সময়ে ঘটনাস্থলে তার ধর্মের একজন প্রতিনিধি, যেমন- পুরোহিত, মৌলবি বা ধর্মযাজক উপস্থিত থাকতে পারেন।
advertisement
ফাঁসি কী ভাবে হয়:
যে দিন ফাঁসি দেওয়া হবে, তার ঠিক একদিন আগে ফাঁসিকাঠ এবং আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি ভালো ভাবে পরখ করে দেখে নেওয়া হয়। এই দিন একটি ডামি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে পরখ করা হয়। এছাড়া অপরাধীর শারীরিক দৈর্ঘ্য এবং ওজন অনুসারে ফাঁসিকাঠ থেকে নিচে কতটা গভীর গর্ত খোঁড়া প্রয়োজন, সেটা ঠিক করে দেন মেডিক্যাল অফিসাররা।
advertisement
ফাঁসি দেওয়ার আগে অপরাধীর মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তাকে যেখনে দাঁড় করানো হয়, সেখানে ফাঁস আগে থেকেই তৈরি করা থাকে। সেটি কাপড়-ঢাকা অবস্থায় তার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর জেল সুপারিনটেনডেন্ট সঙ্কেত দিলে ফাঁসিকাঠের নিচের পাটাতন খুলে দেওয়া হয়, জল্লাদ লিভারে টান দিলে দেহটি ঝুলে পড়ে। ফাঁসিকাঠে দেহটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়। মেডিক্যাল অফিসাররা যখন পরীক্ষা করে বলেন যে ব্যক্তিটির মৃত্যু হয়েছে, তখন দেহ ফাঁসিকাঠ থেকে নামিয়ে আনা হয়। পরাধীর দেহ পরিবারকে দেওয়া হবে কি না, তা প্রশাসন ঠিক করে। তবে সাধারণত পরিবার আবেদন করলে শেষকৃত্যের জন্য তা মঞ্জুর করা হয়।
advertisement
ফাঁসি কেন সকালবেলায় দেওয়া হয়:
view commentsফাঁসির দিন সকাল সাড়ে চারটে বা পাঁচটা নাগাদ অপরাধীকে চা দেওয়া হয়। সে স্নান করতে চাইলে তার অনুমতি দেওয়া হয়, খেতে চাইলে প্রাতরাশও দেওয়া হয়। এর পর যদি তার উইল করার থাকে, সেই বিষয়টি সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে জল্লাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফাঁসি দেওয়ার বিষয়টি সকালবেলাতেই মিটিয়ে ফেলা হয় যাতে জেলের দৈনন্দিন কার্যক্রমে কোনও রকম বিঘ্নসৃষ্টি না হয়। তাছাড়া বলা হয় যে রাতে ঘুমানোর পরে অপরাধীর শরীর-মন শান্ত থাকবে, ফলে তার উপরে খুব বেশি মানসিক চাপ পড়বে না। এছাড়া কারাগারের বাইরে যাতে বিপুল জনসমাগম না হয়, সেই বিষয়টি এড়ানোর জন্যও একেবারে সকালের দিকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
Location :
First Published :
February 23, 2021 12:55 PM IST