Hydrogen Peroxide For Covid Treatment: কোভিড সারাতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহার করছেন? সাবধান হোন এখনই
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
অতিরিক্ত পরিমাণে এই কেমিক্যাল শরীরের ভিতরে ঢুকলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এমনকী রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে।
#কলকাতা: করোনাভাইরাস (Coronavirus) যে দ্রুত গতিতে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে তার থেকেও বেশি গতিবেগে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ভুয়ো তথ্য। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভুয়ো খবর কারবারিরা এই খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আদতে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
তাঁরা না জেনে বুঝে সেই ভুল তথ্য বিশ্বাস করছেন। যার ফল অনেক সময় মারাত্মক হচ্ছে। এমনই একটি ভুয়ো তথ্য ছড়িয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। সেখানে বলা হয়েছে, করোনা থেকে সেরে উঠতে ব্যবহার করা হয় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড (Hydrogen Peroxide)। এই ধরনের বৈজ্ঞানিক কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। কেন এই তথ্য বিশ্বাস করা উচিত নয়?
advertisement
কী কী ভুয়ো তথ্য ছড়িয়েছে?
advertisement
করোনা যখন থেকে এদেশে আক্রমণ শুরু করেছে তখন থেকেই একাধিক তথ্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। বলা হয়েছিল কাঁচা হলুদ খেলে করোনা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব, গোমূত্র পান করলেও করোনা ভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়েছিল। যেগুলির কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, এই ধরনের তথ্য কেউ সত্যি হিসেবে ধরে নিয়ে মেনে চললে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সমস্যা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
advertisement
বর্তমানে আরও একটি ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে সোশাল মিডিয়ায়। যেখানে বলা হচ্ছে, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড করোনা থেকে সেরে উঠতে ব্যবহার করা হয়। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পরার পর আরও একটি ভুয়ো তথ্যের ফাঁদে পড়ে।
আরও পড়ুন- করোনা থেকে সেরে উঠলেও রেস্টলেস অ্যানাল সিনড্রোমের থাবা! রোগটি ঠিক কী?
সেই ভুয়ো তথ্য সঠিক হিসেবে মেনে নিয়ে অনেকেই রক্তে অক্সিজেন লেভেল বাড়াতে বিভিন্ন নেবুলাইজার (Nebulizer) ব্যবহার করা শুরু করেন। এতে সুবিধা হওয়ার পরিবর্তে অনেকে বিপদে পড়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মত, বর্তমানে কোভিড ভ্যাকসিন ছাড়া (Covid 19 Vaccine) এবং কোভিড প্রোটোকল মেনে চলা ছাড়া অন্য কোনও ভাবে কোভিডকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়।
advertisement
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সম্পর্কে কী ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছে?
এবিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি স্কিনশট ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে বলা হচ্ছে কোনও নেবুলাইজারের ভিতরে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নিয়ে তা গ্রহণ করতে হবে। যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, এর ফলে কোনও কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে তাদের মেরে ফেলতে সক্ষম হবে। এমনকী কিছু চিকিৎসকও এই ভুয়ো খবরের সঙ্গে এক মত হয়েছিলেন।
advertisement
যাঁরা ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের ক্ষেত্রে ওই পদ্ধতি অবলম্বনের কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আমেরিকার অনেকে এই তথ্য সত্যি হিসেবে মেনে নিয়ে এই পদ্ধতি অবলম্বনও করেন।
বিশেষজ্ঞদের কী মত?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। এই ধরনের কোনও বিষয় এখনও সামনে আসেনি। আমেরিকার অ্যাজমা এবং অ্যালার্জি ফআউন্ডেশন (Asthma and Allergy Foundation of America) এবিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে এই নিয়ম মেনে চললে ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে।
advertisement
কেন সমস্যা হতে পারে?
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মূলত দাঁতের চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন। কারণ তাঁরা ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য এই কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। এবং বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম অনুযায়ী এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। শরীরের ভিতরে গ্রহণ করার জন্য এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।
সঠিক নিয়ম মেনে যদি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড না ব্যবহার করা হয় তাহলে তা শরীরের ভিতরে গিয়ে কেমিক্যাল রিয়্যাকশনের ফলে বিষাক্ত কোনও পদার্থ তৈরি করতে পারে। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নেবুলাইজারের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করলে তা সরাসরি ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করে। এর ফলে ফুসফুসের মধ্যে থাকা কোষগুলির উপরে প্রভাব পড়ে এবং সেলুলর DNA-এ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়।
advertisement
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এতটাই শক্তিশালী কেমিক্যাল যে এটি ফুসফুসে পৌঁছলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমতে পারে। এমনকী লং টার্ম ড্যামেজ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোভিডের চিকিৎসা কোনও সময় বাড়িতে নিজের সিদ্ধান্ত মতো করা উচিত নয়। কারণ এতে ভালো হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অতিরিক্ত পরিমাণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড শরীরে ঢুকলে কী হবে?
অতিরিক্ত পরিমাণে কেমিক্যালটি শরীরের ভিতরে ঢুকলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এমনকী রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে।
তাহলে কি হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় না?
এই তথ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পিছনে একটি কারণ রয়েছে। কখনও কখনও ডজসইনফেকটেন্ট করার জন্য হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের একটি সলিউশন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, কোনও সারফেস থেকে ভাইরাস নির্মূল করতে ব্যবহার করা হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
মাস্ক ব্যবহার করার পর তা পরিষ্কার করতে ওই সলিউশন ব্যবহার করা হয়। সেকারণে অনেকে তা শরীরের ভিতরে থাকা ভাইরাস নির্মূল করার কথা বলেছেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। এবং এই পদ্ধতি মেনে চললে কোনও রোগীর পরিস্থিতি মারাত্মক খারাপ হতে পারে।
চিকিৎসকরা এবিষয়ে সতর্ক করে জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় অবৈজ্ঞানিক অনেক তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। সেই যুক্তিগুলি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য এবং সেগুলি মেনে চললে শরীরিক অবস্থা চরম অবনতির পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। তাই সোশাল মিডিয়ায় এই ধরনের ভুয়ো তথ্য বিশ্বাস না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আর্জি, বর্তমান সময়ে যে কোনও শারীরিক সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া সবথেকে বেশি দরকারি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেকেই অনেক তথ্য দিলেও এটা মনে রাখা প্রয়োজন, করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করার করার জন্য শুধুমাত্র একটি অস্ত্র এখনও পর্যন্ত মানুষের হাতে রয়েছে। তা হল ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন ছাড়া অন্য কোনও অস্ত্র নেই। এমনকী করোনার চিকিৎসার জন্য কোনও ওষুধও আবিষ্কার হয়নি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কারও শরীরে কোভিড আক্রমণ করলে নিজের ইচ্ছামতো কোনও ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কারণ ভুল ওষুধ সেবনে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই কোনও রোগী কোভিডে আক্রান্ত হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এবং তাঁর পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করা দরকার।
এছাড়াও, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো কোনও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। কারণ এগুলি শরীরের উন্নতির পরিবর্তে শরীরে ক্ষতিসাধন করে। বিশেষজ্ঞরা বার বার কোভিড প্রোটোকল মেনে চলার জন্য জোর দিয়েছেন । মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এতে কোভিড থেকে অনেকটা দূরে থাকা যায়।
view commentsLocation :
First Published :
October 09, 2021 6:41 PM IST