Explained: চক্ষুদান নিয়ে সঠিক ধারনা আছে তো? আলাদা আইন প্রয়োজন কেন? জানুন বিশেষজ্ঞের মত!

Last Updated:

Explained: অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তুলনায় আলাদা হয় কর্নিয়া প্রতিস্থাপন। ফলে এর প্যারামিটারও ভিন্ন হয়ে থাকে। জানুন বিস্তারিত

#নয়া দিল্লি:  চক্ষু দানকে (Eye donation) একটি মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেকেই মৃত্যুর আগেই চক্ষু বা চোখ দানের অঙ্গীকার করে রাখেন। যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর চোখ দিয়েই আবার দুনিয়া দেখার সুযোগ পান কোনও দৃষ্টিহীন মানুষ। তবে চক্ষু দান নিয়ে সে-রকম স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। আজ সেই বিষয়েই কথা বলছেন আইব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া বা ইবিএআই (EBAI)-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং ইবিসিআরসি (EBCRC)-র চেয়ারম্যান (বোর্ড অফ অ্যাডভাইসর) ও ম্যানেজিং ট্রাস্টি যশবন্ত মেহতা (Jashwant Mehta)।
চক্ষু দান:
চক্ষু দানের বিষয়টা ঠিক কী? তাঁর কথায়, কোনও মৃত মানুষের শরীর থেকে কর্নিয়া পুনরুদ্ধারই হল চক্ষু দান। আর কর্নিয়া হল চোখের বাইরের দিকের স্বচ্ছ স্তর। এই অংশকে ক্যামেরার লেন্সের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। ক্যামেরার লেন্সের মধ্যে দিয়ে যে-ভাবে আলো প্রবেশ করে, ঠিক সেভাবেই কর্নিয়ার মাধ্যমে চোখের ভিতরে আলো প্রবেশ করে। আর কোনও দুর্ঘটনা কিংবা সংক্রমণের জেরে কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাইরের আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে না। এই অবস্থাকে কর্নিয়াল ওপাসিটি (corneal opacity) বলা হয়। এমতাবস্থায় যদি চোখের অন্যান্য অংশ যেমন রেটিনাও অক্ষত থাকে, তা-হলেও অন্ধ হয়ে যেতে পারেন রোগী। কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র ইত্যাদির মতো অঙ্গ রোগীর মৃত্যুর আগেই পুনরুদ্ধার করতে হয়। তবে কর্নিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমন নয়। কারণ রোগীর মৃত্যুর ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকে কর্নিয়ার এন্ডোথেলিয়াম কোষগুলি। ফলে ওই সময়ের মধ্যে তা পুনরুদ্ধার করা গেলে তা সহজেই ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
advertisement
advertisement
কর্নিয়াল ওপাসিটি এবং চক্ষু দানের বর্তমান অবস্থা:
অন্ধত্ব বা দৃষ্টিহীনতার নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল গ্লুকোমা, ক্যাটারাক্ট, রেটিনার বিচ্যুতি ইত্যাদি। সমস্ত দৃষ্টিহীন মানুষদের ৮-১০ শতাংশের মধ্যে কর্নিয়াল ওপাসিটি দেখা যায়। যা কর্নিয়া প্রতিস্থাপন থেকে উপকৃত হতে পারে, এমন লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশের জন্য কাজ করতে পারে। করোনা মহামারীর জেরে চক্ষু দানের কাজ ব্যাহত হয়েছিল। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের কাজ হয়। ১০ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্নিয়া সংক্রান্ত দৃষ্টিহীনতার সমস্যা পুরোপুরি দূর করতে প্রতি বছর কমপক্ষে ১ লক্ষ করে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করতে হবে। অবশ্য এই বিষয়ে নজির গড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানকার জনসংখ্যা আমাদের দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ। আমেরিকায় প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ হাজার কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্টের ঘটনা ঘটে।
advertisement
চক্ষু দান এবং কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের জন্য আলাদা আইন প্রয়োজন কেন?
অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তুলনায় আলাদা হয় কর্নিয়া প্রতিস্থাপন (Corneal Transplant)। ফলে এর প্যারামিটারও ভিন্ন হয়ে থাকে।
সেইগুলোই নিচে আলোচনা করা হল:
কিডনি, লিভার প্রভৃতির মতো অঙ্গ রোগীর মৃত্যুর পর সংগ্রহ করা যায় না। তবে কর্নিয়া রোগীর মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যেও সংগ্রহ করা যায়।
advertisement
অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতা এবং গ্রহীতার ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু কর্নিয়ার ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয় না।
দাতার শরীর থেকে অন্যান্য অঙ্গ সংগ্রহ করার জন্য পুরোদমে অস্ত্রোপচার করতে হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যে-কোনও টেকনিশিয়ান কর্নিয়া সংগ্রহ করতে পারেন। তার জন্য কোনও মেডিকেল ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না।
কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুষ্কর্ম এবং কেলেঙ্কারির কথা শোনা যায়। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এমন কিছু করার জায়গা থাকে না।
advertisement
ব্রেন ডেথ হওয়া রোগীর দেহ থেকে অন্যান্য অঙ্গ সংগ্রহ করা হলে
পোস্টমর্টেমের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে অন্য দিকে, কর্নিয়া সংগ্রহ করা হলে পোস্টমর্টেমের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। আর মৃত ব্যক্তির মুখের কোনও বিকৃতিও ঘটে না।
যশবন্ত মেহতা জানান যে, এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, অন্যান্য অঙ্গ থেকে কর্নিয়া আলাদা করতে হবে। আর সেই সঙ্গে এর জন্য সহায়ক বা অনুকূল আইন থাকাও বাঞ্ছনীয়। ১৯৯৪ সালে যখন হিউম্যান অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্ট অ্যাক্ট (HOTA) প্রণয়ন করা হয়েছিল, তখন আমরা কর্নিয়াল গ্রাফটিং অ্যাক্ট সংক্রান্ত একটা মডেল প্রস্তুত করে তা সংসদে পেশ করেছিলামL দুর্ভাগ্যবশত আমাদের আইন প্রণেতারা এই বিষয়টিকে ততটাও গুরুত্ব দেননি, ফলে এই বিষয়ে আমাদের অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
advertisement
তিনি আরও বলেন, পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই আমরা চক্ষুদানের বিষয়টা শুরু করেছিলাম। তবে তার পঁয়ষট্টি বছর পরেও এই বিষয়ে আমাদের উন্নতি খুবই ধীর গতিতে হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বহু দেশই অন্যান্য অঙ্গের থেকে আলাদা করেছে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের বিষয়টাকে। এর পাশাপাশি সেই সব দেশে রয়েছে সক্রিয় আইনও। ফলে আমাদের তুলনায় তারা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, আমেরিকাতে ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত - ১০ বছর সময়ের মধ্যে মোট ২০ হাজার প্রতিস্থাপন হয়েছে। ৭০ এবং ৮০-র দশকে সেখানকার কিছু অংশে অনুকূল এবং সক্রিয় আইন প্রণয়নের পরে সেই সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। ১৯৬১ সালে যে সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৬ হাজার, ১৯৮৮-তেই সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৩৬ হাজার। আর বর্তমানে আমেরিকায় বছরে ৫০ হাজার কর্নিয়া প্রতিস্থাপন তো হয়ই, সেই সঙ্গে তাদের কাছে থেকে যায় অতিরিক্ত কর্নিয়া। যা তারা পাঠিয়ে দেয় সেই সব দেশে, যেখানে কর্নিয়ার প্রয়োজনীয়তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ-ভাবে প্রতি বছর আমেরিকা থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্নিয়া অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়।
advertisement
যে-হেতু আমাদের দেশে প্রতিস্থাপনের নিরিখে অন্যান্য অঙ্গের থেকে আলাদা করে ধরা হয় না কর্নিয়ার বিষয়টা, ফলে তা চক্ষু দানের পথেও বাধা তৈরি করছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে চোখ আলাদা করার জন্য এক জন রেজিস্টার্ড ডাক্তার থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে হিউম্যান অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্ট অ্যাক্ট (HOTA)-র ক্ষেত্রে কর্নিয়া সংগ্রহের জন্য রেজিস্টার্ড ডাক্তারবাবুর প্রয়োজনীয়তা-সহ নানা সমস্যা তৈরি হতে শুরু করে। চক্ষু দানের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃত ব্যক্তির বাড়িতেই তাঁর চোখ সংগ্রহ করার প্রক্রিয়াটা সম্পাদন করা হত। তবে সে-ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড ডাক্তার পাওয়া মুশকিল হয়ে যেত। কারণ এই প্রক্রিয়াটিতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এর পর ২০১২ সালে হিউম্যান অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্ট অ্যাক্ট-এর পরিবর্তে আনা হয় ট্রান্সপ্লান্টেশন অফ হিউম্যান অর্গ্যানস অ্যাক্ট (THOTA)। সেই সময়ই শুধুমাত্র সংশোধনী স্থির করা গিয়েছিল।
যশোবন্ত মেহতা-র বক্তব্য, “প্রতিস্থাপনের নিরিখে অন্যান্য অঙ্গের মতোই ধরা হয় কর্নিয়াকে। আর আমাদের কাছে রিকোয়ার্ড রিক্যুয়েস্ট এবং প্রিজিউমড কনসেন্টের কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ এই দু’টি বিষয়ের ক্ষমতা অন্যান্য দেশের হাতে রয়েছে, যার ফলে সেই সব দেশ চক্ষু দান এবং কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করতে পেরেছে। রিকোয়ার্ড রিক্যুয়েস্টের ক্ষমতা হাতে থাকলে মৃত ব্যক্তির পরম আত্মীয়ের কাছে চক্ষু দানের অনুরোধ বাধ্যতামূলক হয়। আর এটাও দেখা গিয়েছে যে, যদি মৃত ব্যক্তির চক্ষু দানের জন্য তার পরিবারের কাছে এই অনুরোধটুকু করা হয়, তা-হলে অন্তত ১০ শতাংশ পরিবারই এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। শুধুমাত্র মুম্বইয়েই প্রতি বছর প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। তার মধ্যে ১০ শতাংশ মৃত ব্যক্তির কর্নিয়া পুনরুদ্ধার করা যায়। ফলে চক্ষু দানের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার। বর্তমানে মুম্বইয়ে প্রতি বছর দেড় থেকে দু’হাজার চক্ষু দানের ঘটনা ঘটে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, সংখ্যাটা আরও সহজেই বাড়ানো সম্ভব।
আবার প্রিজিউমড কনসেন্টের ক্ষেত্রে যেটা হয়, সেটা হল - আগে থেকে কোনও প্রত্যাখ্যান রেকর্ড করা না-থাকলে যে কোনও মেডিকো-লিগ্যাল কেসের ক্ষেত্রে যেখানে ময়নাতদন্ত (post-mortem) করা হচ্ছে, সেখানে কর্নিয়া সংগ্রহ করার অনুমতি দেওয়া হয়। দেশের মধ্যে শুধু মুম্বইয়েই প্রায় ৭ হাজার এই ধরনের কেস দেখা যায়, যেখানে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন থাকে। তবে সেখানে শুধুমাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই কর্নিয়া সংগ্রহ করা যায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, আরও অনেকটা পথ যেতে হবে আর তাতেই মহারাষ্ট্রের মধ্যে মুম্বই হয়ে উঠবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
আমেরিকাতে প্রতিটা মৃত্যুর ক্ষেত্রেই রিকোয়ার্ড রিক্যুয়েস্ট আইন (Required Request Law) কঠোর ভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রোগীর পরিবারের কাছে অনুরোধ করা হয়। আর সেটা না-করা হলে কিন্তু কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে। একই ভাবে প্রিজিউমড কনসেন্ট আইন (Presumed Consent)-এর আওতায় আবার সমস্ত ময়নাতদন্তের কেসেই কর্নিয়া সংগ্রহ করা যায়।
যশোবন্ত মেহতা আরও বলেন যে, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব মি. দেশিরাজু (Mr. Desiraju)-র কাছে বারবার ফলো-আপ করার ফলে আমরা এই বাধা পেরোতে পেরেছি। যার ফলে ২০১৩ সাল থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত টেকনিশিয়ানরাই মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে চোখ সংগ্রহ করার অনুমতি পেয়েছেন। আর একটা সক্রিয় এবং অনুকূল আইন থাকলে আমাদের দেশ থেকে শুধুমাত্র কর্নিয়া সংক্রান্ত অন্ধত্বই দূর হবে না, এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলিতেও আমরা পাঠাতে পারব কর্নিয়া। আসলে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কর্নিয়ার তীব্র চাহিদা রয়েছে। আর সেখানে ভারত যদি কর্নিয়া পাঠাতে পারে, তা-হলে বিশ্বে চক্ষু দান এবং কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের নিরিখে ভারতই সবার আগে জায়গা করে নেবে।
বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Explained: চক্ষুদান নিয়ে সঠিক ধারনা আছে তো? আলাদা আইন প্রয়োজন কেন? জানুন বিশেষজ্ঞের মত!
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরেও দুর্যোগ! উইকেন্ডে আবহাওয়া কেমন থাকবে?
  • ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে

  • দুর্যোগ চলবে উত্তরবঙ্গেও

  • উইকেন্ডে গিয়ে আবহাওয়ার উন্নতি

VIEW MORE
advertisement
advertisement