Explained | Covid 19 : মুম্বই-সহ পাঁচটি রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ! তবে কি এসে গেল চতুর্থ ঢেউ?
- Published by:Swaralipi Dasgupta
Last Updated:
Explained | Covid 19 : গত শুক্রবার ভারতে এক দিনের সংক্রমণের সংখ্যা ৪ হাজার। প্রায় ৮৪ দিন পরে শুক্রবার সেই সংখ্যা ফের বাড়তে দেখা গেল।
#নয়াদিল্লি: দু’বছর ধরে চলেছে মারণ করোনার দাপট। তারপরে চলতি বছর থেকেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে গোটা দেশ। খুলেছে স্কুল-কলেজ-অফিসও। কিন্তু ইতিমধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে কোভিডের চতুর্থ ঢেউ (Fourth Wave)। কারণ গত সপ্তাহ থেকে বাড়তে শুরু করেছে কোভিড ১৯ (Covid 19)-এ আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকী সাপ্তাহিক পজিটিভিটির হারও বেড়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় পাঁচটি রাজ্যের পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখতে শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যগুলিকে। প্রয়োজন হলে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণ কীভাবে বাড়ছে?
আসলে গত শুক্রবার ভারতে এক দিনের সংক্রমণের সংখ্যা ৪ হাজার। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের দাপটে আক্রান্তের সংখ্যা এরকমই ছিল। অর্থাৎ প্রায় ৮৪ দিন পরে শুক্রবার সেই সংখ্যা ফের বাড়তে দেখা গেল। আর আচমকা এই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে কড়া পদক্ষেপ করছে দিল্লিও। ইতিমধ্যেই গোটা শহর এবং বিমানবন্দরের উপর কড়া নজরদারি শুরু করছে দিল্লি সরকার।
advertisement
advertisement
কেন্দ্রের পদক্ষেপ কী?
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ তামিলনাড়ু, কেরল, তেলঙ্গানা, কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, কয়েকটি রাজ্যের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কারণে গোটা দেশের সামগ্রিক আক্রান্তের সংখ্য়া বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, ইতিমধ্যেই স্থানীয় ভাবে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। ভূষণের বক্তব্য, বিশ্বব্যাপী মহামারীর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এতদিন পর্যন্ত যেটুকু আমরা করেছি, তা যাতে না-হারিয়ে যায়, তার জন্য ঝুঁকির মূল্যায়ন শুরু করে দিতে হবে।
advertisement
সেই চিঠিতে তিনি আরও জানিয়েছেন যে, বিগত তিন মাসে গোটা দেশের কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে শুরু করেছিল। মে মাসের শেষ দিকে নতুন সংক্রমণ স্বল্প বাড়তে দেখা গিয়েছিল। ২৭ মে-র সপ্তাহটায় সংক্রমণ ছিল প্রায় ১৫ হাজার ৭০৮। আর ওই সপ্তাহে পজিটিভিটির হার ছিল ০.৫২ শতাংশ। সেখানে ৩ জুনের সপ্তাহে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ০৫৫। আর সেই সপ্তাহের পজিটিভিটির হার ছিল ০.৭৩ শতাংশ।
advertisement
এই সব রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি কতটা শোচনীয়?
তামিলনাড়ু: কেন্দ্রের চিঠি অনুযায়ী, তামিলনাড়ুর সাপ্তাহিক সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৭ মে-র সপ্তাহে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩৩৫। আর সেখানে ৩ জুনের সপ্তাহে সেই সংখ্যাটা ছিল ৬৫৯। এমনকী পজিটিভিটির হারও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। গত সপ্তাহেই পজিটিভিটির হার ০.৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ০.৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। জেলাভিত্তিক সংক্রমণের হিসেব অনুযায়ী, দুটো জেলায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। দেখা যাচ্ছে, চেন্নাই এবং চেঙ্গালপাট্টু জেলার সাপ্তাহিক সংক্রমণ এবং পজিটিভিটির হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
advertisement
কেরল: কেরলের অবস্থাও বেশ শোচনীয়। কারণ ২৭ মে-র সপ্তাহে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৪১৩৯। আর সেখানে ৩ জুন-এর সপ্তাহে নতুন সংক্রমণের সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫৫৬। আর ওই সপ্তাহের সংক্রমণের হার পৌঁছেছে ৩১.১৪ শতাংশে। শুধু তা-ই নয়, পজিটিভিটির হারেও উর্ধ্বগতি চোখে পড়েছে। গত সপ্তাহের পজিটিভিটির হার ৫.২ থেকে ৭.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। আর জেলাভিত্তিক কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে যে, এর্নাকুলাম, তিরুঅনন্তপুরম, কোট্টায়াম, কোঝিকোড়, পাঠানামথিট্টা, ইদুক্কি, আলাপুঝা, কোল্লাম, কান্নুর, মালাপ্পুরম এবং ওয়েনাড়-এর মতো ১১টি রাজ্যে সাপ্তাহিক সংক্রমণের সংখ্যা এবং পজিটিভিটির হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
advertisement
তেলঙ্গানা: কেন্দ্রের চিঠি অনুযায়ী, ২৭ মে-র সপ্তাহে সাপ্তাহিক নতুন সংক্রমণ ছিল ২৮৭। আর সেখানে ৩ জুনের সপ্তাহে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭৫। অর্থাৎ ওই সপ্তাহে সংক্রমণের হার ছিল ১.৭৮ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়, বেড়েছে পজিটিভিটির হারও। গত সপ্তাহে এই হার ০.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ০.৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।
মহারাষ্ট্র: মহারাষ্ট্রেও লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। ২৭ মে-র সপ্তাহে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ২৪৭১। আর ৩ জুনের সপ্তাহে সেই সংক্রমণের সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৪৮৮৩। আর নতুন সংক্রমণের হার ছিল ২৩.১৯ শতাংশ। আর ওই রাজ্যে বেড়েছে পজিটিভিটির হারও। গত সপ্তাহে পজিটিভিটির হার ১.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩.১ শতাংশ। মুম্বই শহরতলি, মুম্বই, থাণে, পুণে, রায়গড় এবং পালঘরের মতো জায়গায় সাপ্তাহিক সংক্রমণ এবং পজিটিভিটির হার সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
advertisement
কর্নাটক: কর্নাটকের সাপ্তাহিক সংক্রমণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৭ মে-র সপ্তাহে কর্নাটকের নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১০০৩। আর ৩ জুন সেই সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১৪৪৬। যার অর্থ হল, ওই সপ্তাহে সংক্রমণের হার বেড়েছিল ৬.৮৭ শতাংশ। আর পজিটিভিটির হারও বেড়েছিল। দেখা যায়, গত সপ্তাহে পজিটিভিটির হার ০.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১.১ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল। বেঙ্গালুরু শহরতলিতে সাপ্তাহিক সংক্রমণ এবং পজিটিভিটির হার বৃদ্ধি পেয়েছিল।
জুলাইয়ে সম্ভাব্য চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিতের মধ্যেই বিএমসি কী উদ্যোগ নিল?
শুক্রবার শহরের সমস্ত স্বাস্থ্য দফতরকে কোভিড টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বৃহণ্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বা বিএমসি (BMC)। গত কয়েক দিন ধরে মুম্বইয়ে কোভিড ১৯-এর আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছেনত, আবার অন্য দিকে বর্ষার কারণে রয়েছে জলবাহিত রোগের ঝুঁকিও। মিউনিসিপ্যাল কমিশনার ডা. ইকবাল সিং চাহাল (Dr Iqbal Singh Chahal) নির্দেশ দিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে যেন সব কিছু প্রস্তুত রেখে তৎপর থাকে সমস্ত দফতর। এছাড়া চতুর্থ ঢেউ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বিএমসি আধিকারিকেরা শুক্রবার সমস্ত আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং টেস্টিং বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকী যেসব হাউজিং সোসাইটিগুলিতে পজিটিভ কেসের সংখ্যা বেশি, সেখানে টেস্টের উপর আরও বেশি তকে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে আগে থেকে ওয়ার রুম থেকে শুরু করে সব কিছু প্রস্তুত রাখতে হবে। মিটিংয়ে বিএমসি-র প্রধান বলেন, আইআইটি কানপুরের বিশেষজ্ঞরা জুলাইয়ে সম্ভাব্য চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তাই গোটা শহরকে আরও বেশি করে সতর্ক থাকতে হবে। শুধু তা-ই নয়, জেলাগুলিতেও কোভিড টেস্ট বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দফতর।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএ.৪ (BA.4) এবং বিএ.৫-ই (BA.5) কি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে?
চলতি বছরের গোড়ার দিকে দাপট দেখা গিয়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের। এবার চিন্তা বাড়াচ্ছে ওই ভ্যারিয়েন্টের সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ.৪ এবং বিএ.৫। কারণ বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হচ্ছে এই দুই সাব-ভ্যারিয়েন্টকেই। যদিও বারবার বলা হচ্ছে, ভয়ের কোনও বিষয় নেই। কারণ জনসংখ্যার বেশির ভাগ মানুষই ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
ভায়রোলজিস্ট ডা. শাহিদ জামিল (Dr Shahid Jameel) সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যদি ভাইরাসের সংস্পর্শ আসেন, তাহলে তিনি সংক্রমিত হবেন। তবে তা মৃদু রোগের আকার ধারণ করবে না। কারণ ইতিমধ্যেই সারা দেশের বেশির ভাগ হয় মানুষ ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন, না-হলে তাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আসলে এই ভাবেই এটা স্থানীয় সংক্রমণের আকার নেবে। সবথেকে বেশি যে বিষয়টার উপর নজর দিতে হবে, সেটা হল কত জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
আইসিএমআর-এর বিশিষ্ট সদস্য ডা. সঞ্জয় পূজারী (Dr. Sanjay Pujari) জানান, অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে এলেও রোগের গুরুতর জটিলতা রুখতে সাহায্য করবে টি-কোষ। আসলে এই কোষ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
সামনের পথ কী?
কেন্দ্রের জারি করা নির্দেশে রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং কোভিড ১৯-এর জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর সঙ্গে টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট-ভ্যাকসিনেশন এবং কোভিড বিধিনিষেধ চলার মতো পাঁচটি কৌশল অবলম্বন করতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সংক্রমণ এবং অসুস্থতার উপরেই নজরদারি করতে হবে। আর সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গ চোখে পড়লেই তা রোখার জন্য সঠিক পদক্ষেপ করতে হবে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
ইতিমধ্যে দিল্লিতেও শুরু হয়েছে কড়াকড়ি। বিমানবন্দরে এবং বিমানের মধ্যে যাঁরা মাস্ক পরবেন না, কিংবা হ্যান্ড হাইজিনের নিয়ম লঙ্ঘন করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শুক্রবার কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। আদলতের বক্তব্য, যেসব যাত্রী এই বিধিনিষেধ মানবেন না, তাঁদের জরিমানা করা হবে। এর পাশাপাশি তাঁদের নাম উঠে যাবে নো-ফ্লাই তালিকায়। আসলে অনেক সময় দেখা যায় যে, যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই নিয়মগুলো মানা হচ্ছে না। তাই এই ব্যবস্থা। আর এই সব নিয়ম সঠিক ভাবে লাগু হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য ডিজিসিএ-সহ সমস্ত কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।
Location :
First Published :
June 06, 2022 3:48 PM IST