৩৯ বছর পর আবার বড় পর্দায় 'উত্তম কুমার'!
Last Updated:
#কলকাতা: যদি এমনটা হত যে ৩৯ বছর পর ছবির প্রেমিয়ারে উত্তম কুমার এসেছেন। তাহলে ঠিক কী হতে পারত! উত্তমের ছেড়ে যাওয়া শহরের সঙ্গে আজকের শহরের কোনও মিলই খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। সময়টাও তো নেহাত কম নয়, অনেকগুলো বছর পার হয়ে গিয়েছে মাঝখানে। কিন্তু শহরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে ছবি হচ্ছে তাতে রয়েছেন উত্তম কুমার নিজেও। তাই তাঁকে তো আসতেই হত। সৌমিক মিত্রের ছবি 'মহালয়া'-তে উত্তম কুমারকে একেবারে অন্য রকম ভাবে দেখানো হয়েছে। অভিনয় করছেন যীশু সেনগুপ্ত। ধুতি, পাঞ্জাবি, শাল গায়ে একেবারে তাঁর মতোই হাঁটাচলা রপ্ত করেছেন ছেলেটি। কথাও বেশ ভালই বলে। তা বাপু একেবারে উত্তম কুমার হয়ে উঠলে কী করে? একটু সামলে নিয়ে উত্তর দিলেন যীশু। ভয় তো পাচ্ছিলেনই, পর্দায় উত্তম কুমার হয়ে ওঠা কী আর মুখের কথা! " উত্তম কুমার হলেন অভিনয়ের ভগবান। তাঁর চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে ভয় তো করবেই। আমার শাশুড়ি অঞ্জনা ভৌমিক অনেক গুলো ছবিতে কাজ করেছেন উত্তমকুমারের সঙ্গে। তাই আমি প্রথমেই তাঁর সঙ্গে কথা বলা শুরু করি। জানতে থাকি কিভাবে তিনি কথা বলতেন, কিভাবে হাঁটতেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মানুষের সঙ্গে কিভাবে মিশতেন। তারপর সেগুলোকেই আমি নিজের মতো করে ভাবতে থাকি। এই ভাবনা থেকেই কাজ করার সাহস পাই।" উত্তমের চরিত্রে কাজ করতে হলে সাহস তো লাগবেই। তবে যদি সেই ছবি দেখতে স্বয়ং উত্তমই চলে আসেন! কিন্তু বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর সঙ্গে হঠাৎ উত্তম কেন? " আসলে ছবির গল্পটাই তো ওদের নিয়ে। আকাশবাণী থেকে একবার ঠিক করা হয়েছিল, বীরেন্দ্র বাবুর গলার বদলে উত্তম কুমারের গলায় 'মহালয়া' পাঠ করা হবে। কিন্তু সেই মহালয়া মানুষ নেইনি। তারা বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর গলাতেই মহালয়া শুনতে চাইলেন। তাই আবার ফিরিয়ে আনা হয় বীরেন্দ্রবাবুকে। এই সত্যি ঘটনার উপরই তৈরি হচ্ছে এই ছবি।" মুচকি হাসলেন উত্তম।
তারমানে কী হেরে গেলেন উত্তমবাবু? "না না এ তো কোনও হারজিতের গল্প নয়। হারবেন কেন? এটা কিংবদন্তী দুটো মানুষের জীবনের ঘটনা। তাঁদের সম্পর্কের কথা। এটুকু বলবো আমি নিজেকে নিয়ে অনেক ভেবেছি এই ছবিতে। সৌমিকও খুব ভাল পরিচালক। উত্তমবাবু এই ছবি দেখলে খুশি হতেন।" আরও একবার মুচকি হেসে সিগারেট ধরালেন উত্তম। ওদিকে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর চরিত্রে কাজ করছেন শুভাশিষ মুখোপাধ্যায়। শুভাশিষ খুবই ভাল অভিনেতা। বললেন, "আমি এই কাজটা করার জন্য প্রথমে রেডিও-র তিন জন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। সমরেশ ঘোষ, অজিত মুখোপাধ্যায় ও জগন্নাথ বসুর সঙ্গে। তাঁরা সকলেই বীরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁদের থেকে আমি জানতে শুরু করি ভদ্রবাবু মানুষটা কেমন ছিলেন। জগন্নাথ বসুতো আমাকে অভিনয় করে দেখিয়েছেন কেমন করে হাঁটতেন বীরেন্দ্রবাবু। তাছাড়া পরিচালকও অনেক সাহায্য করেছে। যীশুর সঙ্গেও অনেকদিন পরে কাজ করছি। ও তো খুব ভাল কাজ করে। তবে এখানে একটা সিন আছে সেটাতে কাজ করার পর আমি আর যীশু দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম প্রায় দুমিনিট। কেউ কোনও কথা বলতে পারিনি। পারবই বা কী করে! যে দুজন মানুষের চরিত্রে আমরা কাজ করছি, তাঁরা তাদের কাজের জগতে ভগবান। আমরা ভাগ্যবান যে এই কাজ করতে পারছি। এটা তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন।" উত্তম কুমার তাঁর জায়গায় যেমন ছিলেন সেরা। তেমনই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রকে ছাড়া মহালয়া হয় না। মহালয়া মানেই দেবীর আগমনি বার্তা আর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। গোটা ব্যাপারটাই নজর করছিলেন উত্তম কুমার। আর মনে মনে হাঁসছিলেন। কারণ বীরেন্দ্রর সঙ্গে যে সেদিন ঠিক কী হয়েছিল তাঁর, তা জানেন একমাত্র তিনি। বাকিটা তো ইতিহাস। তবুও নতুন প্রজন্ম তাঁর কথা ভাবছেন, তাঁদের কথা ভাবছেন, ছবি করছেন এই অনেক নয় কি! তবে বাইরের কথোপকথনেই খুশি হলেন উত্তম। ছবিটা আর দেখলেন না। তাঁর ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে রওনা দিলেন তিনি। এমনটা উত্তম বেঁচে থাকলে হয়ত হত!
Location :
First Published :
March 01, 2019 4:09 PM IST