Badami Hyenar Kobole Movie Review: দুই হাতে দু’টো বন্দুক, আর এক হাতে একটা টর্চ নিয়ে রেকর্ড ভাঙা চুম্বনে হৃদয়হরণ দীপক চ্যাটার্জির, থুড়ি আবীরের!
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
- news18 bangla
Last Updated:
Shri Swapankumarer Badami Hyenar Kobole movie review: দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত এ ছবি বঙ্গ ভণ্ডামির নিষিদ্ধ ইশতেহার৷ ওটিটি-আইফোন-রিলস-ট্রেন্ডিং-ভাইরালের যুগে অনবদ্য মুনসিয়ানায় পরিচালক ফিরিয়ে এনেছেন স্বপনকুমার এবং তাঁর গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জিকে
বাংলায় পাল্প ফিকশনের পথ প্রদর্শক তিনি। বিস্মৃত সেই লেখক সমরেন্দ্র পাণ্ডে তথা স্বপনকুমারের এক ও অদ্বিতীয় ডিটেকটিভ দীপক চ্যাটার্জি এই প্রথম বড় পর্দায়। কেমন হল ‘শ্রী স্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলে’? ছবি দেখে লিখলেন News18 Bangla-র অর্পিতা রায়চৌধুরী
থোড় বড়ি খাড়া লিখে তাড়াতাড়া, এইবারে লিখেছেন খাড়া বড়ি থোড়৷ জটায়ুর কলমের জোর নিয়ে এটাই ছিল প্রদোষচন্দ্র মিত্রর মূল্যায়ন। বকলমে, সমসাময়িক গড়পড়তা কিশোর সাহিত্যের রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ সম্বন্ধে ফেলু-স্রষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি৷ মিস্টার মিটারের আদর্শ যদি শার্লক হোমস হন, প্রখর রুদ্রের পথ প্রদর্শক কি দীপক চ্যাটার্জি? এ প্রশ্ন এ বার বাজপাখির ডানার মতোই ভেসে উঠবে ‘ শ্রী স্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলে’ দেখার পর৷ দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত এ ছবি বঙ্গ ভণ্ডামির নিষিদ্ধ ইশতেহার৷ ওটিটি-আইফোন-রিলস-ট্রেন্ডিং-ভাইরালের যুগে অনবদ্য মুনসিয়ানায় পরিচালক ফিরিয়ে এনেছেন স্বপনকুমার এবং তাঁর গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জিকে৷
advertisement

advertisement
হাইওয়ে, হোর্ডিং, শপিং মল শোভিত কলকাতায় আজ যাঁরা সত্তরোর্ধ্ব, তাঁদের অতীতের মতোই মলিন, মৃতপ্রায় ‘কলিকাতা পাবলিক লাইব্রেরি’-র রক্ষক দীপক চ্যাটার্জি৷ নিরাপত্তারক্ষীর উর্দি পরে টিমটিমে আলোয় পাহারা দেন মলাটবন্দি তাঁর কীর্তিকাহিনি৷ কালো নেকড়ে, কালনাগিনী, ড্রাগন, বাজপাখির সঙ্গে দীপক চ্যাটার্জির দুর্ধর্ষ লড়াই আজ সেখানে ধূসর পাণ্ডুলিপি৷ পাঠক পথ ভুলেছে পাঠাগারের৷ হরপ্পা মহেঞ্জোদাড়ো হয়ে ওঠা লাইব্রেরিতে থরে থরে ঝুরঝুরে বই যেন বিস্মৃত পাঠাভ্যাসের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ দীপকের মুঠোবন্দি ন্যাপথলিন তাদের মৃত সঞ্জীবনী সুধা হওয়ার চেষ্টা করে চলে৷
advertisement

এরকমই কোনও এক অমৃত সুধার সন্ধান বোধহয় পেয়েছিলেন সমরেন্দ্র পাণ্ডেও৷ তার জোরেই জীবদ্দশায় সম্মান, খ্যাতি, যশ, অর্থ বঞ্চিত এই লেখক স্বপনকুমার ছদ্মনামে কলম পিষেছেন৷ অন্ন সংস্থানের দায়ে শিয়ালদহ স্টেশনের ওয়েটিং রুমের নিখরচায় পাওয়া আলো-পাখায় রাতের পর রাত ঝড়ের বেগে লিখে শেষ করেছেন দীপক চ্যাটার্জি ও রতনলালের রোমহর্ষক অভিযান৷ আজ থেকে প্রায় ছ’ দশক আগে ছিল তাঁর জনপ্রিয়তার স্বর্ণযুগ৷ কুড়ি বছর ধরে তাঁর একাধিক সিরিজের অসংখ্য বই একাধিক প্রজন্ম গোগ্রাসে পড়েছে৷ কিন্তু অধিকাংশ সময়েই তাঁর লেখা ছিল ‘বয়ঃসন্ধির নিষিদ্ধ আকর্ষণ’৷ অভিভাবক চক্ষু লুকিয়ে পাঠ্যবইয়ের আড়ালে সেই বই পড়া যায়৷ হাতখরচের টাকা জমিয়ে কেনাও যায়৷ কিন্তু স্কুলের লাইব্রেরি, বৈঠকখানার বুকশেল্ফ বা জন্মদিনের উপহারে ঠাঁই হয় না বটতলার তুলোটে কাগজে ছাপা স্বপনকুমারের ‘পাল্প ফিকশন’৷ মণ্ড আখ্যানের আবর্তে ঘুরপাক খাওয়া ডিটেকটিভ দীপক চ্যাটার্জি সেই আক্ষেপ থেকে বার হতে পারেন না৷ ব্যোমকেশ-ফেলুদা-কিরীটি থেকে শুরু করে শবর-মিতিনমাসির মতো কুলীন তিনি হতে পারলেন কই!
advertisement

তবু তাঁর তথাকথিত অন্ত্যজ গোয়েন্দাকে নিয়েই আরও একবার ম্যাজিক দেখাতে আসেন স্বপনকুমার৷ ছোট শালার দশকর্মা ভাণ্ডার অবলম্বন করেই আঁকড়ে ধরেন তাঁর ঝর্না কলম৷ সিরিজের নতুন অভিযান লেখার জন্য তাঁর হাত নিশপিশ করে৷ তাই কলকাতার বুকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল৷ এল দুর্ধর্ষ দুশমন বাদামী হায়নাও৷ দুর্যোগের রাতে তার খোঁজে বার হল বিখ্যাত ডিটেকটিভ দীপক চ্যাটার্জি এবং তার সহকারী রতনলাল৷ তার পর কী হল? কীভাবে বাদামী হায়নার সন্ধান মিলল? বাদামী হায়না আদতে কে? এই প্রশ্নমালার উত্তর পর্যন্ত পাড়ি দেওয়ার উড়ান-অভিজ্ঞতা অসাধারণ৷ যাঁরা স্বপনকুমারের লেখা বই পড়েছেন, তাঁদের মনে হবে এ যেন অবিকল সেই রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা৷ যাঁরা কোনওদিন তাঁর বইয়ের পাতা ওল্টাননি, তাঁদের কাছে এ ছবি আদ্যন্ত স্মার্টনেস এবং ফ্যান্টাসির অনবদ্য ককটেল৷
advertisement
আরও পড়ুন : প্রেমে বাধা হয়নি বেড়াজাল, রাশিদের ছন্দের দোসর স্ত্রী জয়িতাই, তাঁদের আনন্দ মুহূর্ত এখন স্মৃতির জলছবি

সেই ককটেলের রসায়নকে সুস্বাদু করার অন্যতম উপকরণ আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়৷ চিত্রনাট্যে বার বার মুখোমুখি হয়েছেন স্রষ্টা ও সৃষ্টি৷ দৃশ্যগুলিতে স্বপনকুমারের চরিত্রে পরান এবং দীপক চ্যাটার্জির ভূমিকায় আবীর যেন একে অন্যের আয়না৷ বিবেকদর্পণে একদিকে যেমন পাঠকসমাজে ব্রাত্য হয়ে থাকার বেদনা উঠে আসে৷ অন্যদিকে কাঁটাছেড়া চলে নিজেদের ভ্রান্তি নিয়েও৷ দু’ হাতে বন্দুক, এক হাতে টর্চ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া, পিস্তল থেকে ৬ টার বদলে ৩২ টা গুলি বেরিয়ে আসা যদি দীপকের কাছে ‘গাঁজাখুরি’ হয়, তবে তাঁর স্রষ্টার কাছে সেটা শুধুই ‘ম্যাজিক’৷ আসলে, জাদুর মতো নস্টালজিয়াকে যুগোপযোগী করে তোলাই এ ছবির প্রাণভোমরা৷
advertisement

পরতে, পরতে টানটান রহস্যের পারদকে সব সময় ঊর্ধ্বমুখী করে রাখার পাল্লায় এ ছবিকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে সপ্রতিভ আবহসঙ্গীত এবং গান৷ বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপে বাড়তি পাওনা নিখাদ রসবোধ৷ সম্পাদকের কাঁচি আরও একটু শানিত হলে ছবির দ্বিতীয়ার্ধের গতি কিছুটা বাড়ত৷ সেই খামতি মিলিয়ে গিয়েছে খলনায়কের ভূমিকায় গৌতম হালদারের অনবদ্য অভিনয়ে৷ চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি রতনলালের চরিত্রে প্রতীক দত্ত এবং তাসির ভূমিকায় শ্রুতি দাস৷ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরনো ছাপাখানার ফন্টের ব্যবহার চমৎকার৷ এই ফন্টেই ছাপা হত ছকভাঙা ফ্যান্টাসির গল্প৷
advertisement
স্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলে একদিকে যেমন পরিশীলিত সমাজকে কটাক্ষ করেছে অবিরত, তেমনই কুর্নিশ করতেও দ্বিধা করেনি৷ তারই ফলশ্রুতি চিত্রনাট্য জুড়ে মগজাস্ত্র, মুকুল, দুষ্টু লোক, সম্মোহন প্রিয় ডিটেকটিভ ফেলুদা, সাবাশ তোপসে, শয়তান বিজ্ঞানী-র মতো শব্দবন্ধের ছড়াছড়ি৷ তবে দীপক চ্যাটার্জির অভিযানের যবনিকা পতন ড্রয়িং রুমে হয় না৷ বরং আগুনের চক্রব্যূহে দাঁড়িয়ে সে শত্রুবিনাশ করে৷ স্বপনকুমারের ছাদবাগানে জল দিতে দিতে সোজা অকুস্থলে পৌঁছে যাওয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট রতনলাল সেই আগুন নেভায় ঝাঁঝরির জলে৷ তবে সব আগুন তো জলে নেভে না৷ ছবির শেষে তাসি এবং দীপককুমারের ঠোঁটের ব্যারিকেড ভেঙে দেয় হিমাংশু রাই এবং দেবিকারানি রোয়েরিকের অনস্ক্রিন দীর্ঘতম চুম্বনের সেই অমোঘ রেকর্ড৷ এ ছবিতে মাথায় হ্যাট, পরনে লং কোটের আবরণে দু’ হাত ছড়িয়ে দীপকরূপী আবীর অনেক ললনার হৃদয়ে নিঃসন্দেহে নতুন করে ঝড় তুলবেন৷ ছবির শেষে ঘোষণা, দীপক চ্যাটার্জি আবার ফিরবেন৷ ঠিক যেমন স্বপনকুমারের প্রতি বইয়ের শেষে থাকত নতুন অভিযানের নাম৷

অতঃপর, কোথা থেকে কী হইল অতশত না ভাবিয়া, লজিক ভুলিয়া ম্যাজিকের হাতছানিতে সম্মোহিত হতে আসুন বাদামী হায়নার কবলে৷ ঠকবেন না৷
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
January 12, 2024 4:40 PM IST