Surongo Review: পর্দায় যেন এক অন্য নিশো! বহু প্রতীক্ষিত 'সুড়ঙ্গ' কেমন হল? প্রত্যাশা পূরণ হল কি

Last Updated:

Surongo Review: পর্দায় মাসুদকে (আফরান নিশো অভিনীত চরিত্র) শ্রমজীবী শ্রেণীর একজন বলে ধরে নিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। বলাই বাহুল্য, এই চরিত্রের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ  ভেঙেচুড়ে নতুন ভাবে তৈরি করেছেন নিশো।

ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুঁইছুঁই। দক্ষিণ কলকাতার নামী মাল্টিপ্লেক্সে তখন উপচে পড়ছে ভিড়। এক কোণে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকাও দায়! শো শুরুর কিছু আগে নায়ক আফরান নিশোর প্রবেশ। তাঁকে দেখেই সমস্বর উল্লাসে ফেটে পড়ল চারদিক। নিশোর সঙ্গী তাঁর নায়িকা। তমা মির্জা। ওপার বাংলার দুই তারকাকে নিয়ে উত্তেজনা আকাশ ছুঁয়ে গেল। উদগ্রীব দর্শকের ঢল সামলাতে গিয়ে হিমসিম সিকিউরিটি গার্ড, উদ্যোক্তারা। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আলো নিভল হলের। এর পর সারা ছবি জুড়েই উল্লাসের বহর। হাসির কলরোল, হাততালি, সিটি- বাকি রইল না কোনও কিছুই। শোনা গেল ‘বস’ (নিশোকে তাঁর অনুরাগীদের দেওয়া আখ্যা) বলে গলা ফাটানো চিৎকার। বাংলাদেশে ব্যবসার নিরিখে টম ক্রুজের ‘মিশন ইম্পসিবল ৭’-কে ছাপিয়ে যাচ্ছে ‘সুড়ঙ্গ’। কিন্তু এ হেন উচ্ছ্বাস-উন্মাদনার কতটুকু প্রাপ্য এই ছবির?
‘পরান’, ‘দামাল’-এর মতো সফল কাজের পর ‘সুড়ঙ্গ’ তৈরি করেন পরিচালক রায়হান রাফি। ছবির পোস্টার থেকে টিজার, সব কিছুই ইঙ্গিত দিয়েছিল টানটান থ্রিলারের। অভিনয়ে তারকাখচিত একাধিক নাম। ছবির সংলাপ, সিনেমাটোগ্রাফি যে নজরকাড়া হবে, তা সংক্ষিপ্ত টিজারেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে সব চেয়ে বেশি ধাক্কা দেয় নায়কের লুক। এ বার গতে বাঁধা এলোমেলো প্রেমিক বা গোয়েন্দা না,  প্রথম ছবিতেই একেবারে অচেনা খোলসে প্রবেশ করেছেন আফরান নিশো। অতীতে পর্দায় এ ভাবে তাঁর আবির্ভাব হয়েছে বলে মনে পড়ে না। ছবির একটি পোস্টারে তাঁকে কোদাল হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। এক লহমায় যা মনে করায় অনুরাগ কশ্যপ পরিচালিত ‘রমন রাঘব ২.০’-র কথা। শীতল চাউনি হোক বা শরীরী ভাষা, নিশোর সঙ্গে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর মিল পাওয়া যায় বিস্তর। অল্লু অর্জুনের ‘পুষ্পা’-র সঙ্গেও এই ছবির সাদৃশ্য খুঁজেছেন অনেকে।
advertisement
‘শুনতে চাইলাম থ্রিলার আর তুই শোনাচ্ছিস ভালবাসার গল্প’! ‘সুড়ঙ্গ’ কেমন, তা বলতে গেলে সেই ছবিরই সংলাপ ধার করতে হয়। যত্ন নিয়ে লেখা গল্পে টানটান রহস্যের সঙ্গে মিশেছে প্রেম, প্রতিহিংসা, পাওয়া-না-পাওয়ার হিসেবনিকেশ। বেশ কিছু সংলাপ সূক্ষ্ণ রসবোধে জারিত। ২ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট জুড়ে মুগ্ধ হওয়ার মতো কিছু ফ্রেম পর্দায় ধরা পড়ে। গোটা ছবিতে একাধিক সিনেম্যাটিক সম্ভাবনা তৈরি করেছেন সুমন সরকার। বিশেষ করে মাটির নীচে সুড়ঙ্গ বেয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলিতে ক্যামেরার কাজকে পুরো নম্বর দিতেই হয়।
advertisement
advertisement
নন-লিনিয়ার শৈলীতে ‘সুড়ঙ্গ’র গল্প বলেছেন রাফি। পুরো ছবিজুড়ে চরিত্রদের অতীত এবং বর্তমানে অবাধ যাতায়াত। পর্দায় মাসুদকে (আফরান নিশো অভিনীত চরিত্র) শ্রমজীবী শ্রেণির একজন বলে ধরে নিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। বলাই বাহুল্য, এই চরিত্রের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ  ভেঙেচুড়ে নতুন ভাবে তৈরি করেছেন নিশো। কিছু দৃশ্যে তাঁর সংলাপ বলার ধরন বিস্ময় আর মুগ্ধতা, দুই-ই জাগায়। মাসুদের স্ত্রীর চরিত্রে তমা। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সুবিধাবাদী ময়নাকে অচিরেই জীবন্ত করে তুলেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী। পর্দায় ময়নার কর্মকাণ্ড দেখে এক সময়ে প্রবল বিরক্তির উদ্রেক হয়। আর মাসুদের জন্য থেকে যায় সহমর্মিতা। দুই চরিত্রের প্রতি দর্শকের অনুভূতির এই বৈপরীত্যই নিশো এবং তমার সাফল্যের দলিল। জহিরের চরিত্রে মোস্তাফা মনোয়ার অনবদ্য। ক্ষুরধার সংলাপ বা তাক লাগিয়ে দেওয়া দৃশ্য তাঁর ভাগে বিশেষ ছিল না বললেই চলে। কিন্তু পরিশীলিত অভিনয় দিয়ে তিনি নিজের জায়গা আদায় করে নিয়েছেন। গল্প কিছু দূর এগোতেই আসে আরও এক চরিত্র। তদন্তকারী আধিকারিকের ভূমিকায় শহিদুজ্জামান সেলিম নজরকাড়া। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য চাটগাঁইয়া টানে তাঁর সংলাপ বলার ধরন।
advertisement
আমাদের চারপাশে কিছু মানুষ থাকে, রোজ যাদের দেখলেও আলাদা করে ভাবার অবকাশ হয় না কখনও। এই ছবিতে মাসুদ তাদেরই প্রতিনিধি। স্ত্রী ময়না তার বেঁচে থাকার সম্বল। কিন্তু ময়না আর মাসুদের চাওয়া-পাওয়াগুলো যেন কখনওই এক রাস্তায় হাঁটেনি। বরাবরই তারা বিপরীতমুখী। ময়নার উচ্চাকাঙ্ক্ষাই ক্রমশ অপরাধের দিকে ঠেলে দেয় মাসুদকে। ছবির প্রথমার্ধ জুড়ে ছিল শুধুই তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন। আর তার মধ্যে দিয়েই দর্শককে একটু একটু করে মূল ঘটনার জন্য প্রস্তুত করেছেন পরিচালক। বস্তুত, এই ‘বিল্ড আপ’ এক কথায় বেশ বুদ্ধিদীপ্ত।
advertisement
প্রেম-বিচ্ছেদের মন্তাজ পেরিয়ে হলদেটে আলোয় মোড়া সুড়ঙ্গের ভিতরে নিশোর টুকরো সব ক্লোজ আপ, ছবি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চমকে দেওয়ার মতো উপাদান। তবে এ ধরনের গল্পে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নায়িকারা নিছক ‘ড্যামজেল ইন ডিস্ট্রেস’ বা শোভাবর্ধনকারী ‘টুল’ হিসাবে থেকে যান। ‘সুড়ঙ্গ’ কিন্তু ব্যতিক্রম। সেখানে ময়নার লোভ আর উচ্চাকাঙ্ক্ষাই গল্পের চালিকাশক্তি।
advertisement
ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলতে চেয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু করে মাসুদ। পর্দায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে ব্যাঙ্কের ভল্টে পোঁছে যাওয়ার দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় তানিম নূর এবং কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘মানি হানি’র কথা। দুইয়ের সেট ডিজাইনিংয়ের সাদৃশ্য অবাক করে দেওয়ার মতো। তবে ‘সুড়ঙ্গ’ বড় বাজেট নিয়ে তৈরি। সে ক্ষেত্রে ডিটেলিংয়ে যত্ন চোখে পড়ে।
advertisement
‘সুড়ঙ্গ’-র শেষে তার নামকরণের সার্থকতা লুকিয়ে। তবে সেই ‘শেষ’ কতটা যুক্তিযুক্ত বা গ্রহণযোগ্য, এ ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি ব্যক্তিগত মূল্যবোধের উপর নির্ভরশীল। কিছু জায়গায় সম্পাদনায় খামতিও চোখে পড়ে। তবে ‘সুড়ঙ্গ’ যত্ন নিয়ে বোনা একটি কিস্সা। যা ঠিক-ভুলের ঊর্ধ্বে গিয়ে আবেগের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। যে আবেগের যুক্তি নেই। নেই কোনও সামাজিক বা রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করার দায়। তাই আতসকাচের তলায় ফেলে সেই আবেগের কাটাছেঁড়া না করাই ভাল। নিখাদ বিনোদন এবং ভাল অভিনয়ই ‘সুড়ঙ্গ’-র গুপ্তধন।
Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
Surongo Review: পর্দায় যেন এক অন্য নিশো! বহু প্রতীক্ষিত 'সুড়ঙ্গ' কেমন হল? প্রত্যাশা পূরণ হল কি
Next Article
advertisement
Lionel Messi Team India Jersey: ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে মেসি ! এক ফ্রেমে দেখা গেল মেসি, কুলদীপ, রেণুকাদের
ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে মেসি ! এক ফ্রেমে দেখা গেল মেসি, কুলদীপ, রেণুকাদের
  • ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে মেসি

  • এক ফ্রেমে দেখা গেল মেসি, কুলদীপ, রেণুকাদের

  • দুর্দান্ত অনুষ্ঠান

VIEW MORE
advertisement
advertisement