Rocky Aur Rani Kii Prem Kahaani Review : রানির রাজত্বে ফিকে আলিয়া, চেনা লিঙ্গকাঠামোকে তুড়ি টোটা-রণবীরের! বার্তার চোটে প্রেম কম পড়িল জোহরে
- Published by:Teesta Barman
- news18 bangla
Last Updated:
Rocky Aur Rani Kii Prem Kahaani Review : প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন করণ। ‘খেলা হবে’। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে প্রেক্ষাগৃহ কাঁপিয়ে খেলা হল বটে। জিতল ভালবাসা। হারল বিভেদ, হারল পিতৃতন্ত্র। নিজেকে ভেঙে চুরমার করে কামব্যাক করলেন করণ জোহর।
‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’- এক চিমটে প্রেম, দেড় চামচ নারীবাদ, তিন চামচ কৌতুক রস, পাঁচ হাতা নাটকীয়তা, এক বালতি সামাজিক বার্তা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন করণ। ‘খেলা হবে’। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে প্রেক্ষাগৃহ কাঁপিয়ে খেলা হল বটে। জিতল ভালবাসা। হারল বিভেদ, হারল পিতৃতন্ত্র। নিজেকে ভেঙে চুরমার করে কামব্যাক করলেন করণ জোহর। কিন্তু যাই হোক না কেন, মশলাদার বলিউড ছবি। তাই নারীবাদের চর্চাটা বড়ই প্রাথমিক স্তরে। তাও বলতেই হয়, ‘পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট’-এর তকমা মুছতে পরিচালকের প্রয়াস সত্যিই মুগ্ধ করবে। কিন্তু করণ-স্পেশ্যাল বুক দুরুদুরু করা প্রেম কম পড়িয়া গেল।
ছবির নামে ‘প্রেম কাহানি’ থাকতেই পারে, কিন্তু প্রেম তো নেই। দুই পরিবারের সাংস্কৃতিক দূরত্ব মেটানো এবং হাসির মোড়কে সামাজিক বার্তা দেওয়াই কখন যেন আসল উদ্দেশ্য হয়ে গেল। যার ফলে খানিক মনে হতে পারে, জোহর যেন বড্ড বেশি জ্ঞান দিয়ে ফেলেছেন। দু’টি জুটি, দুইয়ের মিলন-বিচ্ছেদের গল্প। কিন্তু তাতেও শাহরুখ-কাজলের রসায়নের কথা মনে পড়ে যাবে বারবার।
advertisement
advertisement
দুই পরিবার। বাঙালি ও পঞ্জাবি। একদিকে শাবানা আজমি, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী এবং আলিয়া ভাটের পরিবার। উচ্চশিক্ষিত, মার্জিত, সাংস্কৃতিক এবং জাজমেন্টাল পরিবার। অন্যদিকে জয়া বচ্চন, আমির বশির, অঞ্জলি আনন্দ, ক্ষীতি যোগ এবং রণবীর সিংয়ের পরিবার। পুরুষতান্ত্রিক, ব্যবসায়ী মনোভাবপূর্ণ, অমার্জিত, রক্ষণশীল পরিবার। শিক্ষা নিয়ে যাদের মাথাব্যথা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু পরিবারের মেয়ের বিয়ে না হলে বাড়ি মাথায় করতেই পারে। ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’-র মতোই প্রেক্ষাপট। প্রেমের জন্য পরিবারে, পরম্পরার মুখোমুখি দাঁড়ানো। কিন্তু প্রেম কই? কখন যে রকি-রানির প্রেম কাহানি থেকে বাংলা-পঞ্জাবের লড়াই ও সামাজিক বার্তার পঠন শুরু হল, কে জানে।
advertisement
তবে সামাজিক বার্তা দেওয়ার দু’টি দৃশ্যে বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করবেন। একটির বাহক চূর্ণী, অপরটির টোটা। হবু জামাই রণবীরের সঙ্গে অন্তর্বাস কিনতে যাওয়া, এবং সেখানে লিঙ্গ বৈষম্য ও নারীদেহ, নারী পোশাক সম্পর্কিত ছুৎমার্গ নিয়ে চূর্ণীর মনোলোগ মন ছুঁয়ে যায়। অন্যদিকে ‘ঢিনঢোরা বাজে রে’ গানের আগে টোটা-কীর্তি। দুর্গামণ্ডপে দুই পুরুষ অভিনেতার নৃত্যে যুগলবন্দি। এক পঞ্জাবি ‘মুন্ডা’র (রণবীর) প্রবল পৌরুষকে এক ঝটকায় টেনে নামিয়ে দেয় টোটার চরিত্র। ‘হোয়াট ঝুমকা’-তেও নাচতে দেখা যায় রণবীরকে। কিন্তু এই দুই নাচের মধ্যে যে এক আকাশ ফারাক, তাতে আপনার কোনও সন্দেহ থাকবে না। যে গানে নারীদের দখল ছিল এতদিন, সেই গানে ‘মেয়েদের নাচ’ করলেন দুই পুরুষ। টোটা-রণবীরের যুগলবন্দি দেখে টোটার পরে আপনিও বলে উঠবেন, ‘শিল্পের কোনও লিঙ্গ হয় না।’ চেনা লিঙ্গকাঠামো ভেঙে মুগ্ধ করলেন টোটা। এছাড়া অনেকেই চমকে উঠবেন টোটার নৃত্যদক্ষতায়। তিন ঘণ্টার ছবির সারমর্ম ফুটে উঠল ওই একটি নাচের দৃশ্যে। বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করার আরও একটি কারণ তৈরি হতে পারে টোটা-চূর্ণীর অভিনয়। খুবই সাবলীল ভাবে রানির বাবা-মা হতে পেরেছেন দুই বাঙালি।
advertisement
তবে সাউথ দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা বাঙালি পরিবারের ভাষা যে খানিক আরোপিত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। একই বাক্যের মধ্যে দু’টি শব্দ বাংলা, দু’টি শব্দ হিন্দি, দু’টি শব্দ ইংরেজি। ভাষার মিশ্রণ তো থাকবেই, কিন্তু তা প্রেক্ষাগৃহে হাস্যরস জোগাচ্ছে মানেই প্রয়াসের পরিমাণ বেশি হয়ে গিয়েছে। আলিয়া, শাবানা ও নমিত দাসের বাংলা উচ্চারণ আরও ভাল হতে পারত।
advertisement

পুরনো দিনের গানের সঙ্গে শাবানা-ধর্মেন্দ্রর জুটি প্রেম মন্দ নয়। কিন্তু জয়া বচ্চনের অভিনয় যেন এই তিন ঘণ্টায় আসল পাওনা। খেলা, ঘোমটার দাপট, অভিনেত্রীসুলভ লালিত্যকে তুড়ি মেরে সরিয়ে শুধুমাত্র ভ্রু-জোড়ার কেরামতিতেই ধরাশায়ী করেছেন তিনি। তবে জয়ার চরিত্রের সঙ্গে বিচার হয়নি। একতা কাপুরের হিন্দি মেগার ধাঁচে তৈরি এই খলচরিত্রের প্রেক্ষাপটের বিষয়ে দর্শক একেবারেই অন্ধকারে। জয়া অভিনীত চরিত্র ধনলক্ষ্মী কেন এতটা নিষ্ঠুর, তা একবারও স্পষ্ট হল না।
advertisement
অন্যদিকে রানি ছাড়া সব চরিত্রের একটি সুস্পষ্ট যাত্রাপথ রয়েছে। তাঁদের চরিত্রে হাজারও ত্রুটি, খুঁত নিয়ে তাদের গমন। সেখান থেকে উত্তরণের পথও রয়েছে। রানি সেই সকলেরই রক্ষক ও শিক্ষক। ফলে এত নিখুঁত চরিত্র পেয়ে আলিয়া সেভাবে খেলতে পারেননি। তাঁর বাংলা উচ্চারণও কানে লেগেছে বারবার। ফলে বাঙালি হিসেবে আলিয়াকে মেনে নিতে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে।
advertisement
এর আগে ‘বম্বে টকিজ’, ‘লাস্ট স্টোরিজ’ ও ‘ঘোস্ট স্টোরিজ’-এ করণ নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করেছেন। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু বড়পর্দায় এই প্রথম। তা ছাড়া এই ছবি তাঁর ‘প্রথম অনেক কিছু’। ছবির শেষে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তবে কি বলিউডের এককালীন সুপারস্টারদের ছাড়াই তিনি ছবি বানানোর ভরসা পেলেন? তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী ছবির। দেখতে হবে, সেখানেও কি ক্যামিও-তে দেখা দিলেন না শাহরুখ খান বা কাজল বা রানি মুখোপাধ্যায়? হলে সিটি পড়ার মতো মুহূর্ত তৈরি না করতে চাওয়ার কারণ খুঁজতে চাইবেন আপনিও।
প্রীতমের সঙ্গীত এবং আবহ বেশ মানানসই। সঙ্গী হয়েছে পুরনো দিনের গান ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কিছু কলি। এডিটিং নিয়ে আপনার বক্তব্য তৈরি হতে পারে। ১৬৮ মিনিটের জায়গায় আরও কিছুটা কম সময়ে এই ছবি তৈরি করা যেত। তার জন্য নিষ্ঠুরের মতো কিছু জায়গায় কাঁচি চালালে হত। আর ক্যামেরার কাজ ভাল। মোটের উপর, করণ জোহর এবং বলিউড প্রেমী হলে তো এই ছবি আপনার বাকেট লিস্টে রাখতেই হবে। আর যদি না হন, তাও একবার প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে বড়পর্দায় তাবড় তাবড় তারকাদের অভিনয়, বাঙালি বনাম পঞ্জাবি গাথা দেখলে আপনার মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, নিজেকে ভাঙতে গিয়ে হারিয়ে ফেললেন কি করণ?
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
July 29, 2023 12:21 PM IST