হোম /খবর /বিনোদন /
'অনির্বাণ জানেন থিয়েটারের অভিনেতারা কতটা ভার্সেটাইল', অকপট সাক্ষাৎকারে দেবাশিস

Exclusive Interview | Mandar : 'অনির্বাণ জানেন, থিয়েটারের অভিনেতারা কত‌টা ভার্সেটাইল হন', দেবাশিসের কথায় উঠে এল মন্দার হয়ে ওঠার গল্প

মন্দার চরিত্রে দেবাশিস

মন্দার চরিত্রে দেবাশিস

Exclusive Interview | Mandar : অনির্বাণের পরিচালনায় ম্যাকবেথ হয়ে উঠেছে 'মন্দার'। আর হইচই-এর ওয়েবসিরিজে মন্দার চরিত্রে ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে অভিনেতা দেবাশিস মণ্ডল।

  • Last Updated :
  • Share this:

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক ম্যাকবেথকে নতুন গল্পে গেঁথেছেন পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য। বছরের পর বছর ধরে এই নাটকের নবনির্মাণ হয়েছে। কখনও বিশাল ভরদ্বাজের 'মকবুল'। কখনও আকিরা কুরোসাওয়ার 'থ্রোন অফ ব্লাড'। অনির্বাণের পরিচালনায় ম্যাকবেথ হয়ে উঠেছে 'মন্দার'। আর হইচই-এর ওয়েবসিরিজে মন্দার চরিত্রে ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে অভিনেতা দেবাশিস মণ্ডলনিউজ ১৮ বাংলার একান্ত সাক্ষাৎকারে 'মন্দার' হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা শোনালেন অভিনেতা।

প্রশ্ন: মন্দার নাকি দেবাশিস - মানুষ কোন নামে বেশি ডাকছে?

দেবাশিস: দুটোই ডাকছে। আমি দেবাশিসটাই বেশি প্রেফার করব। কিন্তু মন্দার চরিত্রে অভিনয় করার ফলে মানুষ তাকেই বেশি কাছ থেকে চেনেন। তাই দু‌টো নামেই ডাকছে মানুষ।

প্রশ্ন: ম্যাকবেথ হয়েছে 'মন্দার'। দেবাশিসের মন্দার হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে?

দেবাশিস: খুব বেশি পরিশ্রম বলব না। একজন অভিনেতার চরিত্র হয়ে উঠতে যেটুকু দরকার হয় সেটুকুই করেছি। আলাদা ডায়লেক্ট ছিল। সেটার জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। ম্যাকবেথ চরিত্রটা যেহেতু একটু কমপ্লেক্স। আর মন্দারকে যেভাবে সাজানো হয়েছে, সেই চরিত্রের কমপ্লেক্সিটিটাকে ধরার জন্য মানসিক একটা প্রস্তুতি ছিল। সেটা কষ্ট নয়। আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। অভিনেতা হিসেবে সেই চ্যালেঞ্জটা পছন্দ করি এবং উপভোগও করি।

প্রশ্ন: পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা উপকূলের ডায়ালেক্টে ঝরঝর করে বলেছেন। এই টান রপ্ত করা কি খুব সহজ ছিল?

দেবাশিস: আমায় ফাইনাল ড্রাফট দেওয়া হয় কাজ শুরু হওয়ার একমাস আগে। তার পর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করি। আমি চেয়েছিলাম, পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষ একেবারে যেভাবে কথা বলেন, সেভাবেই করতে। বাঙালি দর্শকের বোধগম্য হওয়ার কথা মাথায় রেখে, পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অতটা পরিমাণে এই ডায়ালেক্ট রাখা হবে না। এক মাস সময় ছিল চরিত্র, ডায়ালেক্ট, স্ক্রিপ্টের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।

প্রশ্ন: 'মন্দার'-এ কাজের সুযোগ কী ভাবে এল?

দেবাশিস: অনির্বাণ আমার অনেকদিনের বন্ধু থিয়েটারের সূত্রে। ও আমার কাজ আগে দেখেছে। আমরা একে অপরকে জানি। ওই একদিন ফোন করে আমায় বলে, "ম্যাকবেথের একটি অ্যাডাপ্টেশন নিয়ে আমরা একটা ওয়েবসিরিজ করছি। তার মুখ্য চরিত্রে তোকে ভাবা হয়েছে। অনেক আগেই ভেবে রেখেছি। এখন তোকে বলছি।" স্ক্রিপ্ট পড়ার পরে কোনও প্রশ্নই ছিল না। খুব পছন্দ হয় স্ক্রিপ্ট। একজন অভিনেতা অনেকদিন থেকে এমন একটি স্ক্রিপ্টের অপেক্ষায় থাকেন। তাই একবারে পড়েই হ্যাঁ করে দিয়েছি।

প্রশ্ন: গোটা ওয়েবসিরিজটায় প্রায় প্রত্যেকেরই মূল ব্যাকগ্রাউন্ড থিয়েটার। পরিচালক অনির্বাণ বলেই কি এমন কাস্ট তৈরি হল?

দেবাশিস: অনির্বাণের শুরুটা থিয়েটার দিয়ে। তাই ওর বেশিরভাগ সময়টা থিয়েটারে কেটেছে। অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে। অনির্বাণ যা বলেছে, এই স্ক্রিপ্টের সঙ্গে সুবিচার করার জন্য অভিনেতাই দরকার ছিল। ও জানে থিয়েটারের অভিনেতারা কত বেশি ভার্সাটাইল হন, কতটা ফ্লেক্সিবল হয় যার ফলে যে কোনও চরিত্রে তুলে ধরা যায়, সেটা একটা কারণ হতে পারে।

প্রশ্ন: আকিরা কুরোসাওয়ার 'থ্রোন অফ ব্লাড' বা বিশাল ভরদ্বাজের 'মকবুল'। এছাড়াও মঞ্চে ম্যাকবেথের চরিত্রে বিশ্বের বহু অভিনেতা কাজ করেছেন। মন্দার-এ অভিনয়ের কার কাজ ভিতর থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে বা অনুপ্রাণিত করেছে?

দেবাশিস: ম্যাকবেথের চরিত্রে অনেককেই দেখেছি। লরেন্স অলিভিয়ের থেকে ইরফান খান। সব অভিনেতারই নিজস্ব কিছু গুণ থাকে। তাঁরা তাঁদের মতো করে চরিত্রকে নির্মাণ করেন। শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ-এর অবিকল প্রেজেন্টেশন কম হয়েছে। অধিকাংশই অ্যাডাপ্টেশন হয়েছে। পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি থাকার ফলেই এই অ্যাডাপ্টেশনগুলি আরও আকর্ষণীয়। তাই সবাই তাঁদের মতো করে অনুপ্রাণিত করেছেন আমায়।

প্রশ্ন: সোহিনীর সঙ্গে বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ছিল। সেগুলিতে অভিনয় করার সময়ে জড়তা ছিল? কতটা সহজ ছিল?

দেবাশিস: জড়তা সেভাবে কাজ করেনি। সহজ ছিল, কারণ সোহিনীও সহজ। তাই ও অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। আমরা দুজনেই চরিত্র ও স্ক্রিপ্টের সঙ্গে সুবিচার করার দিকেই মন দিয়েছিলাম। তাই সেই অর্থে জড়তা কারও মধ্যেই ছিল না।

প্রশ্ন: মন্দার চরিত্রের সঙ্গে দেবাশিসের কী কী মিল ও অমিল রয়েছে?

দেবাশিস: আমাদের সবার মধ্যেই এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি আছে। চারশো বছর পুরনো এই নাটকে এমন কতগুলি এলিমেন্ট রয়েছে যেগুলি মানুষের মধ্যেই আছে। সেই জন্যই এত পরিচালক এই চরিত্র নিয়ে এত কাঁটাছেড়া করেছেন। তাই বেশ কিছু এলিমেন্টের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছি, যেমন আকাঙ্ক্ষা, লোভ, অধিকারের লড়াই, ক্ষমতার লড়াই -এইগুলি সকলের জীবনেই কখনও না কখনও আসে। সেগুলি তো ছিলই। তবে মৎস্যজীবীর চরিত্রে এর আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই এটি নিয়ে আমায় কাজ করতে হয়েছে। মৎস্যজীবীদের জীবনযাপন, এই জায়গার মানুষের ভাবনা চিন্তা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। কিছু মিল তো ছিলই! আর যে মিল ছিল না তা খুঁজে বের করে কাজ করেছি।

প্রশ্ন: এতদিন মঞ্চে অভিনয় করেছেন। এবার স্ক্রিনে কাজ করে স্পটলাইটে। খ্যাতি আসছে, প্রশংসা পাচ্ছেন মানুষের থেকে। কীভাবে উপভোগ করছেন?

দেবাশিস: ভালো লাগছে। দর্শকের ভালো লাগছে কারণ হয়তো আমরা যা বলতে চেয়েছি তার জন্য অনেক মেহনত করেছি। মন্দার-এ যাঁরা অভিনয় করেছেন প্রত্যেকেরই একটা জার্নি আছে। একবছরের জার্নি, পরিশ্রম তাঁদের কাছে পৌঁছেছে। তাঁদের ভালো লেগেছে। সেটা ভালো লাগছে। প্রত্যেকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, আমার আরও কাজ দেখতে চাইছেন। অনেকেই বলছেন, ভেবেচিন্তে চরিত্র বাছবেন। আপনার থেকে আশা অনেক বেড়ে গিয়েছে। সেগুলি সবই শুনছি, মাথায় আছে। সেই মতো আরও ভালো কাজ করার চেষ্টা করব। তবে এমন একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে অনেকটা সময় ও যত্ন লাগে। বারবার হয়তো এমন স্ক্রিপ্ট না-ও আসতে পারে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। তবে অবশ্যই আরও ভালো এবং নিজের সেরা কাজটা দেওয়ার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন: দর্শকদের কথায়, পরিচালক হিসেবে প্রথম ছবিতেই ছক্কা হাঁকিয়েছেন অনির্বাণ। আপনিও প্রথম সিরিজেই মুগ্ধ করেছেন। পরিচালক আপনার বন্ধু এবং তিনিও আপনার অভিনয়ে মুগ্ধ। আগামীতে একসঙ্গে কোনও কাজের কথা হয়েছে?

দেবাশিস: পরিকল্পনা এখনও কিছু ও জানায়নি। ও জানালে নিশ্চয়ই জানাব। আর আমার খুবই ভালো লাগবে, বন্ধুর সঙ্গে কাজ করতে। এবং আমরা সকলেই জানি অনির্বাণ কতটা মন ও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। সেই জন্যই আমরা এত ভালোবাসি। ওর সঙ্গে কাজ করার অবশ্যই ইচ্ছে আছে। ওর সব প্রজেক্টেই অংশ হওয়ার প্রবল ইচ্ছে। এছাড়াও আরও বহু পরিচালক যাঁরা তাঁদের কাজ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন তাঁদের সঙ্গেও কাজ করার ইচ্ছে আছে। তবে কেউই এখনও অফিশিয়ালি জানাননি। জানালে নিশ্চয়ই জানাব।

প্রশ্ন: অফিশিয়ালি না জানালেও আপনার কাজ দেখে ইন্ডাস্ট্রির কোন কোন পরিচালকদের থেকে ফোন এল?

দেবাশিস: তাঁদের এই মুহূর্তে নাম নিচ্ছি না। কারণ এখনও অফিশিয়াল হয়নি। অনেকেই গল্প শুনিয়েছেন। স্ক্রিপ্ট শুনিয়েছেন। আমিও পড়ছি। কথাবার্তা চলছে। যেটা ভালো লাগবে সেটা করব। অফিশিয়াল হয়ে গেলে নাম নিয়ে বলতে পারব।

প্রশ্ন: আর আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, টলিউডের কোন পরিচালকদের সঙ্গে আগামীতে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে?

দেবাশিস: লিস্টটা অনেক বড়। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই ভালো কাজ করছেন। সবাই জানেন ভালো যাঁরা কাজ করছেন যেমন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আরও অনেকে। তাঁদের কোনও কোনও কাজ বা চরিত্র আমায় ইনস্পায়ার করেছে। সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করব। মন্দার দেখে আমায় নিয়ে তাঁরা কোনও চরিত্রে ভাববেন বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন- দানবের মতো অভিনেতা দেবাশিস! 'মন্দার'-এর প্রশংসায় মাতলেন পরিচালক অনির্বাণ

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে কি বলিউডে কাজ করার ইচ্ছে আছে?

দেবাশিস: ২০০৮ এ বাংলা থেকে দিল্লিতে চলে আসি। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে পাশ করার পরে দিল্লি, বম্বেতে কাজ করছি। যাতায়াত আছে। ২০১৭-য় 'ফ্যামিলি ম্যান' সিজন ওয়ানে কাজ করেছি। মন্দার দেখার পরে মুম্বই থেকে একটি চরিত্রে আমায় ভেবেছে। ভাষা নিয়ে আমার বেরিয়ার নেই। বাংলা আমার মাতৃভাষা। এছাড়া উর্দু, ইংরেজিতেও কাজ করেছি। এমন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করার ইচ্ছে আছে।

প্রশ্ন: দর্শকরা আপনার কাজ পছন্দ করেছেন এই চরিত্রে। কী বলবেন তাঁদের উদ্দেশে?

দেবাশিস: অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ভালো কাজ করার। এমন স্ক্রিপ্ট সচরাচর পাওয়া যায় না। এই স্ক্রিপ্টে শুধু মন্দার নয়। অন্য চরিত্রের সঙ্গেও আমি কানেক্ট করতে পেরেছি। তাই আমায় হয়তো মন্দার ছাডা় অন্য চরিত্র দিলেও রাজি হয়ে যেতাম। এত যত্ন নিয়ে প্রতীক ও অনির্বাণ স্ক্রিপ্ট লিখেছে। বন্ধুর হাত ধরে এত সুন্দর একটা চরিত্রে কাজ করার ইচ্ছে পূর্ণ হল। শিল্পী হিসেবে এটা প্রাপ্তি। দিল্লিতে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা-র বহু বন্ধুরা আমার সাফল্যেই নিজেদের সফল মনে করছেন। ওদেরও অনেকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান। তাঁদেরকেও যদি অ্যাপ্রোচ করা হয় নতুন ট্যালেন্ট দেখতে পাবেন দর্শকরা।

Published by:Swaralipi Dasgupta
First published:

Tags: EXclusive Interview