Ethos of Darkness : দীর্ঘ প্রহর অন্ধকারে বিষাক্ত রাসায়নিকের সঙ্গে সহবাস করা সেই কারিগরদের খোঁজ দিতে পারবে না গুগলও
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
Last Updated:
Ethos of Darkness : ছবি মুক্তি পেত একটা অন্ধকার ঘরে। ডার্করুম। এখানে কাজ করত কেমিস্ট্রি।
কলকাতা : লাইট, সাউন্ড, ক্যামেরা, অ্যাকশন। হাজার আলোর রোশনাইয়ে লেন্সের সামনে নায়ক-নায়িকা, লেন্সের পিছনে ডিরেক্টর। শুটিং চলছে। কিছুটা অংশ ক্যামেরাবন্দি হতেই কাট। নায়ক-নায়িকা চলে গেলেন ঠান্ডা ঘরে। পরিচালক চোখ রাখলেন মনিটরে, দেখে নিচ্ছেন টেকটা ঠিক হল কিনা। এটা হল রাশ। এই রাশ অত্যাধুনিক যন্ত্রে এডিট হয়ে সিনেমা তৈরি হবে। এ ভাবেই আমাদের বিনোদনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম চলচ্চিত্রের কাজ হয়। এটা এখনকার ছবি। আজ থেকে পনেরো-কুড়ি বছর আগের চিত্রটা ছিল অন্যকরম। (Ethos of Darkness)
সে সময়টা ছিল সাদা-কালোর। নেগেটিভ-পজিটিভের । কী হত তখন, জানালেন পরিচালক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘প্রথমে র-ফিল্ম কেনা হত। তার পর তাতে ফিজিক্সের সাহায্যে, মানে ক্যামেরা, লাইট নানারকম মোশনস দিয়ে ছবি তৈরি করা হত। এই ফিল্মের ভিতর ছবিটা লুকিয়ে থাকত। ছবি মুক্তি পেত একটা অন্ধকার ঘরে। ডার্করুম। এখানে কাজ করত কেমিস্ট্রি। ডার্করুমে কয়েক জনের পারদর্শিতায় ফিল্মের কেমিক্যাল ওয়াশ হত। পাওয়া যেত নেগেটিভ। সেই সময় একটা ছবির একটাই নেগেটিভ থাকত। কোনওভাবে নেগিটিভ ডেভলপের সময় কোনও ভুল হলে সেই ছবির আর পর্দায় আসা হত না। ছবির থেকেও আরও জটিল ছিল অডিও কাজ। এই অডিও প্রিন্ট হত। প্রথমে সাউন্ড নেওয়া হত একটা ম্যাগনেটিক টেপের উপর, তার পর তাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লাইটের মাধ্যমে এক্সপোজ করা হত ফিল্মের ওপর। এই ফিল্মকে ডেভেলপ করে পাওয়া যেত সাউন্ড নেগেটিভ। এই নেগেটিভকে ডেভলপ করে সাউন্ড পজিটিভ পাওয়া যেত। একে ম্যারেড প্রিন্ট করা হত। ফিল্মের পাশে একটা ট্র্যাক থাকত, ওই প্রিন্টকে লেসারের মাধ্যমে ডিকোডেড করা হত সিনেমা হলের প্রোজেক্টরে। তখন দর্শক ছবির সঙ্গে সাউন্ড শুনতে পেতেন। ‘গোল্ডেন পিরিয়ড অফ ইন্ডিয়ান ফিল্ম’ বলতে যে সময়টাকে বোঝায় সেই সময়ে এভাবেই ছবির কাজ হত। ভাবুন এই কাজ করতে গিয়ে সামান্য ভুল হলে আজ আমরা প্রিয় শিল্পীদের গান হারিয়ে ফেলতাম।’’
advertisement
আরও পড়ুন : সূর্যরশ্মির সুগুণে জারিত জলেই উপশম! কী এই সূর্য জল চিকিৎসা?
ডার্করুমের আলো এখানেই। কয়েক জন মানুষ অন্ধকারে থেকে আলোর পথ তৈরি করতেন। তখন প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। শুধু মাত্র চোখে দেখে তারা বুঝে নিতেন সাউন্ড ঠিক আছে না ভুল। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই পুরুষ কণ্ঠ মহিলাদের মত শোনাতে পারত বা মহিলা কণ্ঠ পুরুষদের মত হয়ে যেত। এই ভুল ঠিক করার কোনও উপায় থাকত না। যে মানুষগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্ধকার ঘরে বিষাক্ত রাসায়নিকের সঙ্গে সহবাস করে নেগেটিভকে পজিটিভ রূপ দিতেন, গুগলও তাদের খোঁজ দিতে পারবে না। এমনকী ছবির টাইটেল কার্ডে কোথাও এদের নাম থাকত না। চ্যাপলিন, হিচককের ছবি ডেভেলপাররের নাম কেউ জানেন না। কোথাও যেন অন্যায় হয়েছে এদের সঙ্গে, সময় হয়েছে এই ভুল শুধরে নিয়ে ওঁদের স্বীকৃতি দেওয়া। এমনটাই মনে করেন পরিচলক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহ-পরিচালক দেবযানী হালদার। ‘এথোস অফ ডার্কনেস’ এঁদের কথা বলবে।
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন : এনগেজড দুই তরুণী এবং এক তরুণ! ত্রিমূর্তির জুটি হিসেবে বিয়ে করছেন একে অপরকে
একটা অন্ধকার বদ্ধ ঘরে টানা বারো ঘণ্টা , ঝাঁঝাঁলো ক্লোরিন গ্যাসের মধ্যে দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে থেকে কাজ করতে হত। এখানে সামান্য আলোর প্রবেশাধিকারও নিষিদ্ধ ছিল। এই পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে এঁদের শারীরিক অবস্থার পরিণাম হয়েছে মারাত্মক। এরা ভাল করে শ্বাস নিতে পারে না। কারণ বুকে জমে রয়েছে ক্লোরিন, সায়ানোজেন গ্যাস। পরিচালক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে হয়েছিল কুড়ি-তিরিশ বছরের সিনেমার ইতিহাস এখনও বেঁচে আছে যাঁদের জন্য, এ বার সময় হয়েছে তাঁদের কথা বলার। ৫৮ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এই তথ্যচিত্রে রয়েছে রয়েছে স্বপন নন্দী, শীতল চট্টোপাধ্যায়ের কথা। এইটিআইআই-তে এখনও ডেভেলপারের কাজ করেন মুত্থু। সকলেই অন্ধকারে বিষাক্ত পরিবেশে কীভাবে কাজ করতেন শুনিয়েছেন সেই কাহিনি। এই তথ্যচিত্রে ধরম গুলাটি, অনুপ চেতওয়ানি, গোবিন্দ নিহালনি, গৌতম ঘোষ তাঁদের সেই বক্তব্য মেনে নিয়েছেন যে ডার্করুমের সৃষ্টিকর্তাদের প্রতি সত্যিই অবিচার হয়েছে। ‘এথোস অফ ডার্কনেস’ এক কথায় অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার কাহিনি যা নন্দন হয়ে পাড়ি দিচ্ছে কোচির সাইন ফেস্টিভ্যালে।
advertisement
( প্রতিবেদন : শ্য়ামশ্রী সাহা)
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
March 29, 2022 9:14 PM IST