''কী বলব, কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না।"
চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়৷ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ভাগ করে নিয়েছেন আলোর দিনগুলোর কথা৷ "আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগে আমার ল্যান্ডলাইনটা বেজে উঠেছিল আর ওপাশ থেকে একজনের গলা- 'আমি তরুণ মজুমদার বলছি। আমার অফিসে একবার আসতে পারবেন?' গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয়নি ১ মিনিট। যেদিন আলো সাইন করেছিলাম সেদিন চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি, ওঁর ছবিতে কাজ করা মানে অনেক কিছু পাওয়া। সত্যি তো তাই। বকুনি খেয়েছি, ভালবাসা পেয়েছি ঢের। আলো ছবির স্ক্রিপ্টের এক অংশ আমার কাছে আছে যা সারা জীবনের সংগ্রহ হয়ে রইল। মনে আছে বিজলীতে আলো মুক্তি পাওয়ার ঠিক আগে আমাদের বলেছিলেন, 'এই যুগে আমার এই ছবি কি কেউ দেখবে?' মুক্তি পাওয়ার পর যা হল তা ইতিহাস। নতুন প্রজন্মও ওঁর হাত ধরে বলত, 'কেন এত কাঁদালেন?' ভাল থাকবেন জ্যেঠু।"
আরও পড়ুন: যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন...
মনে পড়ে গেল আদরের কাঙাল সেই নরম মেয়েটির গল্প৷ যাকে দেখে ভুরু কুঁচকে ছিল সবাই৷ আর যে সবাইকে দিয়েছিল আঁজলা ভরা ভালবাসা৷ দিনের শেষে যে বিশ্বাস করেছিল একটাই কথা, "আমরা ফুরায়ে যাই, প্রেম তুমি হয়ো না আহত৷" বিভূতিভূষণ কিন্নরদলে লিখেছিলেন, "গরিব বলেই এরা বেশি কুচুটে ও হিংসুক, কেউ কারও ভাল দেখতে পারে না বা কেউ কাউকে বিশ্বাসও করে না।" অথচ এই 'গরিব' আর 'কুচুটে' মানুষগুলোই কী নিবিড় ভালবেসে ফেলেছিল তাকে৷ "শান্তি একটা গন্ধরাজ আর টগরের মালা গেঁথে এনেছিল বৌদিদিকে পরাবে বলে—গান গাইবার সময়ে সে আবার সেটা বৌয়ের গলায় আলগোছে পরিয়ে দিল—সেই জ্যোৎস্নায় সাদা সুগন্ধি ফুলের মালা গলায় রূপসী বৌয়ের মুখে ভজন শুনতে শুনতে মন্টুর মায়ের মনে হলো এই মেয়েটিই সেই মীরাবাই, অনেককাল পরে পৃথিবীতে আবার নেমে এসেছে, আবার সবাইকে ভক্তির গান গেয়ে শোনাচ্ছে।" লাইনগুলো বিভূতিভূষণেরই, আর এঁকেছিলেন তরুণ মজুমদার৷ 'শ্রীপতির বউ' হয়ে উঠেছিল তাদের আপনজন৷ "ঐ মেয়েটি কোথা থেকে দুদিনের জন্যে এসে তার গানের সুরের প্রভাবে সকলের অকরুণ, কুটিলভাবে পরিবর্তন এনে দিয়েছিল, সে পরিবর্তন যে কতখানি," তা বোঝা গিয়েছিল সেদিনই যেদিন আচমকাই ফুরিয়েছিল তার রাত৷ আলো চলে গিয়েছিল, থেকে গিয়েছিল তার কিন্নরদল৷ আজ আরও এক আলো নিভল৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Tarun Majumdar