আগরতলা: উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরায় ১৬ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচন। ক্ষমতাসীন বিজেপি যেমন ফিরে আসতে মরিয়া, তেমনই এই নির্বাচনে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি – বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোট বেঁধে ভোটে লড়ছে। তৃতীয় পক্ষ হিসাবে ময়দানে নেমেছে ত্রিপুরার সাবেক মহারাজের উত্তরাধিকারী প্রদ্যোৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের নেতৃত্বাধীন উপজাতীয় দল তিপ্রামোথাও।
সিপিআইএম-কংগ্রেসের নির্বাচনী জোটের কারণে যেখানে ৬০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস লড়ছে ১৩টিতে, আর বামফ্রন্ট ৪৭ আসনে। কংগ্রেসের এক স্থানীয় নেতা জানান, এই আসন সমঝোতা ‘একপেশে’। আগামী দিনে বৃহত্তর জাতীয় জোটের কথা মাথায় রেখে ত্রিপুরায় বামফ্রন্টকে বেশি আসন ছাড়তে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন।
যদিও কংগ্রেস সিপিআইএম জোট নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, ‘‘খুন, সন্ত্রাস ও উশৃঙ্খলতার দল সিপিআইএম এবং কংগ্রেস। কংগ্রেস আমলের ঘটনার ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে বাজিয়ে এত বছর রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় ছিল কমিউনিস্টরা। যাদের হাতে অজস্র কংগ্রেস কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন, খুন হয়েছেন, গৃহহীন হয়েছেন। তাদের সঙ্গেই জোট করেছে এই উশৃঙ্খল কংগ্রেস দল। আর তারা কীভাবে সে সকল সর্বস্ব হারা মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভোট চাইবেন সেটার জবাব চায় রাজ্যের মানুষ।’’
আরও পড়ুন: 'সিপিআইএম, কংগ্রেস তো নেই-ই, আমার লড়াই বিজেপি-র সঙ্গে': প্রদ্যোত মানিক্য দেববর্মণ
এমনকী পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরায় দীর্ঘদিন যে দলের বিরুদ্ধে ছিল তাঁদের লড়াই, সেই কংগ্রেসের হাত ধরতে কোনও অসুবিধা হবে না সিপিএমের? কার্যত সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি জানান, সিপিএম বিশ্বাস করে যে বিজেপিকে ত্রিপুরায় পরবর্তী সরকার গঠন করা থেকে বিরত রাখতে হবে। আর, এজন্য বিজেপি-বিরোধী শক্তির জোটবদ্ধ হওয়া দরকার।
ত্রিপুরায় সিপিআইএম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতার রাজনৈতিক ডাকনাম হয়েছে ‘বামগ্রেস’। পশ্চিমবঙ্গে এই দুই দলের জোট সূত্র পুরোপুরি অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ত্রিপুরার ক্ষেত্রে সেই সূত্র নিয়েই ভোটের আগেও রাজ্য সিপিআইএমের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। তবে সিপিআইএম ও কংগ্রেস দুই দলের শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন।
আরও পড়ুন: বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার নিয়েই ফিরবে বিজেপি, আত্মবিশ্বাসী ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
টানা ২৫ বছর বামফ্রন্ট শাসনের পর গত বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় বিজেপি ও আইপিএফটি জোট সরকার গড়ে। রাজ্যে সুশাসনের দাবি করলেও বেকারত্ব হারে বৃদ্ধি ও মাদক কারবারের বাড়বাড়ন্তের জেরে বিব্রত বিজেপি। তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ঘরে ঘরে চাকরি। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এর জেরে জনগণের একাংশে ক্ষোভও তুঙ্গে। সিপিআইএম নেতাদের দাবি, জনগণের সরকার বিরোধী মনোভাবের ভোট একজোট করতেই আসন সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ত্রিপুরার সিপিআইএমের গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের করুণ হাল।
বামফ্রন্টের লাল ঝাণ্ডা আর কংগ্রেসের তেরঙ্গা পতাকা এখন একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে ভোটের প্রচারে। নির্বাচনী আসন সমঝোতার ফলে ৪৩টি আসনে লড়ছে বামফ্রন্ট আর ১৩টিতে কংগ্রেস। একটি আসনে তারা এক নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে।
প্রকাশ্যে না হলেও বিজেপিও এই জোটকে উড়িয়ে দিতে পারছে না। ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ থেকে শুরু করে তাবড় নেতাদের এনেছে গেরুয়া শিবির। ভোট ব্যাঙ্ক যাতে অটুট থাকে তাই কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়ে জয়ী হয়েছিলেন এমন সবাইকে এবারও বিজেপি টিকিট দিয়েছে, যাতে তাদের সমর্থকদের ভোট তাদের ঝুলিতেই আসে। আর এমন পরিস্থিতিতেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিজেপি বিরোধী ভোট কি বাম-কংগ্রেস আর তিপ্রামোথার মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে?
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ২ শতাংশের কম ভোট পেয়েছিল এবং কোনও আসন পায়নি। বামফ্রন্ট সেখানে ৪২ শতাংশের উপর ভোট পেয়েছিল। আসন পেয়েছিল ১৬টি। যদিও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বামফ্রন্টের থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল। এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই তারা বেশি আসন চেয়েছিল, যা দিতে বামফ্রন্ট অস্বীকার করে। তবে, নানা টালবাহানার পর দু'পক্ষের জোট হয়। এবার সেই জোটই বিজেপির স্বপ্নভঙ্গ করে কিনা, তারই প্রহর গুণছে বিরোধী শিবির।
সব সর্বশেষ পড়ুন ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন 2023 এখানে খবরনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Left Congress alliance, Tripura Assembly Election 2023