করোনার দ্বিতীয় ঢেউ(Corona Second Wave) ছাড়খার করে দিচ্ছে মানুষের জীবন৷ চারিদিকে শুধুই মৃত্যুর খবর,প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকে হাহাকার৷ বহু ক্ষেত্রেই রোগী বেড না পেয়ে বা অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছেন৷ তবে শুধু করোনা নয়, গৃহবন্দি হয়ে ভীষণভাবে অবহেলিত হচ্ছে বাড়ির কচিকাচারা (Lockdown Affect on children)৷ তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা খুবই সমস্যায় পড়ছে৷ কারণ নিয়মিত যে চিকিৎসা বা থেরাপি চলে তাদের, তা এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্ধ রয়েছে৷ ফলে তাদের মনের জোর আরও কমছে এবং আরও কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা (Specially Abled Children)৷ এই নিয়ে কিছু জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন (Pediatric Neurologist) পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট ডাঃ যশোধারা চৌধুরী৷
এই সময়টা ছোটদের জন্য খুবই বিরক্তিকর৷ বিশেষ করে যারা বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা রয়েছে, তাদের তো খুবই সমস্যা হচ্ছে৷
উত্তর- বিশেষ ভাবে সক্ষম বলতে আমরা বুঝি সেই সব বাচ্চারা, যারা বাকিদের মতো সমান তালে চলতে পারে না৷ তাদের শারীরিক বা বুদ্ধির বিকাশ জনিত কারণে তারা পিছয়ে পড়া৷ তবে শুধু বাচ্চা নয়, বছরের হিসেবে প্রাপ্ত বয়স্ক এদের চাহিদাগুলো মোটামুটি সমান থেকে যায় জীবনে৷ এরা বেশিরভাগ সময়ই একা, এখন হয়তো পারিপার্শ্বিক কারণে এরা সম্পূর্ণ বান্ধবহীন৷ এই মহামারীর সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন এই মানুষগুলো (Lockdown specially abled children)৷ যাদের অটিজম (Autism) বা cerebral palsy-র রয়েছে,তারা ও তাদের অভিভাবকরা পড়েছেন অথৈ জলে৷ মুশকিল হচ্ছে তাদের সব থেরাপি বন্ধ৷ ফলে দিন দিন একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে তাদের অসুবিধা গুলো৷ যা একেবারে বোঝা না গেলেও, অনেকটাই যে ক্ষতি হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য৷
কোনও ভাবে কী ওষুধের মাধ্যমে সেটা কিছুটা হলেও আয়ত্তে রাখা সম্ভব? মানে কিছুটা সময় কিনে নেওয়া যাকে বলা যায়৷
উত্তর- দেখুন এতেও সমস্যা হচ্ছে৷ কারণ অনেকক্ষেত্রে যারা যে ওষুধের উপর নির্ভরশীল, তারা পেয়ে উঠছে না৷ বা সেই ওষুধের ডোজও ও পরিবর্তন করা যাচ্ছে না৷ কারণ থেরাপির (Therapy for Special Children) সঙ্গে এটা সম্পর্কিত৷ কারও ক্ষেত্রে থেরাপি হয়তো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, কারণ মা বাবারা খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছেন না, নানা কারণে৷ কেউ আবার বাড়ি থেকে থেকে আসক্ত হয়ে পড়ছে মোবাইলে৷
মা বাবারা এক্ষেত্রে কী করবেন?
উত্তর- তাদের জন্যও সময়টা খুবই সমস্যার৷ তাঁরা কোন দিন সামল দেবেন, সেটা বলাও খুব মুশকিল৷ তবে কিছু পরামর্শ রইল অভিভাবকদের জন্য৷-বাচ্ছাকে যার কাছে থেরাপি করান, তার থেকে জেনে নিন বাড়িতে কী করে সেটা করবেন৷ একটা নিয়ম বানিয়ে নিন৷ দিনের নির্ধারিত সময় স্পিচ থেরাপি (Speech therapy) করান৷ নির্দিষ্ট সময় অকুপেশনাল থেরাপি (occupational therapy)৷ যদি দেখেন বাড়িতে জিনিস নেই থেরাপির, কিছু অনলাইন কিনে নিতে পারেন৷ কিছু বা বাড়িতে পাওয়া যায় জিনিস দিয়ে তৈরি করতে পারেন৷ কাজ সুষ্ঠু ভাবে শেষ হলে সন্তানকে আরও উৎসাহ দিন৷ কয়েকটা দিন বেছে নিন সবাই মিলে একসঙ্গে আনন্দ নাচ গান করার জন্য৷ এতে সন্তানের সঙ্গে আপনার আরও সম্পর্কের বাঁধন বাড়বে, যা ওদের অনেকটা সাহায্য করবে৷
এবার আসা যাক স্পিচ থেরাপির বিষয়৷ এক্ষেত্রে চেষ্টা করুন যে নির্দিষ্ট স্পিচের উন্নতি করার৷ অর্থাৎ বুঝতে শেখার ক্ষমতা যে কার জন্য কোনটা প্রয়োজন৷ বাচ্ছা যদি one step command বুঝতে পারে, তাহলে চেষ্টা করুন সেটাই two step-এ নিয়ে যেতে৷ ধৈর্য না হারিয়ে, কোনও প্রত্যাশা না রেখে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ একদিন এর ফল পাওয়া যাবে৷
ওষুধের ক্ষেত্রে কি যা চলছে, সেটাই চালিয়ে যেতে হবে?
উত্তর- বাচ্চার যদি এর সাথে convulsion বা খিঁচুনি রোগ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে৷ লক্ষ্য রাখতে হবে, নতুন কোনও উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কিনা৷ আগে থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে জোগাড় করে রাখুন৷ না হলে অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়, ওষুধ নাও পেতে পারেন৷ বা কিছুটা সমস্যা হতে পারে৷
এই সমস্ত বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের করোনা সংক্রমণ হলে, কী করতে হবে?
উত্তর- অন্যান্য বাচ্চাদের মতো এদেরও করোনা হলে (Special Children corona) একভাবে চিকিৎসা করতে হবে৷ তবে অসুবিধা হল এরা কষ্টর কথা ঠিক ভাবে বোঝাতে পারে না৷ অনেকের আবার নিউরলজিক্যাল অন্য সমস্যাও থাকে যেগুলো বেড়ে যেতে পারে৷ সেক্ষত্রে প্রতিটি পদে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে৷ এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল যে, বাজার চলতি হোমিওপ্যাথি বা prophylactic ওষুধ এদের দেবেন না৷
বয়সের মাপকাঠি পেরোলে এরা কী ভ্যাকসিন নিতে পারবে?
উত্তর- নিশ্চয়ই ভ্যাকসিন (Special Children Vaccine) নিতে পারবে, তবে চিকিৎসকরে পরামর্শ নিতে হবে৷ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন জ্বর এবং কোনও ক্ষেত্রে খিঁচুনিও৷ তাই একটু সতর্ক থাকতে হবে৷
দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে এরাও কি ডিপ্রেশন বা হতাশায় ভুগতে পারে?
উত্তর- একদম৷ এদের মধ্যেও হতাশা আসতে পারে (Special Children Depression)৷ তবে মুখে সেটা প্রকাশ তো করতে পারবে না, কিছু কিছু অদ্ভুত ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে তা প্রকাশ পাবে৷ তাই হঠাৎ করে যদি দেখা যায় বিশেষভাবে সক্ষম শিশুর ব্যবহারে কিছু অন্য লক্ষণ নজরে আসছে, তাহলে তার উপর সঠিক নজর দিতে হবে৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।