করোনার নানা ওঠাপড়ায় 'ওরা' ভাল আছে তো? অতিমারিতে Toddler-মন নিয়ে মনোবিদের টিপস...

Last Updated:

যাদের বুলি ফোটেনি, তারা নিজেদের মনখারাপের কথা কাউকে বুঝিয়ে বলতেও শেখেনি। তাই ওদের (Toddler Kids) মন ভালো রাখতে বাড়ির বড়দের বাড়তি সচেতনতার প্রয়োজন। মা ও শিশুদের এমনই নানা মানসিক সমস্যার সমাধান খুঁজতেই রইল মনোবিদ (Psychologist) ড. অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Anuttama Banerjee) কিছু উপদেশ ও পরামর্শ।

প্রায় বছর খানেকের একটা লম্বা ঘরবন্দি জীবন, কোভিড ১৯ নামের চোখ রাঙানি, জীবনে হঠাৎ ঢুকে পড়া গাদাগুচ্ছের বিধিনিষেধ, সবমিলিয়ে সকলেই কম বেশি নাজেহাল। একদিকে যেমন ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নতুন রুটিন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে, তেমনই ভেতরে চলছে উৎকন্ঠা, ভয় ইত্যাদির সঙ্গে রোজকার লড়াই। আর এই সবকিছুর মধ্যেই আমাদের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছে আমাদের কচিকাঁচার দল।
advertisement
কাঁচা যারা অর্থাৎ যাদের মুখে বুলি ফুটেছে, স্কুল টুল যাওয়া শুরু হয়েছে, তাদের জীবন  আমাদের মতোই বেশ ব্যস্ত করে রেখেছে তাদের অনলাইন স্কুল, অ্যাকটিভিটি, অ্যাসাইনমেন্ট। শুধু স্কুলই নয়, পাশাপাশি জুম বা ডুওতেই চলছে নাচের ক্লাস, আঁকা শেখা, মায় ক্যারাটেও। তাই বোর হওয়ার খুব একটা সময় পাচ্ছে না ওরা। তাছাড়া মা বাবার পাশাপাশি ওদের সঙ্গে কথা বলে স্কুলও ওদের বুঝিয়ে দিচ্ছে করোনা ভাইরাসের বিপদ, তার থেকে বাঁচার লড়াইয়ে এই লকডাউনের ভূমিকা ও অন্যান্য সাবধানতা ও বিধিনিষেধের কথা।
advertisement
advertisement
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে তার থেকেও ছোট, অর্থাৎ সেইসব কচি বাচ্চাদের নিয়ে যারা এখনও সে ভাবে কথা বলতে শেখেনি। 'টডলার' অর্থাৎ সেই দেড় থেকে দুই, আড়াই বা তিন বছরের বাচ্চাগুলো কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না। করোনার কথা তাদের বোঝানো সম্ভব নয়। আবার হঠাৎ ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় তাদের ছোট্ট মনে যে কষ্টটা হচ্ছে, সেটাও তারা বোঝাতে পারছে না। তাই ক্রমশ দেখা দিচ্ছে আচরণগত নানান সমস্যা। কী করে কী করবেন বুঝতে পারছেন না মায়েরাও।
advertisement
আপাত শান্ত দু’বছরের মেয়ে হঠাৎ দুষ্টুমির মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশ চিন্তিত সুচেতনা। সফটওয়্যার প্রফেশনাল সুচেতনা এই লকডাউনে একদিকে বাড়ির কাজ, রান্না, অন্যদিকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম নিয়ে এমনিতেই বেশ নাজেহাল। তার ওপর মেয়ের দুষ্টুমিতেও জেরবার। ‘সকাল থেকে নতুন প্লে স্কুল, ইউটিউব ভিডিও ইত্যাদি দিয়ে টুকটাক ব্যস্ত রাখা গেলেও বিকেলে সময় কাটানো নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আর তখনই বায়না ইত্যাদির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আবার ফিজিকাল অ্যাকটিভিটি কমে যাওয়ায় মেয়ের খাওয়া দাওয়াও কমে গেছে’ বললেন সুচেতনা।
advertisement
সমস্যায় পড়েছেন মধুরা। ছেলে হঠাৎই কেমন জড়োসড়ো ভিতু হয়ে পড়েছে। এক মুহূর্তও বড়দের কাউকে ছাড়া থাকতে চাইছে না। দেড় বছরের ছেলে ও বছর সাতেকের মেয়ে নিয়ে একাই সব সামলাতে হচ্ছে মধুরাকে। বললেন ”সব কাজ সামলে ওর সঙ্গে খেলা বা ওকে সময় দেওয়া ঠিক মতো হয়ে উঠছে না। আর তাতেই বোধহয় ওর রাগ বিরক্তির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে।” তাঁর কথায়, এমনিতে বাইরে বেরোতে ভালোবাসে এমন বাচ্চাও এখন ঘরবন্দি। বাড়িতে লোকজন আসাও বন্ধ। সব মিলিয়েই হয়তো ওর মনখারাপ। কিন্তু কী করব বুঝতে পারছি না।”
advertisement
মনোবিদ ড. অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিপস
এখানেই মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বাতলে দিলেন কী ভাবে কিছুটা হলেও সামলানো যায় এইসব সমস্যা।
১. প্রথমত, মায়েদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, ওরা এখনও ভাষার ব্যবহার শুরু করেনি মানেই কিন্তু এটা নয় যে ওরা অনুভুতি, আবেগ, উত্তেজনা ইত্যাদি শনাক্ত করতে পারছে না। ওরা কিছু বুঝতে পারে না। কারণ শিশু কিন্তু তার সমস্ত অনুভুতিগুলো নেয় তার মা বা কেয়ার গিভারের কাছ থেকে, যাঁদের সঙ্গে ওরা দিনের বেশিটা সময় কাটায়। সেখানেও দেখা যাচ্ছে মা বাড়িতে কেউ এলে কী ভাবে আচরণ করছে, তাঁর হাতে বাচ্চাকে দিতে হয়তো অতটা সহজ সুরক্ষিত বোধ করছেন না, এগুলো কিন্তু বাচ্চা রিড করতে পারছে। মায়ের ভীতিটা তখন কিন্তু সঞ্চারিত হচ্ছে বাচ্চার মধ্যে। আর সেই থেকে তার আচরণগুলো, প্রতিক্রিয়াগুলো পাল্টাচ্ছে।
advertisement
২. ওদের অস্বস্তি, অসুবিধা বোঝানোর প্রধান ভাষাই হল কান্না, ঘ্যানঘ্যান করা ইত্যাদি। তাই একটা ডিসকমফর্ট থেকেই এইগুলোর মাত্রা ক্রমশঃ বাড়ছে। এমন তো নয় যে এই খারাপ সময়ে মায়েদের উৎকন্ঠা হবে না, তাঁরা ভয় পাবেন না কিংবা তাঁদের মন খারাপ হবে না! কিন্তু এটা খেয়াল রাখতে হবে, যে সময়টুকু বাচ্চার সঙ্গে থাকছেন সেই সময়টুকু সচেতনভাবে নিজের মানসিক সমস্যাগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। অথবা নিজের যখন মন ভালো নেই সেই সময়ে বাচ্চাকে বাড়ির অন্য কোনও সদস্যের কাছে রাখতে পারেন। কেউ না থাকলে কোনও খেলা, অ্যাকটিভিটির মধ্যে তাকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। অন্যদিকে নিজে হয়তো সেই সময়টা কোনও আত্মীয় বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিজের উৎকন্ঠা সামলে নিতে পারেন। এবং তার পরে একটা পজিটিভ মন নিয়ে আবার বাচ্চার কাছে ফিরে আসা।
৩. এই একদম ছোট বাচ্চাদের যেহেতু ভাষা দিয়ে কিছু বোঝানো যাবে না, সেহেতু এটুকু খেয়াল রাখতেই হবে যাতে মা হিসেবে আমি খুব আতঙ্কিত মুখ নিয়ে, দুশ্চিন্তা, ভয় নিয়ে বাচ্চার কাছে না যাই। কারণ মনে রাখা জরুরি যে সেই অনুভুতিগুলো কিন্তু খুব সহজেই শিশুর মনে জারিত হবে। আর তার থেকেই কান্না, বিরক্তি এগুলো প্রকাশ পাবে। মাকে তাই এ বিষয়টায় খুবই সতর্ক হতে হবে। অনেকসময় মায়েরা হয়তো খেয়াল করছেন না যে বাচ্চা তাঁকে, তাঁর আচরণ, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি লক্ষ্য করছে।
শুধু একটা 'হাগ' কাজ করতে পারে ম্যাজিকের মত প্রতীকী ছবি শুধু একটা 'হাগ' কাজ করতে পারে ম্যাজিকের মত
প্রতীকী ছবি
৪. এই বয়সের ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মায়ের বা কেয়ার গিভারের স্পর্শটা কিন্তু একটা বড় রোল প্লে করে। যদি বাচ্চা একটু বেশি বিরক্ত, ঘ্যানঘ্যানে আচরণও করে তবে সেই সময়েও তার ওপর রাগ না করে, বকুনি না দিয়ে তাকে আদর করে জড়িয়ে ধরে শারীরিক স্পর্শ দিয়েও আশ্বস্ত করা যেতে পারে। কোনও মৌখিক কমিউনিকেশনে না গিয়ে শুধু একটা হাগ করেও তাকে শান্ত করা যেতে পারে। মায়ের স্পর্শ, উষ্ণ আলিঙ্গন কিন্তু অনেক সহজে আরও অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে পারে বাচ্চাকে। শিশুমন বুঝে নেয়, ‘হোয়েন আই ওয়াজ অ্যাট মাই ওয়ার্সট, মাই মাদার ডিড নট লিভ মি অ্যালোন ইন দ্য রুম।’ অর্থাৎ আমার সবচেয়ে খারাপ, ঘ্যানঘ্যানে সময়েও আমার মা আমাকে ছেড়ে যাননি। পাশে ছিলেন। এটা ওদের অনেকখানি আশ্বস্ত করে। এই ভাবেই ওর নিরাপত্তাহীনতা, ওর সারাদিন বাড়িতে থেকে খারাপ লাগাগুলোকে বুঝে মাকে ধৈর্য ধরে ওর সঙ্গে মানিয়ে নিজের আচরণগুলোর ব্যাপারে আরও একটু সাবধান হতে হবে।
. বাড়িতে দাদু-দিদা অন্য আত্মীয়দের আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে হঠাৎ। হয়ত এই বিষয়গুলো ভেতরে ভেতরে ওদের কষ্ট দিচ্ছে। সেগুলোর কথাও মাথায় রাখতে হবে। সেরকম মনে হলে ভিডিও চ্যাট করে, ফোন করে গলার স্বর শুনিয়েও ওকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে. যে তাঁরা সকলেই কাছাকাছি আছেন। ওর পরিচিত মুখগুলো, ভালো লাগার আদরের জায়গাগুলো কোথাও চলে যায়নি এই বিষয়টাও ওকে একটু অনুভব করাতে হবে। তাতেও হয়তো ওর নিরাপত্তাহীনতা একটু কমবে। আর একটু সহজ, স্বচ্ছন্দ বোধ করবে। বাচ্চা জড়োসড়ো হয়ে থাকলে একটু একটু করে ওকে সাহস দিতে হবে।
আরেকটা উদ্বেগ মায়েদের মনে কাজ করছে, এই করোনাকাল কেটে গেলেও কী কোনও দাগ রয়ে যেতে পারে শিশুমনে?
মায়েদের আশ্বস্ত করেছেন অনুত্তমা। তাঁর পরামর্শ, আগে থেকেই সেইসব ভেবে ভয় পাওয়ার বা কোনও কিছু করার প্রয়োজন নেই। বরং খুব ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে শিশুর আচরণ। তার প্রতিক্রিয়াই বলে দেবে সে কী চাইছে। বাচ্চার ব্যবহারে সেরকম কোনও তারতম্য লক্ষ্য করা গেলে সেই অনুসারে তখন ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে থেকেই সেসব ভেবে টেনশন বাড়ানোর কোনও দরকার নেই।
সংযুক্তা সরকার
view comments
বাংলা খবর/ খবর/করোনা ভাইরাস/
করোনার নানা ওঠাপড়ায় 'ওরা' ভাল আছে তো? অতিমারিতে Toddler-মন নিয়ে মনোবিদের টিপস...
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement