#কলকাতা: করোনার টিকা কোভ্যাকসিন পৌঁছল কলকাতায়। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ভিতরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সংস্থা নাইসেড বা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস-এ পৌঁছল এই টিকা। হায়দরাবয়াদের ভারত বায়োটেক থেকে ১০০০ ভ্যাকসিন পাঠান হয়েছে বুধবার সকালে। আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সম্ভবত বেলেঘাটা নাইসেডে শুরু হয়ে যাবে করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় দফার পরীক্ষা। সারা দেশে ২৬টি পরীক্ষা-কেন্দ্রে মোট ২৫,৮০০ জন ‘স্টাডি ভলান্টিয়ার’-র ওপরে গবেষণা করছে আইসিএমআর বা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ। যার মধ্যে নাইসেডে এক হাজার জনের উপরে এই পরীক্ষা হবে।
নাইসেডের ডিরেক্টর বা অধিকর্তা শান্তা দত্ত জানান, ‘‘এক দল স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হবে। আর এক দলকে টিকার পরিবর্তে অন্য কিছু দেওয়া হবে। তাতে কী ফল হল, সে বিষয়ে এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চলবে। এই সময়ের মধ্যে ‘স্টাডি ভলেন্টিয়ার’রা অঙ্গীকারপত্রে যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখান থেকে অন্যত্র কোথাও যেতে পারবেন না। ফোন করে প্রতিনিয়ত খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি, স্বেচ্ছাসেবকেরা শারীরিকভাবে কেমন আছেন, তা তাঁদের বাড়িতে গিয়েও প্রতিনিয়ত দেখা হবে। তাঁরা দূরে কোথাও গেলে অসুবিধা হবে, তাই এই নিয়ম। অনেকে স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের মধ্যে থেকেই স্টাডি ভলেন্টিয়ার বাছাইয়ের কথা ভাবা হয়েছে।’’
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এই স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার আবেদন জানানো হতে পারে। বুধবার ফিরহাদ হাকিম জানান, "এখনও নাইসেডের তরফ থেকে অফিশিয়ালি আমার কাছে কোনও আবেদন আসেনি। তবে শুধু টীকা নয়, জীবন দিয়েও কলকাতা ও রাজ্যবাসীকে বাঁচাতে হলে প্রস্তুত আছি। আমার ওপর এই টিকা প্রয়োগ করতে আমি প্রস্তুত।"
স্টাডি ভলেন্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার উপযুক্ত শর্তাবলী...
*টিকা পরীক্ষায় যোগদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া আবশ্যক। কোনওমতেই একবার করোনা হলে পরীক্ষায় শামিল হওয়া যাবে না। অন্তঃসত্ত্বারাও উপযুক্ত নন।
*পরীক্ষায় যোগদানের আগে স্বেচ্ছাসেবকের সচেতনভাবে সম্মতি দেওয়া চূড়ান্ত আবশ্যক। তার জন্য ‘ইনফর্মড কনসেন্ট’ প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষেধক পরীক্ষায় কী ধরনের ঝুঁকি রয়েছে, কেন এই পরীক্ষা করা হচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবকের লাভ কী, ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, এ সবটাই জানানো হয়।
*এক দলকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়, আর এক দলকে স্যালাইন জাতীয় কিছু দেওয়া হয়। কারা প্রতিষেধক পেলেন, কাদের অন্য কিছু দেওয়া হল তা সমস্তটাই গোপন থাকে। স্বেচ্ছাসেবক সে কথা জেনেই পরীক্ষায় যোগ দেন।
*নির্দিষ্ট মাত্রায় ডোজ় পাওয়ার পরবর্তী এক বছর ধরে প্রতিষেধক থেকে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল কিনা সে বিষয়ে নজরদারি চালানো হবে। এই সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকের তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটরের। স্বেচ্ছাসেবকের সুরক্ষার প্রশ্নে এথিক্স কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
*কোনও প্রতিষেধকই ১০০% সুরক্ষা দিতে পারে না। সে জন্য পরীক্ষায় যোগ দিলেও মাস্ক পরা, বার বার হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলায় কোনওরকম অসতর্কতা থাকা উচিত নয়।
সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে তৈরি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকার তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক ডোজ় দেওয়া হবে মোট ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। এর ফল আসতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগার কথা। আগামী বছরের গোড়ার দিকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবে সংস্থা।
ABHIJIT CHANDA