কলকাতা: হাতে আর মাত্র একটা দিন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। কিন্তু এই বাজেট থেকে কী কী প্রত্যাশা রয়েছে আম আদমির, এই মুহূর্তে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি অনলাইন সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-এ আয়কর হার অথবা আয়কর স্ল্যাব পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখা উচিত অর্থমন্ত্রীর। অধিকাংশ মানুষই এমন মত দিয়েছেন। প্রি-বাজেট সমীক্ষায় প্রায় ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতাই জানিয়েছেন যে, আমজনতার উপর করের বোঝা কমানোই হওয়া উচিত প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সেই ২০১৭-১৮ সাল থেকে ইন্ডিভিজুয়াল ট্যাক্স রেটে সে রকম কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে আবার সরলীকৃত আয়কর ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছিল। আয়কর সংক্রান্ত স্বস্তির পদক্ষেপ, যা সরকার গ্রহণ করতে পারে এই সংক্রান্ত বিষয়ে উত্তরদাতারা জানান যে, কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-এ কুড়ি লক্ষেরও বেশি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের ট্যাক্স স্ল্যাব বিবেচনা করে দেখা উচিত।
ইনকাম ট্যাক্স স্ল্যাব ২০২৩-২৪:
এক জন করদাতার ক্ষেত্রে বর্তমানে উচ্চতম স্ল্যাব রেট স্থির করা হয়েছে ৪২.৭৪৪ শতাংশে। যা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ২৫ শতাংশের কর্পোরেট ট্যাক্সের তুলনায় বেশি। ডেলয়েট ইন্ডিয়ার পার্টনার সরস্বতী কস্তুরীরঙ্গন বলেন, স্পষ্টতই কর্পোরেট ট্যাক্স রেটের পাশাপাশি ইন্ডিভিজুয়াল ট্যাক্স রেট পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। মানুষের প্রত্য়াশা হল, উচ্চতর ট্যাক্স স্ল্যাব রেট কমিয়ে ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে আনা উচিত। তিনি আরও বলেন যে, যাঁদের করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাঁদের ট্যাক্স ব্র্যাকেটের মধ্যে পড়তে হয় না। তবে যাঁদের আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি, তাঁরা সরাসরি ভাবে ২০ শতাংশ ট্যাক্স ব্র্যাকেটের আওতায় পড়ছেন। ট্যাক্স স্ল্যাব যুক্তিযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩: আমরা তো আছিই খবর নিয়ে, সরাসরি চাইলে কোথায় দেখবেন নির্মলার ভাষণ?রেগুলার আয়কর ব্যবস্থা: প্রত্যাশিত স্ল্যাব এবং সেভিংস
ডেলয়েটের বিশ্লেষণ বলছে যে, যদি এক জন ২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন, তা-হলে বর্তমান ট্যাক্স আউটগো হবে ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। আর প্রত্যাশিত ট্যাক্স স্ল্যাব জারি হলে ট্যাক্স আউটগো হবে ৪ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। যার অর্থ হল, সেভিংস হবে ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা।
৮০সি ধারা এবং স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন: বৃদ্ধির সীমা
সাধারণ মানুষ আয়কর সংক্রান্ত যে সব প্রত্যাশা করে রয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল ৮০সি ধারার ১.৫ লক্ষ টাকার সীমা থেকে বৃদ্ধি। এর পাশাপাশি স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকায় বৃদ্ধি। এর ফলে কেউ যদি ২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন, সে-ক্ষেত্রে ৮০সি ধারার সীমা ২.৫ লক্ষ বৃদ্ধি করা হলে তিনি প্রায় ৩১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাঁচাতে পারবেন। আবার একই রকম ভাবে, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলে কোনও এক জন বেতনভোগী করদাতা যদি ২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন, তা-হলে তিনি ট্যাক্স আউটগো-র ক্ষেত্রে আরও ১৫ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বাঁচাতে পারবেন।
নতুন আয়কর ব্যবস্থা:
সরকার কম আয়করের হার-সহ একটি নয়া আয়কর ব্যবস্থা চালু করেছে। তবে ৬০ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর ইনকাম ট্যাক্স ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রেই পুরনো আয়কর ব্যবস্থা কাজ করে। প্রায় ২০ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নয়া ব্যবস্থার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। তবে শুধুমাত্র ১৮.৭৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই নয়া আয়কর ব্যবস্থা বেছে নিয়েছেন।
কমন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইলিং ফর্ম:
সম্প্রতি সিবিডিটি একটি ড্রাফট সার্কুলার জারি করেছে। সেখানে একটি কমন আইটিআর ফর্মের বিষয়ে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যার মধ্যে পড়ছে আইটিআর ১ থেকে আইটিআর ৬ পর্যন্ত। আবার আইটিআর ৭ সম্পূর্ণ ভিন্ন রাখতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে আইটিআর ১ থেরে আইটিআর ৪ পর্যন্ত সব সময়েই পাওয়া যাবে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ৭১ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী এই পদক্ষেপের বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। কমন আইটিআর ফর্ম কি বোঝা কমিয়ে দেবে, এই সংক্রান্ত প্রশ্নে আবার সম্মতি জানিয়েছেন প্রায় ৫৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
আইটিআর ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা:
সমীক্ষায় প্রায় ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন যে, আইটিআর ফাইলিংয়ের বিষয়টাকে আরও সহজ করে তোলা উচিত সরকারের। এই প্রসঙ্গে সরস্বতীর বক্তব্য, সেন্ট্রালাইজড প্রসেসিং সেন্টারের দ্বারা দ্রুত ট্যাক্স রিটার্নের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানানো হবে। এতে করদাতাদের সুবিধা হবে।
ইনকাম ট্যাক্স: ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবিধা
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে কর্মচারীরা নিজেদের কাজের জায়গা বেছে নেওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন। এতে তাঁদের যাতায়াতের সময়টা বেঁচে যাচ্ছে। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে যোগ হচ্ছে কিছু অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ এবং খরচও। সমীক্ষায় ৭৪ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন যে, যাঁরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন, সেই সব কর্মীদের ট্যাক্স বেনিফিট কিংবা অ্যালাওয়েন্স দেওয়া উচিত।
ভারতে কি আয়করের হার বেশি?
ওই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৭১ শতাংশেরও বেশি মানুষ মনে করেন যে, আমাদের দেশে আয়করের হার অত্যন্ত বেশি। এক জন করদাতার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ স্ল্যাব রেট স্থির করা হয়েছে ৪২.৭৪৪ শতাংশে। আবার অন্য দিকে, আমেরিকা এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশে মার্জিনাল ট্যাক্স রেট যথাক্রমে ৩৭ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।