বিচারপতিদের ভয় দেখাতে ইমপিচমেন্টকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে: জেটলি

Last Updated:

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী Arun Jaitley নিজের ব্লগে বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু মামলা নিয়ে মুখ খুললেন এবার ৷

#নয়াদিল্লি: বিচারক ব্রিজগোপাল হরকিষান লোয়ার ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুতে শাসক-বিরোধীদের মধ্যে তরজা তুঙ্গে ৷ মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে নতুন করে তদন্তের আর্জি ইতিমধ্যেই খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ বিচারক লোয়ার স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছিল বলে রায় দেয় শীর্ষ আদালত ৷ মৃত্যুর ঠিক আগে সিবিআই আদালতের বিচারক লোয়ার এজলাসে গুজরাতের সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ হত্যা মামলার শুনানি চলছিল। প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অমিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, যে তাঁর তরফে বিচারক লোয়াকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা হয়। তাঁর মৃত্যুর পরেই নতুন বিচারকও আসেন। এবং ঠিক এক মাসের মাথায় অমিত শাহ বেকসুর খালাস পেয়ে যান।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী Arun Jaitley যিনি নিজেও একজন আইনজীবী ৷ নিজের ব্লগে বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু মামলা নিয়ে মুখ খুললেন এবার ৷ তিনি লেখেন-
গতকাল আমি বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বিচারপতিদের তরফে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের লেখা ১১৪ পাতার রায়ের রিপোর্ট পড়ে দেখি ৷ রায়ের রিপোর্ট পড়লেই স্পষ্ট বোঝা সম্ভব এর পিছনে কতটা চক্রান্ত ছিল ৷ শুধুমাত্র ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে তা জনসাধারণের কাছে প্রচার করা হয়েছে এখানে ৷
advertisement
advertisement
কিছু জাতীয় রাজনৈতিক দল, অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন বিচারপতি এবং কিছু সিনিয়র আইনজীবীরা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন ৷ এই মামলায় বিভিন্ন তথ্য এবং বেশ কিছু দলের ভূমিকাগুলি খতিয়ে দেখা উচিৎ ৷ কারণ আমার সন্দেহ, এমন ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে ৷
সোহরাবুদ্দিন মামলায় অমিত শাহের অভিযুক্ত ভূমিকা
সোহরাবুদ্দিন মামলায় কোনও ভূমিকাই নেই অমিত শাহের ৷ রাজ্য পুলিশের সাহায্য নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি একটি এনকাউন্টার করেছিল বলে অভিযোগ ৷ আমি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩-য় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং-কে এই ঘটনার তথ্য দিতে গিয়ে একটি বিস্তারিত চিঠি লিখেছিলাম ৷ এই ঘটনার সঙ্গে অমিত শাহকে যুক্ত করার পিছনে যে দু’জনের প্রধান ভূমিকা ছিল ৷ সেই রামনভাই প্যাটেল এবং দশরথভাই প্যাটেল দু’জনেই জমি দখলকারী হিসেবে পরিচিত ৷ তারাই অমিত শাহের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ দেয় ৷ ওরা দু’জনেই দাবি করে যে ওরা অমিত শাহের অফিসে গিয়েছিল প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন অর্ডার বা PASA আইনে গ্রেফতারের আদেশ যাতে রদ করা যায়, সেই আর্জি নিয়েই ৷ সেসসময় নাকি তাদের কাছ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা চান অমিত শাহ ৷ যে টাকা অজয় প্যাটেল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমেই বিশেষ ভাবে বেশ কয়েকটি কিস্তিতে দেওয়া হয়েছিল ৷ ওই মিটিংয়েই নাকি অমিত শাহ তাদের জানিয়েছিলেন যে সোহরাবুদ্দিনকে মারা কেন প্রয়োজন ৷
advertisement
‘দ্য ক্যারাভান’ ম্যাগাজিনের ভুয়ো খবর
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী নাগপুরের রবি ভবনে ২০১৪-র ১ ডিসেম্বর বিচারপতি লোয়ার বুকে ব্যাথা ওঠে ৷ ওই সময় দু’জন জেলা বিচারক তাঁর সঙ্গে ছিলেন ৷ তাঁরাই তাঁদের আরও দু’জন সহকর্মীকে ফোন করে ডাকেন ৷  এরপর তাঁরা চার জন মিলেই বিচারপতি লোয়াকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ হাসপাতালে লোয়ার ইসিজি-র পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় ৷ এরপর ওই হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিচারপতি লোয়াকে কার্ডিওলজি স্পেশ্যালাইজড হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময়েই সম্ভবত বিচারপতির লোয়ার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় ৷ এবং তিনি মারা যান ৷ ডাক্তাররা বিচারপতিকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত তাঁরা ব্যর্থ হয় ৷
advertisement
ওঁর কার্ডিয়াক অ্যাটাকের সময় চার বিচারক, দুই হাসপাতালের ডাক্তার এবং মেডিক্যাল স্টাফরাই শুধুমাত্র তাঁর কাছে ছিলেন ৷ হাইকোর্টের চার বিচারক এরপর আরেকটি হাসপাতালে পৌঁছন যেখানে দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও বিচারপতি লোয়ার মত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই হয়েছিল বলে উল্লেখ ছিল ৷ বিচারপতি লোয়ার দেহ এরপর তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ পরিবারের সদস্যরাও তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন ৷
advertisement
এই মামলায় জড়িত সমস্ত কিছু বিচার করার পর সুপ্রিম কোর্টও বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক বলেই রায় দিয়েছে ৷ কারণ মৃত্যুর পিছনে কোনও সন্দেহজননক ঘটনা তদন্তে পাওয়া যায়নি ৷ ‘দ্য ক্যারাভান’ ম্যাগাজিন এসংক্রান্ত যে তদন্ত এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তা ‘ফেক নিউজ’-রই উদাহরণ ৷ এই ঘটনার পিছনে কোনও রহস্য নেই ৷ তা সত্ত্বেও জোর করেই বিচারপতি লোয়ার মৃত্যুতে ভুয়ো তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল ৷ যা বড়সড় বিতর্ক তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল ৷
advertisement
দেশের বেশিরভাগ আদালতে এমন অনেক আইনজীবী রয়েছেন, যারা জনস্বার্থে জড়িত বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা কোর্টে তোলেন এবং তার পিছনেই পড়ে যান ৷ এমনটা করাটাও অবশ্য স্বাভাবিক ৷ কারণ গত কয়েকবছর ধরে জনস্বার্থ মামলার নাম করে অনেক ‘ইনস্টিটিউশন ডিসরাপটার্স’-রা এসেছেন ৷ যারা সংস্থার আখেরে ক্ষতিই করছেন ৷ অনেক সময়েই পুরোপুরি মিথ্যা মামলাও তারা কোর্টে তুলছেন এবং মামলা লড়ছেন ৷ প্রতিপক্ষকে ধমকে রাখা এবং বিচারপতিকে অস্বস্তিতে ফেলাই এদের কাজ ৷ এই কাজে তাদের দু’জন সঙ্গী রয়েছে ৷ এক তো মিডিয়া, যারা তাদের ভরপুর প্রচার দিচ্ছে ৷ এভাবে কিন্তু কংগ্রেসকেও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে কিনারায় সরে যেতে দেখেছি আমি ৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের আইনজীবী বা অন্য কারোর সহায়তায় এমন ‘ইনস্টিটিউশন ডিসরাপ্টর্স’দের সঙ্গে জুড়ে যায় ৷ এভাবে আদালতে ভয় দেখানো, ধমকানোর মামলা-মোকদ্দমা চলতে থাকে ৷ অনেক সময়েই এতে সমস্যায় পড়ে আদালত ৷ এই মামলাতেও এভাবে মিথ্যের আশ্রয়ই নেওয়া হয়েছে ৷
advertisement
ইমপিচমেন্টকেই হাতিয়ার
সু্প্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তখনই আনা যায়, যখন তিনি নিজের পদে অনুপযুক্ত বা তাঁর আচরণ খারাপ প্রমাণিত হয়েছে ৷ কংগ্রেস এবং তার সহযোগীরা ইমপিচমেন্টকে এখন রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ৷
ইমপিচমেন্টের ব্যবহার কোনও প্রমাণ হয়ে যাওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধেই করা যেতে পারে ৷ এর কমে যে কোনও মামলায় ইমপিচমেন্টের ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর ৷ রাজ্যসভায় ৫০ সদস্যের স্বাক্ষর বা লোকসভায় ১০০ সদস্যের স্বাক্ষর পাওয়া কোনও কঠিন কাজ নয় ৷ এমনটা যে কোনও ছোটখাটো মামলাতেও জোগাড় করা সম্ভব ৷ শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য এর ব্যবহার ভয়ানক ৷ বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু মামলাতেও আদালতের রায়ের পর কংগ্রেসের তরফে পিটিশন দাখিল করা বদলা নেওয়ারই সমতূল্য ৷ এটা একটা বিচাপতিকে ভয় দেখানোর মামলা ৷ আর বাকি বিচারপতিদের জন্য বার্তা, যে আপনি যদি আমাদের সঙ্গে একমত নন, তাহলে বদলার মামলার জন্য ৫০ জন সাংসদই যথেষ্ট ৷ অভিযোগগুলি আগেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও জোর করে কিছু বিষয় টেনে আনা হচ্ছে এই মামলায় ৷
বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
বিচারপতিদের ভয় দেখাতে ইমপিচমেন্টকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে: জেটলি
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement