গ্রামে হঠাৎ করে বেড়েছে মৃত্যুর হার। তবে সেই মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি। আতঙ্কে সন্ধ্যা হলেই বাড়ির মধ্যে সিঁটিয়ে থাকছেন পরিবারের লোকজন। তাও দিনের পর দিন মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছেই। মাসাধিক কাল এমন ঘটনা ঘটার পরেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করুক। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখুক। নইলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। বাড়তে পারে আরও মৃত্যুর সংখ্যা। অনেকেই ইতিমধ্যেই আতঙ্কে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন। এক মাসের বেশি সময় ধরে দাঁতন ১ ব্লকের মনোহরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালিয়াড়া সুন্দরপুর গ্রামের শাঁখারিডাঙা পাড়া এলাকার ঘটনায় আতঙ্ক বাড়ছে এলাকার মানুষের। তারা দ্রুত এর থেকে পরিত্রাণ চাইছেন।
advertisement
জানা যাচ্ছে, গত এক দেড় মাসে এই পাড়া এলাকায় মৃত্যুর হার অনেকটাই বেশি। প্রায় ১২ জনের ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১৭-৬৫ বছরের মানুষ আছেন। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। আর এখান থেকেই লোধা অধ্যুষিত গ্রামের মানুষেরা এই ঘটনায় টেনে আনছেন ডাইনির বা কোন অশরীরী আত্মার প্রসঙ্গ। দিনে দিনে এই বিশ্বাস বাড়ছে তাঁদের মধ্যে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানা কাহিনি। ফলে এই বিশ্বাসে ভর করে সন্ধ্যা হলেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন ৮-৮০ সকলেই।
আরও পড়ুন: মর্মান্তিক! সিঁড়ি থেকে পড়ে প্রাণ হারালেন নায়িকা, মাত্র ২৯-এই জীবনাবসান, শোকে পাথর ভক্তরা
দশদিন আগে হঠাৎই মারা গিয়েছিলেন কাজল পরামাণিক নামের এক বৃদ্ধা। শনিবার ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর ছেলে কার্তিক পরামাণিকের। মাঠে শৌচালয় সেরে ফেরার পথে পড়ে গিয়েই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানাচ্ছেন পরিবারের লোকজন। পরপর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ফলে মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। অনেকেই বলছেন, মৃত্যু স্বাভাবিক হচ্ছে না। রাতে খেয়ে কেউ ঘুমিয়েছেন। সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কেউ পড়ে গিয়ে মারা যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুক জ্বালা উপসর্গ থাকছে বলেই গ্রামবাসীদের মত। আর এই আতঙ্কে গ্রামেও কেউ আসছেন না। ফলে পাড়াটি একপ্রকার একঘরে হয়ে আছে।
এলাকায় আছে প্রায় ৮০টি পরিবার। কয়েকটি সরকারি ও নিজস্ব নলকূপ আছে। পুকুরের জলও অনেকেই ব্যবহার করেন। জলে কিছু মেশানো আছে কিনা, এই চিন্তাও হচ্ছে অনেকের। জল থেকে কিছু হচ্ছে নাকি অন্য কিছু থেকে, তা প্রশাসন খতিয়ে দেখুক। নয়তো পাড়াটা উজাড় হয়ে যাবে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসবাস আতঙ্কের হয়ে উঠছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ডাইনি নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তবে ঘটনা জানার পর এদিন গ্রামে ব্লক প্রশাসন ও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল এলাকায় যায়। মৃতের পরিবার ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। মৃত্যুর কারণ তদন্তের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। প্রশাসনের কাছে আগে এমন খবর পৌঁছায়নি। এলাকায় গিয়ে সচেতন করবে বিজ্ঞান মঞ্চের শাখাও।
Ranjan Chanda