রাজ্য সরকারের মাধ্যমে 'জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন' (National Health Mission) এই গ্রামীণ হাসপাতালের হাতে তুলে দেবে "সুশ্রী" (Sushree) পুরস্কার।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পরিকাঠামো, পরিষেবা প্রদান, পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্যায়ন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রচার- এই সমস্ত পরিষেবার মানদণ্ডের বিচারে প্রতিবছর রাজ্যের সেরা হাসপাতাল গুলিকে চিহ্নিত করা হয়। সেরার সেরা হাসপাতালের হাতে তুলে দেওয়া হয় "সুশ্রী" (কায়াকল্প) পুরস্কার।
advertisement
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (National Health Mission) এর পক্ষ থেকে ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির হাতে তুলে দেওয়া হয় ১৫ লক্ষ টাকা। যা হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে রাজ্যের দু'টি হাসপাতালকে সুশ্রী পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়, একটি হলো, জেলা হাসপাতাল গুলির মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া হাসপাতাল এবং অন্যটি হলো, বাকি সমস্ত হাসপাতালের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া হাসপাতাল।
এবছর (২০২০-২১) সেরা জেলা হাসপাতাল হিসেবে "সুশ্রী" পুরস্কার পাচ্ছে- দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এম. আর বাঙ্গুর জেলা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। অন্যদিকে, বাকি সমস্ত হাসপাতালের মধ্যে (SDH, SGH, SSH, RH, BPHC) সেরা নির্বাচিত হয়ে বা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে "সুশ্রী" পুরস্কার পাচ্ছে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার অন্তর্গত রামনগর- ২ নম্বর ব্লকের বড়রাঙ্কুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল।
মঙ্গলবার রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে এই খবর পৌঁছনোর পরই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে খুশির হাওয়া! নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, নিঃসন্দেহে গর্বের ও আনন্দের খবর।
রাজ্যের সমস্ত মহকুমা হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে লড়াই করে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার এই গ্রামীণ হাসপাতাল প্রথম স্থান অধিকার করে, জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মানস কুমার মন্ডল সহ হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রাজ্যের ২৩ টি জেলা হাসপাতাল (১৮ টি জেলা হাসপাতাল এবং ৫ টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল) এবং ৩১৫ টি অন্যান্য হাসপাতাল (SDH, SGH, SSH, RH, BPHC) এই কর্মসূচিতে (Sushree Programme) অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছিল। মোট ৭ টি বিভাগের প্রতিটি বিভাগে নূন্যতম ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল যে সমস্ত হাসপাতাল, তারাই সুশ্রী পুরস্কারের জন্য লড়াই করার সুযোগ পেয়েছিল।
এক্ষেত্রে যে ৭ টি মানদণ্ড রয়েছে, সেগুলি হল- (১) পরিকাঠামোগত মান (২) উন্নত নিকাশি, ৩) বর্জ্য ব্যবস্থাপন ব্যবস্থাপনা (৪) রোগজীবাণুর মোকাবিলায় উন্নত পরিকাঠামো (৫) হাসপাতাল চত্বর হতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন (৬) সৌন্দর্যায়ন এবং (৭) সচেতনতার বার্তা প্রধান বা প্রসার ঘটানো। মূল্যায়নে অন্তত ৭০ শতাংশ নম্বর পেলে তবেই পুরস্কারের দৌড়ে সামিল হওয়া যায়।
অন্যদিকে, এই "সুশ্রী" কর্মসূচিতে (Sushree Programme) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে 'সেরা' হয়েছে ঘাটাল মহকুমার বীরসিংহে অবস্থিত বিদ্যাসাগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (Vidyasagar BPHC)। রাজ্যের মধ্যে নবম স্থানে আছে এই হাসপাতাল।
পেয়েছে ৫৮২ (৬০০'র মধ্যে) অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ নম্বর। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, এই বিদ্যাসাগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রই ২০১৮-'১৯ সালে রাজ্যের সেরা হিসেবে জিতে নিয়েছিল "সুশ্রী" পুরস্কার। তারপর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আর কোনও হাসপাতাল এই পুরস্কার পায়নি। সেই সময় এই বিদ্যাসাগর BPHC 'র ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বা BMOH ছিলেন ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস।
বর্তমানে যিনি শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার তথা গ্রামীণ হাসপাতালের BMOH হিসেবে ওই দুটি হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পরিষেবা প্রদানে সচেষ্ট। অন্যদিকে, বিদ্যাসাগর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের বর্তমান BMOH হলেন ডাঃ অভিষেক মিদ্যা। ২০২১ এর জুন মাসে তিনি ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাসের জায়গায় বদলি হয়েছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যান্য যে হাসপাতালগুলি এবার সুশ্রী পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল (৭০ শতাংশ নম্বর পেয়ে), সেগুলি হল- হিজলি গ্রামীণ হাসপাতাল, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল, ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল, দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতাল, কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতাল এবং খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল। বিদ্যাসাগর BPHC (নবম) ছাড়া কোনটিই প্রথম একশোতে জায়গা পায়নি!
অপরদিকে, জেলা হাসপাতাল হিসেবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এই দৌড়েই আসতে পারেনি। এদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ২৮ তম স্থান (৫৮২ নম্বর) অধিকার করে ওই জেলার 'সেরা' হাসপাতাল নির্বাচিত হয়েছে SDH, SGH, SSH, RH ও BPHC এর মধ্যে।
শুধু তাই নয়, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল তথা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এই সুশ্রী পুরস্কারের জন্য মনোনীত ২৩ টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ১৫ তম স্থান অর্জন করেছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম জেলা হাসপাতাল ও তমলুক জেলা হাসপাতাল যথাক্রমে ২২ ও ২৩ নম্বরে আছে। কিন্তু, সুশ্রী পুরস্কারের দৌড়ে আসতে পারেনি (৭০ শতাংশ নম্বর পায়নি) পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সদর হাসপাতাল তথা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
Partha Mukherjee