TRENDING:

Paschim Medinipur: দীর্ঘ ৯ বছর ধরে শালবনীর গ্রামে ঘটা করে হয় হাতি পুজা ও মেলা

Last Updated:

মেদিনীপুর থেকে শালবনীগামী ৬০ নং জাতীয় সড়কের পাশেই গোদাপিয়াশাল চকে গার্লস হাই স্কুলের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা ধরে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরেই পাথরাজুড়ি ও চন্দন কাঠ গ্রাম। রেল গেট পেরিয়ে পাকা সড়ক বেয়ে গ্রামে ঢোকার মুখেই হাতি ঠাকুরের মন্দিরের ঠিকানা। থানের অদূর?

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
পশ্চিম মেদিনীপুর: সরকারি তথ্য অনুসারে এখানকার মাটিতে দলমার দামালদের যাতায়াত শুরু হয় ১৯৮৬-৮৭ সাল নাগাদ। সেসময় দলমা পাহাড় থেকে নেমে আসতো পাঁচ থেকে সাতটি ছোট ছোট হাতির (Elephant) দল। নতুন জায়গায় এসে স্বাভাবিকভাবেই তারা জঙ্গল ছেড়ে বাইরে বের হতো না। শান্ত নিরীহ প্রকৃতির এই হাতিরা (Elephant) আধার নামলেই সুযোগ বুঝে পাকা ধানের ক্ষেতে ঢুকে পড়ত। আবার দিনের বেলা লুকিয়ে থাকত জঙ্গলের নিরাপদ অন্তরালে। জঙ্গলমহলের ছাপোষা চাষীদের সঙ্গে সে ছিল হাতি (Elephant) ঠাকুরের এক মজাদার লুকোচুরি খেলা।
শালবনীর পাথরাজুড়ি ও চন্দনকাঠ গ্রাম
শালবনীর পাথরাজুড়ি ও চন্দনকাঠ গ্রাম
advertisement

এলাকায় হাতি এলে মানুষ তাদের সৌভাগ্যের বার্তা বলে মনে করত। গ্রামে গ্রামে বাস পোশাক দেওয়া হতো উলুধ্বনি। প্রথমদিকে কমসংখ্যক হাতি অর্থ হাতিদের নিয়ে মানুষজনের উদ্বেগ তখন অনেক কম ছিলো মানুষজন সেসময় কৃষিজমি থেকে হাতিদের খেদানোর বিষয়টি উপভোগ করত শীতের সময় হাতিদের দক্ষিণবঙ্গে আসবার খবরে উত্তেজনা আর আনন্দে উৎফুল্ল হত গ্রাম বাংলার কৃষিজীবী মানুষজন। তারা বিশ্বাস করতো আগত হাতিরা মঙ্গল মূর্তির জীবন্ত কায়া তাদের আগমনে এলাকায় সমৃদ্ধি বাড়বে হাতিরা ফসল খেয়ে যা ক্ষতি করবে তার দ্বিগুণ ফিরে আসবে তাদের শুভ আগমনে।

advertisement

এভাবেই জঙ্গলমহল তথা দক্ষিণবঙ্গের লৌকিক সংস্কৃতি এবং লোক কথায় হাতি ঠাকুর এক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চরিত্র হিসেবে উর্ত্তীন্ন হয়েছে দেবত্বের আসনে। এখানকার বিভিন্ন জঙ্গলের প্রান্তে আজও দেখা যায় পোড়ামাটি বা কংক্রিটের নির্মিত সিঁদুর মাখা হাতির মূর্তি। বনভূমির রক্ষক ঠাকুর হিসেবে নিত্য পূজা হয় অনেক জায়গায়। সারা জঙ্গলমহলে এভাবে সম্মান আর শ্রদ্ধার জায়গা করে নিয়েছে হাতি ঠাকুর।

advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সালবনি ব্লকের প্রত্যন্ত পাতা জুড়ে চন্দন কাঠ গ্রাম দুটি আজও বিখ্যাত হয়ে উঠেছে হাতি ঠাকুরের কল্যাণে। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের হৃদয়ে জঙ্গলের হাতি শুধু বিভীষিকা হয়ে নয়, রয়েছে হাতি ঠাকুর হিসেবেও। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস হাতি ঠাকুর গ্রামের রক্ষক। এখন এই এলাকা হাতিপুজো ও মেলা নামে প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। তাই প্রচলিত লোক বিশ্বাস ও বন্য প্রানের প্রতি অসীম ভালোবাসার বন্ধনে হাতি ঠাকুর হয়ে উঠেছেন গ্রামের সর্বজনীন দেবতা। সালটা ছিল ২০১৩। বাংলার ১৪১৯ সন। ৩ রা ফাল্গুন, বেশ গরম ছিল দিনটা। সেই অস্বস্তি কাটাতে সেদিন গভীর রাতে দুই হস্তিশাবক পুকুরে নেমেছিল, কিন্তু তলিয়ে যেতে থাকে গভীর জলে। এপরই মা হাতি তাদের বাঁচাতে নামে পুকুরে। কিন্তু শেষ অবধি তাদের কেউই আর ডাঙ্গায় উঠতে পারেনি। পরদিন গ্রামবাসীরা দেখে পুকুরের জলে তিনটি হাতি মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খবর দেওয়া হয় গোদাপিয়াশাল ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে। বনকর্মীরা এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিজের সন্তানদের বাঁচাতে এক মায়ের সেই আমৃত্যু লড়াইকে শ্রদ্ধা জানাতে ভেঙে পড়ে হাজার হাজার জনতা।

advertisement

View More

তারপরে বনদপ্তর এর উদ্যোগে দুই গ্রামের বাসিন্দারা ঠিক করেন হাতির স্মৃতিতে মূর্তি তৈরি করা হবে। দুই গ্রামে প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের বাস। যাদের চাষাবাদী প্রধান পেশা। প্রথমে দুই গ্রামের গুটিকয় গ্রামবাসী ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেনি। তাদেরও বনদপ্তর এর উদ্যোগে হাতি ঠাকুরের মূর্তি তৈরি করা হয়। এখন এই হাতি ঠাকুরই এই দুই গ্রাম সহ পাশাপাশি প্রায় ১৫/১৬ টি গ্রামের সর্বজনীন ঠাকুর হয়ে উঠেছে। পাথর ঝুড়ি চন্দন কাঠ গ্রামের সংযোগস্থলে মাঠের মাঝে পাকা বেদী নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাতি ঠাকুরের মূর্তি। প্রতিবছর বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে ফাল্গুন মাসের ৪ ও ৫ তারিখ ব্রাহ্মণ দিয়ে নিয়ম মেনে হাতি ঠাকুরের পুজো করা হয়। হাজার হাজার মানুষ ধুপ, সিঁদুর, বাতাসা, কলা নারকেল দিয়ে পুজো দেন। পূজাকে কেন্দ্র করে পাশের মাঠে দুদিন ধরে চলে মেলা। মেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ঝুমুর গান, ছৌ নাচ, মোরগ লড়াই সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

advertisement

সারা বছরজুড়ে যেকোনো শুভ কাজের আগে এলাকার মানুষ হাতি ঠাকুরের থানে নারকেল ফাটিয়ে ভগ দেন। জঙ্গলমহলের প্রতিটি গ্রামের গরাম থানে (দেবস্থান) পোড়ামাটির তৈরি হাতি ঘোড়া ছোট ছোট ছলন (মূর্তি) থাকে। আবহমানকাল থেকে চলে আসা লোকবিশ্বাস অনুযায়ী গরাম থানের গ্রাম দেবতাকে গ্রামের সব শুভ শক্তির উৎস ও বিঘ্নবিনাষক হিসেবে মনে করা হয়। হাতির বিশালাকৃতির অসীম শক্তির কারণে প্রাচীনকাল থেকেই তার ওপর দেবত্ব আরোপিত হয়েছে। লোক বিশ্বাস অনুসারে দেব স্থানে হাতি থাকলে গ্রামের কারো কোন ক্ষতি হবে না। হুলা পার্টির তাড়া খেয়ে ঝারগ্রাম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের মধ্যে ঘুরছে হাতির দল। গৃহস্থের ঘর ভেঙে ধান-চাল সাবাড় করছে, স্কুলের গোডাউনের দরজা ভেঙ্গে খেয়ে নিচ্ছে মিড ডে মিলের চাল। এর আগে থেকে হাতি তাড়ানোর দাবি থেকে প্রায়ই ঘেরাও, বিক্ষোভ, পথ অবরোধ হয়। কিন্তু সেই হাতেই রেলে কাটা পড়লে, কোন দুর্ঘটনায় বা অসুস্থ হয়ে মারা গেলে চোখে ভেঙে পড়েন এলাকাবাসীরা।

এ এক অদ্ভুত সংস্কৃতি ও মায়ার বাঁধন। হাতি ঠাকুর একদিকে ভয়, অপরদিকে ভক্তির আধার। আজ ভক্তির মাধ্যমে ভয় কে জয় করার পন্থা অবলম্বন করেছেন জঙ্গলমহলবাসী। দিনের-পর-দিন ফসল ঘরবাড়ি তছনছ করে চলেছে হাতির দল। তবুও প্রথা মেনে বছরের এই সময়টা গ্রাম দেবতাদের পাশাপাশি হাতি পুজো করেন ভক্তরা। ইদানিং জঙ্গলমহলের হাতির দাপাদাপি বেড়ে যাওয়ায় হাতি ঠাকুর কে তুষ্ট করতে পূজার্চনা কে আঁকড়ে ধরেছেন কেউ কেউ। তাদের বিশ্বাস হাতি দেবতার স্বরুপ। হাতি ঠাকুরকে পুজো করলে হাতিও মানুষের ঘরবাড়ির অনিষ্ট করবে না। আরে সরল বিশ্বাসী তো মেলে ইষ্ট, তর্কে বহুদূর।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
প্রয়োজন পড়বে না পুকুর বা জলাশয়ের দুরন্ত পদ্ধতিতেই মাছের ব্যবসা করলেই আয় হবে লক্ষাধিক
আরও দেখুন

কীভাবে যাবেন এই হাতি পুজোর স্থানে ? মেদিনীপুর থেকে শালবনীগামী ৬০ নং জাতীয় সড়কের পাশেই গোদাপিয়াশাল চকে গার্লস হাই স্কুলের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা ধরে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরেই পাথরাজুড়ি ও চন্দন কাঠ গ্রাম। রেল গেট পেরিয়ে পাকা সড়ক বেয়ে গ্রামে ঢোকার মুখেই হাতি ঠাকুরের মন্দিরের ঠিকানা। থানের অদূরে রয়েছে সেই জলাশয়, যেখানে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সালবনি ব্লকের কাশীজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এই গ্রাম দুটি ঘন শাল জঙ্গলে ঘেরা। গ্রাম লোগো জঙ্গলে সারাবছরই চার-পাঁচটি স্থানীয় হাতি ঘোরাফেরা করে। পরিযায়ী হাতির দলও যাতায়াত করে এই এলাকার জঙ্গল দিয়ে।

বাংলা খবর/ খবর/পশ্চিম মেদিনীপুর/
Paschim Medinipur: দীর্ঘ ৯ বছর ধরে শালবনীর গ্রামে ঘটা করে হয় হাতি পুজা ও মেলা
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল