ছোট্ট এক টুকরো জায়গার ওপর ভরসা করে, দীর্ঘ ২২ বছর 'city of brotherhood' আসানসোল শহরে বাস করছেন ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ় শংকর জয়সওয়াল (West Bardhaman Tea Seller)। এক টুকরো ঘর মানে ঠিক কতটুকু? না, ১০/১০ ফুটের এক টুকরো কামড়া নয়। চা বিক্রেতার আস্তানা, সামান্যর থেকেও অতি ছোট। সাড়ে ছয় ফুট বাই সাড়ে তিন ফুটের কাঠের একটা বাক্স। সেই বাক্সবন্দী হয়েই, ২২ বছর ধরে জীবনের অসামান্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন শঙ্করবাবু। এক টুকরো বাক্সর মধ্যেই রয়েছে তাঁর একার সংসার। আবার সেখানেই রয়েছে তার দোকান। ওই অল্প জায়গাতেই সকাল থেকে বিক্রি হয় চা আর ডিম টোস্ট। বিকেলের পর ওই বাক্সই শংকরবাবুর রাত্রিবাসের ঠিকানা।
advertisement
আসানসোলের সিটি বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে শংকর জয়সওয়ালের চায়ের দোকান। দোকানে তাঁর হাতের তৈরি চা না খেয়ে, সকালই শুরু করতে পারেন না অনেকে। বিশেষ করে সেখানকার বাসকর্মীদের, ওই চায়ে চুমুক দিয়ে শুরু হয় দিন। এই বাসস্ট্যান্ডে যেসকল যাত্রীদের নিত্য যাতায়াত রয়েছে, তাদের কাছেও অতিপরিচিত শংকর জয়সওয়াল (West Bardhaman Tea Seller)।
এই দোকানের শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে। ১৯৭৮ সালে গোরখপুর থেকে আসানসোলে পা দিয়েছিলেন শঙ্করবাবু। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর নিজের ভিটেমাটি ছেড়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে আসানসোলের ওই সাড়ে ছয় ফুটের কাঠের বাক্সই তাঁর ঠিকানা। সেখানেই চলে তাঁর রুজি রোজগার। ওই বাক্সই তার একমাত্র সম্পত্তি। এই বাক্সই তার ভিটেমাটি।
সূর্যোদয়ের মতো প্রতিদিন নিয়ম করে সকালেই খুলে যায় শঙ্করবাবু চায়ের দোকান। সকাল থেকে শুরু হয় মানুষের আনাগোনা। দেদার বিক্রি হয় চা, ডিমটোস্ট (West Bardhaman Tea Seller)। দুপুর পর্যন্ত চলে সেই কারবার। দোকান সামলানোর পাশাপাশি, ওই জায়গাতেই দুপুরের খাবার বানিয়ে নেন শঙ্করবাবু। তারপর বিকাল হতে বন্ধ হয়ে যায় দোকান। চায়ের দোকানের রুপ বদলে হয়ে যায় ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ়র রাত্রিবাসের ঠিকানা।
বর্তমানে রাজ্যের ভোটার তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এলাকার ভোটার। তবে আজও তার নেই কোনো নিজের বাড়ি। কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও, তার নাগাল এখনও পাননি এই চা বিক্রেতা। স্থানীয় কোনও নেতা, কোনওদিন তার খোঁজখবর নেননি, বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে তাতে যে বিশেষ অসুবিধা হয়, তেমনটাও তিনি বলেননি। বাক্সবন্দী হয়ে, দীর্ঘ ২২ বছর ধরে, তাঁর মতো করে খুশি রয়েছেন শংকর বাবু। ইচ্ছা থাকলে, জীবন যুদ্ধের লড়াইটা যে অনেক সহজ হয়, তা প্রতি পদক্ষেপে বুঝিয়ে দিচ্ছেন চা বিক্রেতা এই প্রৌঢ়।
Nayan Ghosh