ব্যস্ততার যুগে বংশের কুলদেবতার নিত্যসেবা ও পুজো-অর্চনায় যাতে কোনও ব্যাঘাত বা অনিষ্ট না ঘটে, তাই পুরোহিতের উপর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমনই নজিরবিহীন দৃশ্যর দেখা মিলেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা থানার কাঞ্চনপুর এলাকায়। ওই এলাকায় বসবাসকারী বছর ৭৩-এর পুরোহিত বিজয় চক্রবর্তীর মাটির বাড়িতে এখনও পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ২০টি বনেদিবাড়ির কুলদেবতার বিগ্রহ।
advertisement
পুরোহিত বিজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা দক্ষিণা পাওয়ার সময় থেকে পুজো শুরু করেছিলাম। ১৩ বছর বয়স থেকে পুজো করে আসছি। বহু বনেদি বাড়ির কুলদেবতা আমার বাড়িতে রয়েছে। প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে পুজো করে আসছি। কুলদেবতার মধ্যে রয়েছেন রঘুনাথ, রামচন্দ্র, শিব, লক্ষ্মীজনার্দন, বাসুদেব, মা মনসা, ধর্মরাজ, চাঁদরায়-সহ আরও অনেক বিগ্রহ।পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান-সহ বীরভূম জেলার বহু বনেদি বাড়ির কুলদেবতার পুজো আমার বাড়িতে হয়।’’
আরও পড়ুন : বাংলার প্রাচীন গৌড়ে সুলতানি আমলের সরাইখানার আজ মলিন মিনার, সাক্ষী বহু ইতিহাসের
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একসময় এলাকায় বহু জমিদার ছিলেন। এলাকার বিপুল জমিজায়গার খাজনা তাঁরা আদায় করতেন। তাঁরা কখনও জমিদার বা এলাকায় মহাজন নামেও পরিচিত ছিলেন। তাঁদের বাড়িতে ছিলেন কুলদেবতা। বংশের গোত্রেই তাঁরা পূজিত হতেন। কয়েকশো বছরের পুরনো ওই সমস্ত অভিজাত পরিবারগুলির বংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি-জায়গা কমে আসে। বংশধরের বহুজন চাষাবাদ ছেড়ে বিভিন্ন কর্মসংস্থান ও ব্যবসায় লিপ্ত হয়। বংশে গোষ্ঠীর লড়াই-সহ শরিকি বিবাদ থেকে শুরু করে অন্য একাধিক কারণে ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি প্রায় নষ্ট হতে থাকে। কুলদেবতার পুজো ও নিত্যসেবা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়। পরিবারের নানা জটিলতার কারণে তাঁরা কুলদেবতাকে এলাকার পুরোহিতের বাড়িতে পৌঁছে দেন।