বঙ্গে কালিকা চ – অর্থাৎ বাংলায় কালির বসবাস। বাংলায় দেবী কালি কোথাও পূজিতা হন শক্তিরূপে, কোথাও রক্ষাকত্রী রূপে, কোথাও আবার বরাভয়দায়িনী রূপে। তবে এই তালিকায় কিছুটা ব্যতিক্রম ভবানী মাতার মন্দির। এখানে দেবী কালি পূজিতা হন ভারতমাতা রূপে। মন্দিরের পরিবেশ গা ছমছমে। শহরের সবথেকে অভিজাত এলাকায় মন্দিরটি অবস্থিত হলেও, মন্দির চত্ত্বর একেবারে আড়ম্বরহীন।
advertisement
অম্বুজা কলোনির এই মন্দির ভবানী মাতার মন্দির নামে খ্যাত। তবে মন্দিরের দেবী পূজিতা হন ভারতমাতা রূপে। দেবী পুজোর মূল মন্ত্র, ‘বন্দে মাতরম, জয় জয় ভারতবর্ষম। ঐক্যং শরনম গচ্ছামি। সত্যম শরনম গচ্ছামি। স্বরাজম শরনম গচ্ছামি’। মন্দির খোলা এবং বন্ধের সময়ও একই মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। কথিত আছে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এই মন্দির ছিল বিপ্লবীদের অন্যতম আখড়া।
মন্দিরের পুরোহিত জানিয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রাম যখন ধীরে ধীরে বড় হয়েছে, তখন বিপ্লবীদের যাতায়াত বাড়তে থাকে এখানে। অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী এই মন্দিরে এসে আশ্রয় নিতেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের পরাস্ত করার ব্লু প্রিন্ট তৈরি হত এখানে। কালীরূপী ভারতমাতার কাছে নতমস্তকে প্রণাম জানিয়ে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করার পথে রওনা দিতেন। কথিত আছে দেশ ছাড়ার আগে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস কোনও কারণে এই মন্দিরে এসেছিলেন। রাত্রিযাপন করেছিলেন এই মন্দিরে। পরদিন মায়ের পুজো সেরে ফের তিনি চলে যান।
আরও পড়ুন: Budh Planet Uday: বক্রি বুধের উদয়! বুদ্ধির দেবতার জীবনে বড় ম্যাজিক, নজিরবিহীন টাকা ৩ রাশির হাতে
ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মতে, দেবী কালীকে ভারতমাতা রূপে পুজো করার সিন্ধান্ত সেই সময় বিপ্লবীরা নিয়েছিলেন। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে তাঁরা মনে করেন, স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, ভারতমাতা যেমন মাতৃরূপে তার সন্তান দেশবাসীকে রক্ষা করতে পারে, তেমনি মহাকালী রূপে সংহার করতে পারে নিজের শত্রুদের। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দেবী কালীর আরাধান করতেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: চলতি মাসের মধ্যে করাতে হবে জরুরি এই কাজ! না হলে ব্যবহার করতে পারবেন না অ্যাকাউন্ট; জানাল PNB !
বর্তমানে ভবানী মাতার মন্দিরটি সংস্কার করা হয়েছে। তবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পুরনো মন্দিরে দেবীমূর্তির পিছনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র রাখা হয়েছিল। সেই মানচিত্রের দেখা এখন আর পাওয়া যায় না। কিন্তু বিপ্লবীদের পুজোর রীতি এখন পুরনো মর্যাদায় পালন করা হয়। এখন পুজোর মন্ত্র হিসেবে পাঠ করা হয় বন্দে মাতরম্, জয় জয় ভারতবর্ষম। দেবীর বেদিতে ‘বন্দে মাতরম’ শব্দটি এখনও লেখা রয়েছে। মন্দির প্রবেশের পথে চোখে পড়বে মন্দিরের আরাধ্য দেবী ভারতমাতার জপমন্ত্র। আজও দেবী ভবানী এখানে পূজিতা হন ভারতমাতা রূপে।
Nayan Ghosh