এই বহু প্রাচীন কালীপুজোয় আজও হয় ছাগ বলি হয়। সারা বছর যেখানে পা দিতে মানুষ ভয় পায় সেখানে কালীপুজোর পরের দিন তিল ধরনের জায়গায় থাকে না। রাজকুসুম গ্রামের রায় পরিবারের সদস্যরা ঘন জঙ্গলের মধ্যে এই কালীপুজো চালিয়ে নিয়ে চলেছেন। স্থানীয়দের কাছে দেবী বনকালী নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে নিচুতলায় বিভ্রান্তি, ইয়েচুরির সামনেই সরব জেলার নেতারা
advertisement
এই প্রাচীন কালীপুজোর আরেকটি রীতি আছে। সব জায়গায় যেদিন কালীপুজো হয় সেদিন নয়, এখানে পুজো হয় তার পরের দিন। দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্ত এখানে ছুটে আসেন। অনেকেই দেবীর কাছে মানত করে যান। মানত পূরণ হলে দেবীর উদ্দেশ্যে ছাগল নিবেদন করেন তাঁরা। পুজোর দিন সেই ছাগল বলি দেওয়া হয়।
বনকালীর প্রতিষ্ঠাতা কে তা সঠিকভাবে জানা যায় না। ঠিক কত সালে এই পুজো শুরু হয়েছিল সেই বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। তবে রায় পরিবারের দাবি, পুজোটি ৫০০ বছরের বেশি পুরনো। বনকালীর পুজোর সঙ্গে গোপালপুরের ভট্টাচার্য পরিবারের যোগ আছে। ভট্টাচার্য পরিবারের বড় কালীর সঙ্গে বনকালীর যোগ রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কালীপুজোর পরের দিন রাজকুসুমের রায় পরিবারের তরফ থেকে পুজো যায় গোপালপুরের ভট্টাচার্য পরিবারে। সেই পুজো যাওয়ার পরই দেবী বড়কালীর পুজো হয়। তারপর শুরু হয় রাজকুসুমের বনকালীর পুজো।
রায় পরিবারের সদস্য বিদ্যুৎ রায় বলেন, বনকালীর কাছে মানত করলে তা সফল বেই। সেই কারণে দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত আসেন পুজো দিতে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রায় পরিবারের বনকালীর পুজো একদিনের। বলা ভাল একবেলার। গত কয়েক কয়েক বছর ধরেই বনকালীর পুজোয় ভিড় ক্রমাগত বাড়ছে। প্রার্থনা সফল হওয়ার জন্য প্রচুর ভক্ত আসছেন দেবীর কাছে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে শাল গাছের নিচে শুধুমাত্র বারিঘট রেখে বনকালীর পুজো হয়। যা পশ্চিম বর্ধমান জেলার গ্রাম্য কালীপুজোগুলির অন্যতম।
রায় পরিবার এবং ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা বলেন, একসময় এই জঙ্গল আরও গভীর ছিল। বর্তমানে যেখানে বনকালী দেবীর পুজো হয়। সেখানে কেউ যেতে সাহস পেতেন না সহজে। পুজোর দিনে পুরোহিত ভয়ে ভয়ে পুজো করতে যেতেন। ভট্টাচার্য পরিবার থেকেই পুরোহিত যেতেন পুজো করতে। কিন্তু ভয় সঙ্গী করে তিনি পুজো করতে যেতেন। তখন তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তারপর থেকে ভট্টাচার্য পরিবারে শুরু হয় বড় কালীর পুজো। আর বনকালীর পুজো হয় কালীপুজোর পরদিন।
নয়ন ঘোষ