আইপিএল থেকে এ বছর প্লে অফের আগেই নাইটদের বিদায় হয়ে গেলেও রিঙ্কু সিংয়ের ব্যাটিং ভুলতে পারছেন না কেউই ৷ আইপিএলের সুবাদে আজ এই ছেলে কোটিপতি ৷ অথচ একটা সময় ছিল প্রচণ্ড খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে রিঙ্কু এবং তাঁর পরিবারকে ৷ তাঁর বাবা খানচন্দ্র সিং গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। লখনউয়ে দু’টি ঘরে চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে রিঙ্কুর সংসার। দু’বেলা ঠিক মতো খাবার পেতেন না। ছোটবেলায় দিল্লিতে একটি প্রতিযোগিতায় বাইক জিতেছিলেন রিঙ্কু। বাড়ি ফিরে সেই বাইকের চাবি বাবার হাতেই তুলে দেন। কারণ ভারী সিলিন্ডার বইতে কষ্ট হয় বাবার। তাই রিঙ্কু মনে করেছিলেন বাবারই এই বাইক ব্যবহার করা উচিৎ ৷ ঝাড়ুদার হিসেবেও একসময়ে কাজ করেছেন রিঙ্কু ৷ তবে সেই সব পরিশ্রমের ফলই আজ হয়তো এত বছর পর পেয়েছেন কেকেআর তারকা ৷
advertisement
একটা সময় এমনও গিয়েছিল রিঙ্কুর যে চোট পেয়ে তাঁকে বেশ কয়েকমাস ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল ৷ কিন্তু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে, এই ভেবেই দুশ্চিন্তায় বেশ কিছুদিন খাবার মুখে তোলেননি রিঙ্কুর বাবা খানচন্দ্র সিং ৷ প্রায় সাত মাস লেগেছিল রিঙ্কুর পুরোপুরি ফিট হতে ৷
২০১৬ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবির্ভাব রিঙ্কুর ৷ মাত্র ১৭ বছর বয়সেই উত্তর প্রদেশের হয়ে খেলা শুরু করেন তিনি ৷ তবে ঘরোয়া ক্রিকেট দীর্ঘদিন খেললেও রিঙ্কু সবার নজরে আসে কেকেআরের হয়ে খেলার সময়েই ৷ ২০১৮ সালে আইপিএলের নিলামে ৮০ লক্ষ টাকা পেয়ে জীবনই বদলে গিয়েছিল রিঙ্কুর ৷ ভাবতেই পারেননি কখনও একসঙ্গে এত বিপুল অঙ্কের টাকা পাবেন ৷ নিলামে ২০ লক্ষ টাকা পাওয়ার আশা করেছিলেন ৷ কিন্তু ৮০ লক্ষ টাকা পাওয়ার পর দাদার বিয়েতে সাহায্যের পাশাপাশি ভাল বাড়ি বানাতেও সমর্থ্য হয়েছিলেন রিঙ্কু ৷
আইপিএলে সেভাবে এত বছর সুযোগ পাচ্ছিলেন না ৷ কিন্তু এ বছর যখন পেলেন, তখন ব্যাট হাতে নিজের জাত চেনাতে আর দেরি করেননি রিঙ্কু ৷
আরও পড়ুন- রোজ রাতে দুধের সঙ্গে এই ফল খেলে দূর হবে অনিদ্রার সমস্যা, বাড়বে যৌন ক্ষমতাও
রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ২৩ বলে ৪২ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে জনপ্রিয়তা পেলেও এখনও রিঙ্কু ভাঙাচোরা বাড়িতেই থাকছেন। কিন্তু কেন? অন্যান্য বাবা-মায়ের মতো রিঙ্কুর পরিবার চেয়েছিল, ছেলে ভাল করে পড়াশোনা করে চাকরিতে যোগ দেবে। তবে রিঙ্কুর ক্রিকেটে এত প্রতিভা দেখার পর তাঁকে খেলতে আর কেউ বাধা দেননি ৷
কিন্তু আইপিএলে ছেলের অভাবনীয় সাফল্যের পরেও রিঙ্কুর বাবা-মা পুরনো জরাজীর্ণ বাড়িতেই থাকছেন। এর কারণ সম্পর্কে রিঙ্কু সিং বলেন, বাবাকে নতুন বাড়িতে থাকার জন্য বলেছিলাম। তবে বাবা এই ভাঙাচোরা বাড়িতেই থাকতে চান। ৩৫ বছর ধরে এই বাড়িতে উনি থেকেছেন। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে তিনি মানিয়ে নিয়েছেন। এতে অবশ্য রিঙ্কুদের পারিবারিক বন্ধনে কোনও সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। প্রতিদিন অনুশীলনে যাওয়ার আগে বাবা-মার সঙ্গে পুরনো বাড়িতে দেখা করে একসঙ্গে খাবার খান রিঙ্কু। আগামী বছর রিঙ্কুকে রেখেই দল সাজানো কথা জানিয়েছে কেকেআর ফ্র্যাঞ্চাইজিও ৷