মিলখার জন্ম অবিভক্ত ভারতের মজফফরপুর জেলার গোবিন্দপুরম গ্রামে। দেশ ভাগের সেই কঠিন সময়ে নিজের চোখের সামনে দেখে ছিলেন বাবা-মাকে জীবন্ত পুড়ে মরতে। প্রাণ বাঁচাতে ১৮/১৯ বছর বয়সে রাতের অন্ধকারে ট্রেনের সিটের নিচে বসে পালিয়ে এসেছিলেন মুলতান থেকে। তেরো জন ভাই বোনের মধ্যে মিলখা ছিলেন অষ্টম।
চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে শৈশব কেটেছিল। বানভাসি ফিরোজপুর থেকে ট্রেনের মাথায় চেপে দিল্লি চলে আসতে হয়েছিল শুধুমাত্র বাঁচার তাগিদে। পনেরোটা দিন কেটে ছিল দিল্লির রেল স্টেশনে। ঠিকমতো খাবার জুটত না। একটা সময় এমন ছিল, অভাবের তাড়নায় পেট চালাতে মালগাড়ি থেকে কয়লা, চাল চুরি করে বিক্রি করতে হতো দিল্লির খোলা বাজারে। নিজের আত্মজীবনীতে সেই সব দিনের কথা মনে করতে গিয়ে শেষ বেলাতেও চোখ ভিজে আসতো ফ্লাইং শিখের।
advertisement
এখানেই শেষ নয়। ভাগ্যের ফেরে রাত কাটাতে হয়েছে তিহার জেলের অন্ধকার কারাগারে। কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রীড়াবিদের দুর্দশা চোখে দেখা যেত না। নিয়মিত খাবার জুটত না। দিল্লি থেকে ট্রেনে যাতায়াতের সময়ে স্থানীয় ছাতড়া স্টেশনে বিনা টিকিটে ধরা পড়ে সেদিনের সেই কিশোর। জরিমানার ২৫ টাকা দেওয়ার সামর্থ ছিল না। জায়গা হয়েছিল দাগি খুনি ডাকাতদের সঙ্গে তিহার জেলে। একটা সময় তো এমন ভেবেছিলেন যে জীবনটা অন্য খাতে বইবে।
কিন্তু ছোটবেলার সেই লড়াই আর হার না মানা মানসিকতা মিলখা কে পৌঁছে দিয়েছিল ১৯৫৬-র মেলবোর্ন অলিম্পিকে। তারপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোম অলিম্পিকে চতুর্থ হওয়ার আফশোসটা তাড়িয়ে নিয়ে গেছে মিলখাকে।
PARADIP GHOSH