অর্চনা দেবী বলেন, তিনি ছোটবেলায় চরম অভাবে দিন কাটিয়েছেন। একসময় ধান চাষ থেকে সাইকেলের লিক ঠিক করা সব তাঁকে করতে হয়েছে । তবে তিনি পড়াশোনায় খুব ভাল ছিলেন । ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে চাকরিকরে দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াবেন । সেইমত তিনি আজ এই কাজ করে চলেছেন । তবে এই কাজ নতুন নয় , ছোট থেকেই তিনি পরোপকারীছিলেন । নিজে না খেয়ে অন্যকে খাইয়ে দিতেন খাবার । ছোটবেলার ছোট প্রচেষ্টা আজ বড় আকার ধারণ করেছে ।২০১২ সালে অর্চনা দেবীর জরায়ুতে প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ে । তারপর ২০১৫ সালে প্লীহায় ক্যানসার ধরা পড়ে । পরবর্তীতে আবার ২০২২ সালে লিভার এবং কিডনিতে তারক্যানসার ধরা পড়ে। এখনও পর্যন্ত তিনি ১৬টা কেমো নিয়েছেন। তবে নিজে ক্যানসার আক্রান্ত হলেও , তাঁর মনের জোর ব্যাপক।
advertisement
আরও পড়ুন: ৩০ ফেব্রুয়ারি! হ্যাঁ, এই দিনটিও এসেছে পৃথিবীতে! কবে জানেন তো? শুনলে যেন আকাশ থেকে পড়বেন
এখনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে রোগীদের তিনি পরিষেবা দেন। কারও টাকার দরকার হলে , ওষুধ অথবা খাবারের প্রয়োজন পড়লে হাসিমুখে সবটা দিয়ে আসেন তিনি । এককথায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অর্চনা দেবী । এই প্রসঙ্গে রাহুল শর্মা নামে গুসকরা শহরের এক বাসিন্দা বলেন , তিনিও একটা সময় অর্চনা দেবীর কাছে অনেক সাহায্য পেয়েছেন। তিনি বলেন , তাঁর বাবার নাম রাজু শর্মা । তাঁদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। পরিবারের সব দায়িত্ব ছিল বাবার উপর। ২০১৩ সালে হঠাৎ বাবার স্ট্রোক হয়। সেই সময় পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন অর্চনা দেবী তাঁদের খুব সাহায্য করেছিলেন। ওষুধ থেকে টাকা পয়সা দেওয়া, সবরকম ভাবে সাহায্য করেছিলেন। এখন তাঁর বাবা বেঁচে রয়েছেন। বর্তমানে আগের তুলনায় একটু সুস্থ।
অর্চনা চট্টোপাধ্যায় মাসে বেতন পান প্রায় ৮০ হাজার টাকা । বয়সও হয়েছে প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। পরিবারে রয়েছে স্বামী, মেয়ে , ছেলে , বৌমা এবং নাতনী। বর্তমানে তিনি যে টাকা বেতন পান , সেই টাকা দিয়ে ইচ্ছে করলেই শেষ জীবন তিনি রাজকীয় ভাবে কাটাতে পারেন। তবে তা তিনি করেননি, সকলের আনন্দেই যেন আনন্দ পান তিনি । প্রাপ্ত বেতনের প্রায় সবটাই বিলিয়ে দেন ।
আরও পড়ুন: বলুন তো, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ কোনটি? এত সহজ প্রশ্ন, অথচ ৯৯%-ই জানেন না উত্তর! আপনি জানেন?
এই ধরণের কাজ করার জন্য তাঁকে বাড়িতেও অনেককথা প্রথম দিকে শুনতে হয়েছে । তবে পরিবারের সদস্যরাও এখন অর্চনা দেবীকে এই কাজে বাধা দেন না । যতটা পারেন তাঁরাও সাহায্য করেন ।নিজে ক্যানসারের রোগী হয়েও হাসি মুখে সাহস জোগান অন্য রোগীদের। অন্যের আনন্দে তিনি আনন্দ পান, দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোই যেন মূল ধর্ম অর্চনা দেবীর। অর্চনা চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন তিনি আগামী দিনেও এই ধরনের কাজ চালিয়ে যাবেন ।
—— বনোয়ারীলাল চৌধুরী