হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। এই উৎসব অবশ্য আজ শুধু পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভিনরাজ্য সহ দেশের একাধিক রাজ্যে দুর্গাপুজো হয়। সেইসব পুজোর মণ্ডপ সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী এখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থেকে পৌঁছে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলার বুকে ভিনজেলার ফেরিওয়ালাকে হেনস্থা! গালিগালাজ, মারধরের অভিযোগ, কী বলছে অভিযুক্তের পরিবার?
advertisement
একসময় বাঁশ ও বেত শিল্পের রমরমা ছিল। তখন বাঁশ দিয়ে মাথাল, ওরা, ভার ইত্যাদি তৈরি হত যা কৃষিকাজে ব্যবহার করা হত। এছাড়া মাছ ধরার চাই, খালুই, জুইতা ইত্যাদি মৎস্যজীবীদের হাতিয়ার; বাঁশের দোচালা, চারচালা ও আটচালা ঘর; বাঁশের বেড়া, ঝাপ, বেলকি, দরমা ছিল গ্রাম বাংলার নিজস্ব শিল্প, সংস্কৃতির প্রতীক। আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত বর্শা, ঢাল, লাঠি, তীর, ধনুক ও বল্লম হিসেবে বাঁশের ব্যবহারও লক্ষণীয় ছিল। সেই সঙ্গেই পাল তোলা নৌকা, গরুর গাড়ির ছাদ বা ছই নির্মাণ, বাঁশি, লোকবাদ্যযন্ত্র, বাঁশের খেলনা ও পুতুল, আসবাব হিসেবে মোড়া, চাটাই সবেতেই ছিল বেত শিল্প।
কালের নিয়মে ধীরে ধীরে সব হারিয়ে গেলেও এখন আবার বাঁশের তৈরি আসবাব, ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম, কলম ইত্যাদির চাহিদা বাড়ছে। দাসপুরের প্রত্যন্ত দাদপুর গ্রামে এখন তাই যেন উৎসবের আমেজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহিলারা সংসারের কাজ সামলে হাতে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন শিল্পসামগ্রী তৈরি করছেন। বাঁশ কেটে, ঘষে, মেপে তাঁরা চমৎকার সব ডিজাইন বানাচ্ছেন।
গ্রামীণ মহিলাদের এই সৃজনশীল কাজ শুধু তাঁদের শিল্পকলা নয়, জীবিকারও এক বড় ভরসা। দাদপুর গ্রামের তৈরি বাঁশ শিল্প এখন সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে। মুম্বই সহ একাধিক বড় শহরের দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজানোর জন্য এইসব সামগ্রী ভীষণ জনপ্রিয়। শুধু ভিনরাজ্য নয়, দেশের আরও অনেক রাজ্যের প্যান্ডেলে ব্যবহৃত হবে দাসপুরের বাঁশ শিল্প।
আরও পড়ুনঃ বিজেপি শাসিত ওড়িশায় বাঙালি ব্যবসায়ী নিখোঁজ! ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ নেই, উদ্বিগ্ন পরিবার
এলাকার মহিলারা জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজোর আগে থেকেই তাঁদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। এই কাজ করে তাঁরা সংসারের আর্থিক চাপে খানিকটা স্বস্তি দিতে পারেন। বাঁশের তৈরি সাজসজ্জা যেমন মণ্ডপের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনই এর ওপর নির্ভর করে অসংখ্য পরিবারের আয়ের পথ খুলে গেছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
স্থানীয় মানুষদের দাবি, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সহযোগিতা পেলে এই বাঁশ শিল্প আরও প্রসারিত হতে পারে। এতে একদিকে দুর্গাপুজোর থিম আরও বৈচিত্র্যময় হবে। অন্যদিকে দাসপুরের আরও বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। দাসপুরের দাদপুর গ্রামে আজ যে বাঁশ শিল্পের জোয়ার বইছে, তা শুধু দুর্গাপুজোর মণ্ডপকেই সাজাচ্ছে না, বরং গ্রামীণ মহিলাদের জীবনে আলোর প্রদীপ জ্বালাচ্ছে।