সংসারের দায় সামলাতে করতে হয়েছে লোকের বাড়ির কাজ, এমনকি মুড়ি কলেও খাটতে হয়েছে তাঁকে। তবে কষ্ট হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। ছেলেকে বড় করে তুললেন অদম্য পরিশ্রমে, আর নিজের মনে জমিয়ে রাখলেন স্বপ্ন, স্বপ্ন একদিন আলাদা কিছু করার। ছেলের বুদ্ধিতে ২০১৪ সালে গ্রামের কয়েকজন মহিলাকে একত্রিত করে তৈরি করলেন প্রথম মহিলা ঢাকিদের দল। শুরুতে ছিল মাত্র ১০ জন। ঢাক কেনার মতো অর্থ ছিল না কারও হাতে। তখন সেই মহিলারাই অন্যের কাছ থেকে ধার করে টাকা তুলে দিলেন চিত্রা দেবীর হাতে। তারপর শুরু হল ঢাক বাজানোর প্রশিক্ষণ। গুরু হলেন গ্রামেরই ঢাকি নাদু দাস।
advertisement
আরও পড়ুন – Maa Tara Darshan: মা তারার দর্শনে মন ভরেনি, ঠেলাঠেলিই সার, বছরের ‘এই’ সময়ে তারাপীঠ এলে হবে ভক্তিভরে দর্শন
কিন্তু শুধু প্রশিক্ষণ পেলেই তো সব হয় না, চারিদিকে কটূক্তি, বাঁকা কথা বলার লোকের অভাব নেই! অনেকের কাছেই শুনতে হয়েছিল “মেয়েরা ঢাক বাজাবে?” “এ তো অশুভ!।” তবে এসব শুনে থেমে যাননি চিত্রা দেবী, বরং প্রতিটি কটূক্তিকে তিনি শক্তি বানালেন। দিনের পর দিন অনুশীলন করে তৈরি করলেন এক নতুন ইতিহাস।
চিত্রা দাস বলেন, “অনেক পরিশ্রম করেছি, বহু কটূক্তি শুনেছি, তবে এখন ভাল লাগে। গ্রামের পুজো ছেড়েও অন্যদের আনন্দ দিতে ভিন রাজ্যে যায়, এতেই আমাদের আনন্দ।” আজ সেই চিত্রা ঢাকির দল ৩০ জন মহিলাকে উপার্জনের পথ দেখিয়েছে। রাজ্যের মাটি ছাড়িয়ে ঢাকের শব্দ গিয়েছে অসম, ওড়িশা, ত্রিপুরা, ভুবনেশ্বর, কলকাতা, গুয়াহাটি, পুরুলিয়া এমনকি এ বছর যাবে লখনউ আর রাঁচি পর্যন্ত।
চিত্রা দাসের ছেলে সীতারাম দাস বলেন, “মা এর জন্য আমারও গর্ব হয়। জীবনে মা অনেক পরিশ্রম করে আজ এই জায়গায় এসেছে।” যে চিত্রা একদিন অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন, আজ সেই চিত্রা দেবী লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা। ঢাকের তালে নাচিয়ে তুলছেন হাজারো মন, আর তাঁর কাহিনি শুনে বুক ভরে উঠছে গর্বে। চিত্রা দাস প্রমাণ করেছেন, মেয়েরা চাইলে যে কোনও বাধা টপকে ইতিহাস গড়তে পারে। সংগ্রাম, পরিশ্রম আর জেদ থাকলে একদিন পরিচিতি পাল্টে যায়। আজ তিনি আর শুধু চিত্রা নন, তিনি বহু মানুষের গর্ব, অনেকের অনুপ্রেরণা।
Input- Banowarilal Chowdhary