পুরো গ্রামটি জল দিয়ে ঘেরা, একদিকে ভাগীরথী এবং অন্যদিকে রয়েছে বাবলা নদী। গ্রামে স্কুল রয়েছে, যাতায়াতের জন্য ঢালাই রাস্তাও তৈরি হয়েছে, তবে দীর্ঘদিনের প্রধান একটি সমস্যার আজও কোনও সমাধান হয়নি। নদী বাঁধ ভাঙন এই গ্রামের প্রধান সমস্যা।
advertisement
শুধুমাত্র ভাঙনের কারণেই আতঙ্কে থাকেন গ্রামবাসীরা। একসময় গ্রামে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসবাস ছিল, তবে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১২০০ পরিবার। প্রায় ৩০০ পরিবার ভাঙনের কারণে গ্রাম ছেড়েছেন। গ্রামবাসী তথা বুথ সভাপতি আলতাব হোসেন শেখ বলেন, ‘‘আমাদের এই গ্রাম পুরো শ্রীলঙ্কার মত। সবই ঠিক আছে, একটাই সমস্যা শুধু ভাঙনের। এটার সমাধান হলে খুবই ভাল হয়।’’
বর্তমানে গ্রামের মধ্যে নদীর ধারে যাঁদের বাড়ি রয়েছে, তাঁরা সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন। তবে এই বর্ষার সময় সেই আতঙ্ক অনেকটাই বেড়েছে। এই বুঝি ভেঙে পড়বে বাড়ি, সেই চিন্তাতেই রাতের ঘুম উড়েছে বহু মানুষের। গ্রামে এমনও বাসিন্দা রয়েছেন যাঁদের ভাঙনের কারণে পরপর দুবার বাড়ি ভাঙার পরেও তৃতীয় বার নতুন বাড়ি করে বসবাস করতে হচ্ছে। তবে তৃতীয় বাড়িতেও দিন কাটছে আতঙ্কের মধ্যে। গ্রামবাসী নুরবানু বিবি বলেন, ‘‘এই গ্রামেই দুবার বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর আমি তিন নম্বর বাড়ি করেছি। এখন স্বামী অচল, এরপর যদি এটাও ভেঙে যায় তাহলে আর করার সামর্থ্য নেই। এখন এই বাড়িটাও ভাঙনের কারণে ভাঙতে শুরু করেছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ যেন এই সমস্যার সুরাহা হয়।’’
গ্রামবাসীদের অভিযোগ এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় জানানোর পরেও কোনও সুরাহা হয়নি। দীর্ঘ বহু বছর ধরে সকলকে আতঙ্ক কে সঙ্গী করেই দিন কাটাতে হয়। মৌগ্রাম অঞ্চলের প্রধান পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই বিষয়ে আমাদের বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজ বিধানসভায় আবেদন করেছেন।
এর আগে সালার এবং বোলপুর থেকে ইরিগেশন এর দল এসে পরিদর্শন করে গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। বর্তমানে গ্রামবাসীদের দাবি একটাই, যেন দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। এইভাবে যদি আরও কয়েকটা বছর কেটে যায়, তাহলে হয়ত একদিন পূর্ব বর্ধমানের মানচিত্র থেকেই মুছে যাবে নূতনগ্রামের নাম।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী