শোলাশিল্প ভারতবর্ষের একটি প্রাচীন ও অন্যতম লোকজ শিল্প। শোলাশিল্পীরা নিজের কর্ম ও সৃজনশীলতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন লোকায়ত জীবনের নির্মোহ রূপ। শোলা, ছুড়ি, চাকু ও আঠার সাহায্যে তৈরি করছেন মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্ম। এক সময়ের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা শোলাকে মেধা, দক্ষতা এবং পরিশ্রম দিয়ে শিল্পে পরিণত করছেন শিল্পীরা। এখন যারা শোলাশিল্পের সঙ্গে জড়িত তাঁরা ‘মালাকার’ নামে পরিচিত। মালাকাররা বংশানুক্রমে শোলা দিয়ে বৈচিত্র্যময় বিয়ের টোপর, মুকুট, দেবদেবীর অলঙ্কার, চালচিত্র, পুজো মণ্ডপের অঙ্গসজ্জার দ্রব্যাদি, মালা, গহনা, খেলনা ও গৃহসজ্জার নানা দ্রব্য তৈরি করে থাকেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ধরা পড়েও শিক্ষা নেই! কোমরে বন্দুক নিয়ে ঘুরতে গিয়ে পুলিশের জালে যুবক
এই ব্যাবসায়ীদের কাছেই গ্রামের মানুষরা জলাশয় থেকে শোলপীঠ বা শোলা গাছ তুলে এনে বিক্রি করেন। বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের প্রত্যন্ত কয়েকটি গ্রাম রানিচক ও জোৎকানুরামগড়ে জমিতে জমে থাকা জমা জলে জন্মায় এই আগাছার মতো দেখতে উদ্ভিদ। শোলা গাছ তুলনায় অনেক হালকা। এই হালকা শোলা দিয়েই তৈরি হয় বাঙালির টোপর, মুকুট, মালা, প্রতিমার গহনা সহ নানান শৌখিন দ্রব্যাদি।
দাসপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের কিছু মানুষ বছরে একবারই এই শোলা গাছ জলা জমি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট দোকানে বিক্রি করেন। প্রতি তাড়া পিছু কখনও ১৭০০ টাকা, আবার কখনও ২০০০ টাকা করে বিক্রি করেন তাঁরা। সেই দোকান থেকে শোলা কিনে নিয়ে যান কারখানার মালিক বা ব্যবসায়ীরা। তারপর উপরের আস্তরণ তুলে ফেলে ভেতরের সাদা শোলা দিয়েই হাতের জাদুতে তৈরি হয় নানান কারুকার্য। এতেই সারাবছর শোলা শিল্পীদের পেটের ভাত আসে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পুজো এলে এমনিতেই চাহিদা বাড়ে শোলার জিনিসের। বাঙালির বিয়েবাড়িতে যেমন টোপর, মুকুট প্রয়োজন তেমনই পুজোয় শোলার মালা ছাড়াও শৌখিন নানা জিনিস দরকার হয়। তবে গ্রামের যারা জলাজমি থেকে গাছ তুলে নিয়ে আসেন তাঁদের ছাড়া এই শিল্প অসম্পূর্ণ। বিষাক্ত পোকামাকড়, সাপের ঝুঁকি নিয়েও তাঁদের এই পরিশ্রমও শোলাশিল্পে বিশেষ অবদান রাখে।