ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ জুলাই। ওই দিন রাত সাড়ে ন'টার পর চাকীরহাটে কাশীনাথ চাকীর শ্রীহরি ডেকোরেটর্সে আগুন লেগে যায়। ক্ষতি হয় অনেকটাই। ঘটনারস্থলে পুলিশ এসেও কীভাবে আগুন লাগল, তা বুঝতে পারেনি। মালিকও বুঝতে পারেননি আগুন লাগার প্রকৃত কারণ।
তবে সেদিনই তত্ত্ব খাঁড়া করেছিলেন গোডাউনের মালিক কাশীনাথ চাকী। এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ৬ অগাস্ট আগুন লেগে যাওয়া ডেকরেটরের মালিক কাশীনাথ চাকী গ্রামের কয়েকজন মাতব্বরদের নিয়ে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অন্য এক ডেকরেটরের মালিক তারকনাথ আড়িকে নানান অজুহাত দেখিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পালপাড়ায় সুকুমার মাইতি নামে এক গনককারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে গনককার তারকনাথবাবু ও তার ছেলে এই আগুন লাগানোর ঘটনায় যুক্ত বলে দাবি করেন সকলের সামনে।
advertisement
আরও পড়ুন: সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ, গড়া হচ্ছে দশটি টিম, রাজ্যে আরও মারাত্মক অভিযানে নামছে ইডি!
তারপরই ক্ষতিপূরণের বিধান দিয়ে তারকনাথ বাবুর পরিবারের উপর নানান চাপ তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ৬ অগাস্ট সন্ধা থেকে তারকনাথ ও তার দুই ছেলে, ৯ মাসের শিশুর মা দিপালীর উপর প্রকাশ্যে জুলুম ও মারধোর শুরু হয় বলে অভিযোগ ওঠে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে। সন্ধায় তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একটি জায়গায়। সেখানে একাধিক মানুষের সামনে জোর করে আগুন লাগানোর কথা স্বীকার করানো হয় ও সাদা কাগজে সই করে জমির দলিল কেড়ে নিয়ে ১ কোটি ১০ টাকা জরিমানার নিদান দেয় মাতব্বররা।
আরও পড়ুন: বাংলায় এবার আরও বড় অভিযান? ভিন রাজ্য থেকে এল অফিসার, তোলপাড় ইডি-র এক বৈঠকে!
আক্রান্ত পরিবার ওখান থেকেই পুলিশকে জানালে দাসপুর থানার পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। ওই পরিবারকে মাতব্বরা হুঁশিয়ারি দেয়, পুলিশের কাছে মুখ না খুলতে। এমনকি দোষীদের ঘর বাড়ি সম্পত্তি জোর করে দখল নিয়ে টাকা আদায় করে নেবে বলেও অভিযোগ ওঠে। আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ দাসপুর থানা এই ঘটনায় কোনও সহযোগিতা করেনি। শেষমেশ ৯ অগাস্ট ওই পরিবার ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, বেশ কয়েকজন মাতব্বরদের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় এখনও কোনও আইনি পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। পরবর্তী কালে এই ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয় বা মাতব্বররা শাস্তি পায় কিনা সে দিকেই তাকিয়ে এলাকার মানুষজন। বর্তমানে প্রবল চাপে ভয়ে আড়ি পরিবার প্রাণ রক্ষার দায়ে সবাইকে নিয়ে ঘরছাড়া। অন্যদিকে গ্রামের মোড়লরা সালিশি সভার কথা স্বীকার করলেও সেই সময় জোর করে সাদা কাগজে সই করানো এবং মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন।
ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নীশ্বর চৌধুরী বলেন, "দুই দিনের দুটি ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। আগুন লাগানো, সালিশি সভা ডাকা, এই ঘটনায় যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।''
---সুকান্ত চক্রবর্তী