আরও পড়ুনঃ ফুলের দামে ‘আগুন’, বিশ্বকর্মাপুজোয় পকেটে ছ্যাঁকা
৭টা ২৬ মিনিটের ডাউন শান্তিপুর শিয়ালদহ লোকালের প্রথম কম্পার্টমেন্টের দ্বিতীয় গেটে ডেইলি প্যাসেঞ্জারদের উদ্যোগে এই ভ্রাম্যমান পুজো এবার ১৭ তম বর্ষে পদার্পণ করল। তবে কখনও ৭টা ১০ কখনও বা ৭টা ২৮ টাইম টেবিলের হেরফের হয়েছে তবে বিগত বছরে পুজোর রীতিনীতি পরিবর্তিত হয়নি এতোটুকু! এমনকী করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও না। উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা যায় ওই কম্পার্টমেন্টে শান্তিপুর এবং শিয়ালদহ পর্যন্ত পরবর্তী প্রত্যেক স্টেশন থেকে ওঠা নিত্যযাত্রীদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় প্রগাঢ় এবং পারিবারিক। শীতকালে বনভোজন, গৃহে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে একে অন্যের। ১৬ বছর আগে সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৩০ জনের মতন থাকলেও বর্তমানে তা পার হয়েছে ১৭৫ এর উপর। শান্তিপুর থেকে শিয়ালদহ যাওয়া এবং আসা মিলিয়ে দিনের অর্ধেক অংশ বিশ্বকর্মার তৈরি যন্ত্রাংশের উপর জীবন কাটানো, চাকরি ব্যবসা দোকান কর্মচারী, হকার যে যাই হোক না কেন পরিবার সদস্যদের থেকেও নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা রক্তের সম্পর্কের থেকে কোনো অংশে কম নয়। তবে পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকেই তাকিয়ে থাকেন তাদের ফেরার অপেক্ষায়, ছুটির দিন কটা বাদ দিয়ে বছরের প্রত্যেকদিনই লোহার কল কব্জা ইঞ্জিনের ওপর দাঁড়িয়ে জীবন জীবিকা। যার যার স্রষ্টা বিশ্বকর্মা। তাই তাঁর কৃপা পেতেই এই পূজার সূত্রপাত।
advertisement
তবে প্রত্যেক সদস্যকে পুজো উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় একটি ব্যাগ পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য প্রসাদ এবং মিষ্টির প্যাকেট। কথা বলতে বলতে প্লাটফর্মে ঢুকে গেছে ট্রেন। শান্তিপুরের সদস্যরা প্রতিমা পুজোর উপকরণ ট্রেনে তুলতে ব্যস্ত তৎপর ট্রেনের সামনে মাঙ্গলিক কলা গাছ ফুলের মালা লাগাতে। ঢাকি বাজাচ্ছেন ঢাক। এরই মাঝে সমগ্র ট্রেন যাত্রী একবার করে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে প্রণাম করে যাচ্ছেন বিশ্বকর্মাকে। নিত্যযাত্রীরা যে যার নির্ধারিত কম্পার্টমেন্টে গেলেও আগ্রহী বেশ কিছু ক্যাজুয়াল প্যাসেঞ্জার পুজো দেখতে দেখতে যাবেন বলে ভিড় করেছেন এই কম্পার্টমেন্টেই। ইতিমধ্যেই ট্রেন ছাড়ার সবুজ সংকেত জ্বলে উঠেছে, স্টেশন মাস্টার রেল কর্মী আরপিএফ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রত্যেকের উপহার-মিষ্টি পৌঁছে দিয়ে সকলেই হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়েন ট্রেনে।
ডাউন শান্তিপুর শিয়ালদহ লোকাল শান্তিপুর থেকে আজও ছাড়লো সকাল ৭টা ২৬ মিনিটে। তারপর থেকেই তোড়জোড় শুরু হয় পুজোর, ফলকাটা নৈবেদ্য সাজানো, ঠাকুরমশাইয়ের পুজোর যাবতীয় উপকরণ গুছিয়ে হাতের কাছে দেওয়া। ধুনুচি, প্রদীপ, ধুপ থাকলেও আগুন শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার্থে । ঠাকুর মশাই পূজায় বসেন ৭ঃ৫৭ তে ট্রেন তখন রানাঘাট। পুজো সম্পন্ন হয় শ্যামনগরে ৮টা ৪৫। এরপর , ঠাকুর মশাই এবং ঢাকি দক্ষিণা নিয়ে নেবে পড়েন আপ শান্তিপুর লোকাল ধরে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে।ব্যারাকপুর পর্যন্ত চলে প্রসাদ বিতরণ । ট্রেন যখন শিয়ালদহ ৯টা৪০ মিনিটে পৌঁছায় সকলেই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য নেমে পড়েন। বিশ্বকর্মা কিন্তু রয়ে যান সর্বশেষ সময় ট্রেন চলাচলের অর্থাৎ মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। এর মধ্যে অবশ্য কোন শাখায় কতবার ওই ট্রেন যাতায়াত করেছেন তা বলতে পারবেন একমাত্র বিশ্বকর্মাই। তবে বিসর্জন নিয়ে কোন সমস্যাই নেই। প্রতিবার শান্তিপুর স্টেশন মাস্টারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির সহযোগিতায় কারশেডে থাকাকর্মীরাই মধ্যরাত্রি প্রতিমা নামিয়ে পরের দিন সকালে বিসর্জন দেন। বিসর্জনের পারিশ্রমিকও নাকি দেওয়া থাকে প্রতিমারি কোন একটি অংশে লুকানঅবস্থায়, যা শুধু যিনি বা যারা বিসর্জন দেন তারাইপান।
Mainak Debnath





