উৎসবের প্রথম দিন একতারা মঞ্চে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়, আর সেই পুরস্কার তালিকা ঘিরেই এবারও নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই আবহেই আলোচনায় উঠে এসেছেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের বাসিন্দা, বিশিষ্ট লেখক রাধামাধব মণ্ডল। গত বছর বহুদিন পর লিটল ম্যাগাজিন মেলায় আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি। এবছর এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ডাক না পেলেও তাঁর আশা, এবারও তিনি আমন্ত্রিত হবেন।
advertisement
তবে একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, পেশায় সাহিত্যিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলা একাডেমির এই অনুষ্ঠানে তাঁকে যথাযথ সম্মান না দিয়ে শুধুমাত্র কবিতা পাঠের জন্যই ডাকা হয়, যদিও তাঁর মূল পরিচিতি গদ্য লেখক হিসেবেই।রাধামাধব মণ্ডল দেশ-বিদেশের একাধিক সংবাদপত্র ও পত্রিকায় নিয়মিত গদ্য লেখেন এবং ইতিমধ্যেই বাংলা ভাষায় এক স্বতন্ত্র গদ্যভাষা নির্মাণ করেছেন। এই প্রজন্মে তিনিই একমাত্র লেখক যিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
গ্রামে বসেই শহরের নামী কাগজে লেখা, বইমেলায় পাঠকদের ভিড় ও সই সংগ্রহের দীর্ঘ লাইন তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বাংলার সমাজজীবন, লোকসংস্কৃতি, নস্টালজিয়া ও প্রান্তিক মানুষের ইতিহাস তাঁর লেখার মূল বিষয়। ‘বহুরূপী’, ‘দেহজীবী’, ‘পাখমারা’, ‘শববাহকের গান’, ‘টহলগান’-সহ ডাকাত ও চোরদের ইতিহাস নিয়ে লেখা তাঁর বইগুলি পাঠকমহলে বিশেষভাবে সমাদৃত। গত বছর কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস ‘ভক্তকবি জয়দেব’ ব্যাপক সাড়া ফেলে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
লেখালেখির ২৫ বছরে পা দিতে চলা রাধামাধব মণ্ডলের বক্তব্য, গ্রামীণ জীবন নিয়ে লেখালেখি করাই হয়তো অনেকের অস্বস্তির কারণ। তবে তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। তাঁর কথায়, “মহাকালই শেষ ও নির্মম বিচারক, শহুরে দাপট না গ্রামের মাটির লড়াই, কে টিকবে তা সময়ই বলবে।” পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম তাঁর হাত ধরেই সাংস্কৃতিক মানচিত্রে নিজস্ব একটি জায়গা করে নিয়েছে। বিশিষ্ট লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে একসময় নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন রাধামাধব মণ্ডল। সেই অভিজ্ঞতা ও লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় নিজ উদ্যোগেই তিনি শুরু করেন আউশগ্রাম বইমেলা এবং আউশগ্রাম উৎসব যা ধীরে ধীরে জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
রাধামাধব মণ্ডল জানান, এই উদ্যোগে তিনি একা নন। তাঁর দাবি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ দোলা সেন-সহ একাধিক জনপ্রতিনিধি তাঁর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। গ্রামকে কেন্দ্র করেই সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ, এই বিশ্বাসে আজও তিনি নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শহরের মঞ্চে সম্মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, গ্রামের মাটিতেই নিজের শক্ত জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন রাধামাধব মণ্ডল। তাঁর লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ প্রমাণ করে দেয়, সাহিত্যচর্চার কেন্দ্র শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ নয়, গ্রামের মাটিতেও জন্ম নিতে পারে সময়কে চ্যালেঞ্জ জানানো শক্তিশালী সাহিত্য ও সংস্কৃতি।






