সিঙ্গুরের বাসিন্দা দৌদীপ সিঙ্গুরের মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর নালিকুল বাণীমন্দির থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। পরে হুগলি টেকনিক পলিটেকনিক কলেজে থেকে ডিপ্লোমা করে। এখন হাওড়ার ধুলাগড় একটি বেসরকারি কলেজে বি টেক পড়াশোনার সঙ্গেই এলএনটিতে কনস্ট্রাকশনের পাইপলাইনের কাজে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে কর্ণাটকের বেলগাঁওয়ে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তার পাঠানো ক্যামেরাতেই প্রধম ধরা পড়ে বন্ধ টানেলের মধ্যে এখনও রয়েছে প্রাণের স্পন্দন।
advertisement
আরও পড়ুন: দিঘায় এবার বিরাট চমক! পর্যটকদের জন্য দারুণ সুখবর! মন ভরে যাবে! জানুন
প্রথম দু’দিন ভেতর থেকে কোন খবরই বাইরে আসছিল না। ক্যামেরার পাঠানোর পরেই কাঁচের মতো স্বচ্ছ হয়ে যায় সবটাই । যদিও তাদের এই কাজ খুব একটা সহজ ছিল না। মাঝেমধ্যেই ওপর থেকে ভেঙে পড়ছে চাঙ্গোর, লোহার রোড। তার ওপর ছিল যন্ত্রের ভাইব্রেশন। ৫০০ থেকে ৬০০ জন মানুষ এই উদ্ধার কার্যে হাত লাগিয়েছিল। ছেলের এই সাফল্যে খুশি তার বাবা-মা সবিতা ও দিনেশ চন্দ্র খাঁড়া।
আরও পড়ুন: জ্বর-সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, গা-হাত-পায়ের ব্যথা কমাবে এক টুকরো আদা! জানুন কীভাবে খাবেন
দৌদীপের বাবা দীনেশ বাবু বলেন, উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন দেরাদুনে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ছেলেকে নিয়ে পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। শুরু হয় কাজ, যে পাইপের মধ্যে দিয়ে খাবার পৌঁছত সেই পাইপের মধ্য দিয়ে ক্যামেরা পৌঁছে দিয়েছিল ছেলে দ্রৌদীপ ও তার বন্ধু বাল চন্দ্র খিলাড়ি। যদিও প্রথম দিন তাদের বেগ পেতে হয়। ক্যামেরা ১২ মিটার পৌঁছতেই আটকে যায়।ফের শুরু হয় উৎকণ্ঠা। পরে দমকল পলি সরিয়ে দিতেই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যায় ক্যামেরা। শ্রমিকরা কি অবস্থায় রয়েছে তা প্রতিদিন চারবার করে দেখাতে হত ক্যামেরার মাধ্যমে। এতে শ্রমিকদের পরিবার যেমন আনন্দিত হয়েছে তেমনি আমারও গর্বে বুক ফুলে উঠেছে।
মা সবিতা দেবী বলেন, ছেলেকে পড়াশোনা শেখাতে গিয়ে অনেকটা কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। স্বামী সরকারি কাজ করতে গিয়ে তাকে বাইরে চলে যেত। ছেলেকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা সবটাই করতে হতো আমাকে। যদিও ছোটবেলা থেকেই একটু ভীতু ছিল ছেলে। আর আজ সেই ছেলেই সমস্ত ভয় কাটিয়ে যে কাজ করেছে সেটা আমার কাছে যেমন গর্বের তেমনি আনন্দের। যদিও ছেলের এই কাজে আমিও কিছুটা উদ্বেগ ছিলাম ।কখন কি ঘটে যায়? ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি সবাই যেন ভাল হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে। কার্য সফল হওয়ার পরেই ছেলে আমাকে ফোন করে জানায় “মা আমি পেরেছি”।
ভিডিও কলের মাধ্যমে লোকাল ১৮ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দৌদীপ যে মেশিনের সাহায্যে ছবি তুলেছিল সেই মেশিনটি দেখায়। এই মেশিনের সাহায্যেই প্রথম একচল্লিশ জনের ছবি প্রকাশ্যে আসে। ভারতের এত বড় উদ্ধারকার্যে বাংলার সন্তান হিসেবে সামিল হতে পেরে আমরা গর্বিত। আগামী দিনে যে কোনো উদ্ধার কার্যে যদি আমাদের প্রয়োজন হয় এবং কোম্পানি যদি তাদের অনুমতি দেয় সেটা যত কঠিন কাজই হোক না কেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো। সিঙ্গুরের ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত জেলাবাসী।
রাহী হালদার