২০১৮ সালে ম্যাটরিমনি সাইটে ফাল্গুনীর খোঁজ মেলে। তারপর দেখে শুনেই ছেলে শুভঙ্করের সঙ্গে ফাল্গুনীর বিয়ে দেন সুবল ঘোষ। তখন ফাল্গুনী ও তার মা আরতি দেবী দমদমে থাকতেন। তার আগে কোনও সময় কুমোরটুলি এলাকায়ও ছিলেন বলে জানতে পারেন। শ্বশুর বাড়িতে জানানো হয়, বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন বাবা। তবে, হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় তাঁর। তারপর থেকেই মেয়ে ফাল্গুনী টিউশন করে ও মা আরতী দেবী টুকটাক কাজের আয়ে চলতে সংসার।
advertisement
আরও পড়ুনঃ উচ্চতা অনুযায়ী কত ওজন হলে ‘পারফেক্ট’? বয়সের আন্দাজে ‘ঠিক’ কত হওয়া উচিৎ? চার্ট দেখে মিলিয়ে নিন…
ফাল্গুনী উচ্চ মাধ্যমিকে বসলেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বিয়ে হয়ে জোড়হাটে গেলে, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ফাল্গুনীর নানা আচরণ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কাছে এলাকায় সম্মানহানির জায়গায় নিয়ে যায়। কিছুদিন অন্তর কলকাতায় যাওয়ার জন্য জেদ করত ফাল্গুনী। এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পাকাপাকিভাবে কলকাতা চলে আসে।
ফাল্গুনীর স্বামী অর্থাৎ সুবল ঘোষের ছেলে শুভঙ্কর সেই সময় ইলেকট্রনিক্সের টুকটাক কাজ ও বাবার ব্যবসায় সাহায্য করতেন। যে পিসি শাশুড়িকে খুনের অভিযোগে, সেই সুমিতা ঘোষ পরিবারে সবথেকে ছোট হওয়ায় ছিলেন দাদাদের আদরের। জোড়হাটেই ঘোষ পরিবারের বাড়ির উল্টোদিকেই থাকতেন সুমিতা। বিয়ে হলেও, স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর থেকে সন্তানহীনা ওই পিসি শাশুড়ি একাই থাকতেন। বাড়ি ভাড়া থেকে ইনকাম, নিজের কিছু সোনাও ছিল। ঘুরে ফিরে নিজের মতো করে থাকতেন।
জানা গিয়েছে, গত বছর অক্টোবরে শিয়ালদহে বোনের বাড়িতে উঠেছিলেন ফাল্গুনী। তবে ততদিনে, শিলিগুড়িতে শ্বশুরবাড়ির তরফের এক আত্মীয়র বাড়িতে সোনা ও টাকা চুরির ঘটনায় হাতে নাতে ধরা পড়ায় ফাল্গুনীর চরিত্র প্রকাশ্যে চলে আসে। যদিও এরপর শ্বশুরবাড়ির তরফেই তাকে জামিন করিয়ে শুধরে যাওয়ার কথা বলা হয়।
সুবল ঘোষ আরও বলেন, ‘কোনওভাবেই সন্তান চাইত না ফাল্গুনী। তার গাফিলতিতেই অন্তঃসত্তা অবস্থায় এক মাসের মধ্যে মৃত্যু হয় সন্তানের।’ পড়শিরা জানায়, রাতে তার বাড়িতে ছেলেদের আনাগোনা লেগেই থাকত। প্রতিরাতে মদ্যপানেও আসক্তি বাড়তে থাকে স্ত্রীর। প্রথম অবস্থায় সেই কথা জানাতে সংকোচ হলেও, ঘরের অশান্তি পরিবারের সকলের সামনে চলে আসে। অসামাজিক নানা কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, অসামাজিক কাজের পাশাপাশি মদ্যপানের অভ্যাস থাকাতেই সন্তান চাইত না ফাল্গুনী।
জানা গিয়েছে, সুমিতা যখন কলকাতায় আসেন তখনও তার কাছে বেশকিছু সোনার গয়না ছিল, কিছু ক্যাশও ছিল। তবে ডিভোর্স ফাইল করার পরও কেন এত দীর্ঘ বছর ধরে শ্বশুরবাড়ির তরফে পিসি শাশুরির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল ফাল্গুনী তা এখনও পরিষ্কার নয় ঘোষ পরিবারের কাছে। ডিভোর্স না দিয়ে খোরপোষের দাবি জানিয়েছিল বৌমা ফাল্গুন। ৩৯ বছরের শুভঙ্কর এই ঘটনার পর থেকেই ট্রমায় রয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা, খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে নিজেকে একা করে ফেলেছেন বলে দাবি।
শুধু মেয়ে ফাল্গুনী নয়, তার মা আরতী ঘোষের আচরণও কিছু সময় সন্দেহজনক ছিল বলেই জানিয়েছেন সুবল ঘোষ। ইতিমধ্যেই বারাসাত আদালত দু’জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। তবে চলছে তদন্ত, এখন দেখার টাকা পয়সা, সম্পত্তি নাকি অন্য কোন কারণেই পিসি শাশুড়িকে খুন করে দেহ লোপাটের ছক কষে ছিলেন মা-মেয়ে! যদিও অভিযুক্তদের তরফের আইনজীবীরা অবশ্য গভীর চক্রান্তের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
Rudra Narayan Roy