এই পরিবারে দেবী হরগৌরী রূপে পূজিতা হন। দাস বাড়ির পুজোর প্রচলন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার মাখনলাল দাস।কিন্তু সেই সময়ে ঘটে পুজো হত,মূর্তি পুজো হত না।পরবর্তী কালে মাখনলালের পুত্র বজেন্দ্রলাল দাস স্বপ্নাদেশ পেয়ে মূর্তি পুজো শুরু করেন। ব্রজেন্দ্রলাল দাসের নাতি শিবশঙ্কর দাস জানান, দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার কথা বলেন। আর সেই বছর থেকেই মা দুর্গার মূর্তি পুজোর প্রচলন হয় এই জমিদার পরিবারে।
advertisement
স্বপ্নাদেশ মোতাবেক তৈরি হয় মূর্তিও। একচালার কাঠামোয় বসে দেবী,তার ডান পাশে বসে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব। শিব-পার্বতীর দুপাশে লক্ষ্মী আর সরস্বতী, তাদের নীচে বসে কার্তিক আর গণেশ। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নয়, দাস পরিবারে হয় হরগৌরীর আরাধনা। আগে পুজোর জাঁকজমক আর জৌলুসও ছিল নজরকাড়া। ব্রজেন্দ্রলালবাবুর আমল থেকেই দাসবাড়ির দুর্গাপুজো হয়ে আসছে পঞ্চমী থেকে। পঞ্চমীতে বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু পুজো। আগে পুজো উপলক্ষে দরদালানে নিয়ম করে বসত যাত্রাপালা, গানের আসর।
দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া দোতলার ঘরের অন্দরমহল থেকে মহিলারা তা উপভোগ করতেন। দাসবাড়ির পুজোর বিশেষত্ব বলতে কাঁঠালি কলা, নারকেলের বিভিন্ন মিষ্টি আর গাওয়া ঘি-এর লুচি। প্রত্যেকদিনই দেবীর কাছে এই ভোগ নিবেদন করা হয়। শিবশঙ্করবাবুর দাবি, অষ্টমীর দিন সন্ধিক্ষণে এখনও দুর্গামণ্ডপের উপর শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। দশমীর দিন দেবীকে বিসর্জন করা হয়, তখনও আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল।
আরও পড়ুন : লালমাটির দেশে জাগ্রত এই সতীপীঠে দুর্গাপুজো পালিত হয় অনন্য অভিনব রীতিতে
তবে এই জমিদার বাড়ির দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়লেও, আজও আচার আচরণ মেনে হরগৌরীর পুজো হয়ে চলেছে দাস বাড়িতে। বছরের অন্যান্য সময় অনেকে বাইরে থাকলেও পুজোর সময় সকলেই মিলিত হন পূর্ব বর্ধমানের এই দাস বাড়িতে। পুজোর জৌলুস কমলেও জমিদার আমলের প্রথা আর ঐতিহ্যে মেনে আজও পুজো হয় দাস পরিবারে।তাই এই সাবেক পুজো দেখতে এখনও জমিদার বাড়িতে ভিড় জমান বহু মানুষ।