মুশিদাবাদের বড়ঞাঁ থানার ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে অবস্থিত ছোট একটি গ্রাম পাঁচথুপি। এখানে মোট ২২টি দুর্গাপুজো হয়। এর মধ্যে ১৬টি পারিবারিক দুর্গাপুজো। পাঁচথুপি গ্রামের অন্যতম দুর্গাপুজো এই সিংহবাহিনী বাড়ির দুর্গাপুজো ওরফে বড়তরফের দুর্গাপুজো।
আরও পড়ুনঃ বেলা গড়াতেই ঝমঝমিয়ে শুরু! দিনভর কেমন থাকবে জেলার আবহাওয়া? পূর্বাভাস কী বলছে দেখুন
advertisement
বাড়ির বর্তমান সদস্যরা জানিয়েছেন, এই দুর্গাপুজোয় সপ্তমীর দিন অধরাত্রী পুজো হয়। ঢাক ও কাঁসর না বাজিয়ে বিনা বাদ্যযন্ত্র সহকারে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে এই পুজো হয়ে আসছে। পুজোপাঠ সার্ত্যক মতে হলেও প্রতিদিন পায়েসের ভোগ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, দেবীর পুজো-পাঠের জন্য পুজোর চারদিন নতুন পিতলের বাসনে ভোগ দেওয়া হয়। প্রতিদিন নতুন বাসন দেওয়া হয়।
পরিবারের অন্য সদস্যরা জানিয়েছেন, ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে ঘোষহাজরা পরিবারের হরিপদ ঘোষহাজরা প্রায় ১২৫ ফুট উঁচু সুদৃশ্য মন্দিরটি নির্মাণ করেন। জমিদার পরিবারের ষষ্ঠপুরুষ দেবীদাস ঘোষহাজরা আনুমানিক সতেরো শতকে হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া থেকে এনে দেবী সিংহবাহিনীকে প্রতিষ্ঠা করেন। অষ্টধাতু নির্মিত দেবীই এই পরিবারের গৃহদেবতা। অভিনব দর্শনের এই মন্দিরটি ত্রিতলবিশিষ্ট। প্রথম দু’টি তল অষ্টকোণ বিশিষ্ট, দোতলায় মূল মন্দির। তৃতীয় স্তরে চূড়াটি অষ্টকোণ বিশিষ্ট সরু হয়ে উপরে উঠে চূড়ার সৃষ্টি করেছে, তার উপর আমলক ও পতাকাদণ্ড।
গর্ভগৃহের সামনে দশমহাবিদ্যার মূর্তি, বিভিন্ন গ্রন্থের উল্লেখ, তৃতীয় স্তরে দশাবতার মূর্তি ও দশবতার স্তোত্র খোদিত আছে। ছাদের উপর পূর্বদিকে সিংহ, প্রবেশদ্বারের দু’পাশে টেরাকোটার কাজ ও দরজায় কারুকার্য রয়েছে। বহুদূর থেকে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যায়। পাশেই দালান মন্দিরে শ্রীশ্রীসিংহবাহিনীর চণ্ডীমণ্ডপ রয়েছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এছাড়া বারো মাস তিরিশ দিন অষ্টধাতুর দেবী মূর্তি (সিংহবাহিনী মুর্তি বলে পরিচিত) পুজো হয়। দুর্গাপুজোর পর ত্রয়োদশীর দিন বিশেষভাবে এই পুজো করা হয়। তবেই দুর্গাপুজোর সমাপ্তি হয়। বর্তমানে জমিদারির জৌলুস না থাকলেও কাল এবং নিয়মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবারের সদস্যরা এই ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজা করে আসছেন। পুজো দেখতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন আসেন। পাশাপাশি নবমীর দিন ভিড় জমান গ্রামের সাধারণ মানুষ।