এতদিন, অফিস কাছারি, কিংবা কারখানায় শিফটের রোস্টারের কথা শুনেছিলেন। এবার রাজনৈতিক দলেও চালু হতে চলেছে এই রোস্টার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, কোথায়, কখন, কবে, কোন নেতা, কোন বুথ পরিদর্শন করবেন, একেবারে দিনক্ষণ, বার ধরে তার তালিকা তৈরি হচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পিছিয়ে থাকা বুথের মানুষের কাছে পৌঁছতে এমনই অভিনব কায়দায় এগোতে চাইছে তৃণমূল।
advertisement
আরও পড়ুন,দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্য়াস ট্য়াঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, হতাহত বহু! দগ্ধ হয়ে রাস্তায় ছুটছেন মানুষ
তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগণা জেলায়। সেখানে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার উপরে। নতুন বছরের শুরু থেকেই লোকসভা ও বিধানসভায় পিছিয়ে থাকা বুথ চিহ্নিত করে, রোস্টার তৈরি করে, সেখানকার মানুষের কাছে পৌঁছবেন তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়কেরা। গোষ্ঠীকোন্দল ভুলে নেতাদের এক যোগে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন নেতৃত্বও। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে নেতাদের। পাশাপাশি, যে নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তাঁদের আপাতত দলীয় কর্মসূচি থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন, বড়দিনের আনন্দে বড় কোপ! সঙ্গী খারাপ আবহাওয়া? জানুন হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস
সব রাজনৈতিক দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ উত্তর ২৪ পরগণা জেলা৷ কারণ, এই জেলায় লোকসভা এবং বিধানসভা আসন সংখ্যা বেশি। তাই এই জেলায় এগিয়ে থাকলে রাজ্যের সামগ্রিক পটচিত্রেও অনেকখানি এগিয়ে থাকা যায়। একটা সময় এই জেলায় ভাল ফল করত বামেরা। তারপর ২০০৯ সালের পর থেকে ঘুরে যায় রাজনীতির হাওয়া। গত কয়েকটি নির্বাচনের ফল বলছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে এখন তৃণমূলেরই প্রভাব বেশি।
তবে, সমস্যা শুধুমাত্র দুটো আসন ঘিরে। বনগাঁ ও ব্যারাকপুর। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই দুই আসনে জিতেছিল বিজেপি। যদিও পরে ব্যারাকপুরের বিজেপির প্রতীকে জয়ী সাংসদ যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে৷ একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ভাল ফল করলেও, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় তেমন ভাল ফল করতে পারেনি ঘাসফুল শিবির।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই পরাজয়ের কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, জনপ্রতিনিধি নন, স্থানীয় কিছু নেতার আচরণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এবার বাড়তি সতর্ক তৃণমূল শিবির। জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত,পিছিয়ে থাকা বুথ ধরে গ্রামে গ্রামে যেতে হবে নেতাদের। প্রয়োজনে ভুল স্বীকার করতে হবে। মানুষকে তৃণমূল সরকারের সুফল বোঝাতে হবে।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, "মানুষকে বোঝানোর কাজ শুরু হয়েছে। মানুষের কাছে পৌঁছে কোথায় নিজেদের ভুল ছিল, সেটা বলার সময় হয়েছে। সেটাই করা হবে। একজন সাংসদ বা বিধায়ক সব সময়ে এলাকায় থাকেন না। স্থানীয় নেতারাই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাঁদের কারও আচরণে ভুল বোঝাবুঝি ঘটলে তার ফল যে ভোট বাক্সে পড়ে। সেটা ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের ফলে বোঝা গিয়েছে।"
বারবার এই ভুল স্বীকার করা, নতুন তৃণমূল গড়ার মতো কথা শোনা গিয়েছে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। এক্ষেত্রেও সম্ভবত, তেমন বার্তারই প্রতিফলন হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।