তৃণমূলের এই কৌশল নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি-ও৷ তাঁদের দাবি, অনুব্রতর মুক্তির সম্ভাবনা নেই বুঝেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে শাসক দল৷ যদিও বিজেপি-র এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল৷
advertisement
আজ তিন দিনের বীরভূম সফরে বোলপুর পৌঁছবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজই বোলপুরে বীরভূমের সাংসদ, বিধায়ক সহ দলের বিভিন্ন স্তরের প্রায় সত্তর জন পদাধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি৷ আগামী দু' দিনে বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের পাশাপাশি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকও করার কথা তাঁর৷ অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফর এবং জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ৷
মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে যথারীতি বোলপুর শহরজুড়ে একাধিক তোড়ন তৈরি করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব৷ লাগানো হয়েছে পোস্টার, ব্যানার৷ কিন্তু সবাইকে অবাক করেই এগুলির কোনওটিতেই নেই অনুব্রত মণ্ডলের ছবি৷
গত বছর অগাস্ট মাসে গরু পাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই৷ তার পরেও তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরায়নি তৃণমূল৷ বরং আস্থাভাজন অনুব্রতর হয়ে সরব হন তৃণমূলনেত্রী৷ গত সেপ্টেম্বর মাসেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, 'বীরের সম্মান দিয়ে ওকে জেল থেকে বের করে আনবেন।' একা মুখ্যমন্ত্রী নন, বীরভূম সফরে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও অনুব্রতকে 'বাঘ' বলে সম্বোধন করেন৷ তার পরেও কেন মুখ্যমন্ত্রীর সফরে অনুব্রতর ছবি জায়গা পেল না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷
আরও পড়ুন: নতুন বছরেও খুলল না কপাল, ফের জেল হেফাজতেই অনুব্রত মণ্ডল
তৃণমূলের এই কৌশলকে কটাক্ষ করে বীরভূমের বিজেপি জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, 'বীরভূমের বাঘের আর ছবি নেই৷ তৃণমূল বুঝতে পারছে পরিস্থিতি ভয়ানক৷ তাই সরকার বাঁচাতে এখন কয়লা, গরু চোরকে বাদ দিতে হচ্ছে৷' বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষও কটাক্ষ করে বলেন, 'পার্থকে ছাড়তে সাতদিন সময় লেগেছিল, অনুব্রতকে ছাড়তে সাত মাস লাগল৷ আসলে যে যেমন টাকা তুলে দিয়েছে, তৃণমূলের কাছে তাঁর গুরুত্ব তেমন৷ বাঘ তো খাঁচায় চলে গেছে, এখন শেয়াল, খ্যাঁক শেয়ালরা ধরা পড়ছে৷'
যদিও বিজেপি-র এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়৷ তিনি বলেন, 'তিনি তো এখন প্রকাশ্যে নেই৷ প্রশাসনিক সভায় যেমন হয় সেরকম হয়েছে৷' সিউড়ির বিধায়ক এবং বীরভূমের তৃণমূল নেতা বিকাশ রায় চৌধুরীও বলেন, 'এখন কিছু বলব না, সময়মতো সব স্পষ্ট হবে৷'
রাজনৈতিক মহলের অবশ্য ব্যাখ্যা, প্রভাবশালী তকমাই এর আগে জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনুব্রতর অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাঁকে বাঘ বলে মন্ত্রীর সম্বোধন করার মতো ঘটনাকেও আদালতে হাতিয়ার করেছে ইডি-সিবিআই৷ সেই কারণেও ইচ্ছাকৃত ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি থেকে অনুব্রতর ছবি বাদ দেওয়া হয়েছে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷