সকাল ছ’টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত টানা ১৪ ঘণ্টার খাটুনি, প্রতিদিন প্রায় ৮০ কিলোমিটার স্কুটি চালানো, গরম–বৃষ্টি–ধুলো মেখে ঘুরে বেড়ানো—এসবই যেন এক নিঃশব্দ যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধটা লড়ে চলেছেন মাত্র ২৫ বছরের এক তরুণী অর্পিতা মান্না।
advertisement
অর্পিতা বরাবরই চেয়েছেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীনই নিজের খরচ মেটানোর জন্য টিউশনি শুরু করেছিলেন। কলেজে ওঠার পর তিনি বেসরকারি স্কুলে পড়ানো শুরু করেন। পরে একটি ফাইনান্স কোম্পানিতে চাকরি করেন, তারপর হলদিয়ায় সিকিউরিটি ম্যানেজারের পদেও দায়িত্ব সামলেছেন।
জীবনের প্রতিটি ধাপেই নতুন নতুন কাজ শিখেছেন, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আর আজ তিনি তমলুকের নিমতৌড়িতে এক ডেলিভারি সংস্থার সক্রিয় কর্মী। প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পার্সেল পৌঁছে দেন মানুষের বাড়ি বাড়ি।
অর্পিতা মান্না বলেন, “মানুষের ইচ্ছে থাকলেই উপায় বেরিয়ে আসে। ছোট থেকেই ভেবেছিলাম নিজের খরচ নিজে চালাব। এখন সেটা পারছি, পাশাপাশি পরিবারের পাশে দাঁড়াতেও পারছি। এতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। যখন যে কাজই করেছি, মন থেকে ভালবেসেই করেছি।” সমাজে এখনও অনেকেই মনে করেন, বাড়ি সামলে বাইরে কাজ করা মেয়েদের পক্ষে সহজ নয়। কিন্তু অর্পিতা সেই ধারণাকে প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ করছেন। অনলাইন কেনাকাটার ভিড়ের এই মৌসুমে যখন প্রতিটি পার্সেল সময়মত পৌঁছনোই বড় দায়িত্ব।
প্রায় পাঁচ বছর আগে নন্দকুমারে বিয়ে হয়েছিল অর্পিতার। কিন্তু কর্মসূত্রে স্বামী ভিনরাজ্যে থাকেন। তাই তিনি এখন বাবার বাড়িতেই থাকেন ছোট সন্তানের সঙ্গে। বছর তিনেকের বাচ্চাটিকে নিয়ে দিন শুরু হয় অর্পিতার। সকালবেলা সন্তানের খাওয়াদাওয়া করিয়ে, নিজের সব কাজ সেরে সকাল ছ’টায় স্কুটিতে চেপে রওনা দেন অফিসের উদ্দেশ্যে।
দিনভর একের পর এক পার্সেল নিয়ে ছুটে বেড়ান তমলুক শহরের অলিগলি, বাজার, কলোনি, গ্রামাঞ্চল। সন্ধে নামলে আবারও লড়াই স্কুটিতে করে বাড়ি ফেরা। এই তরুণীর দৃঢ়তা এককথায় অনন্য। সংসার, সন্তানের দায়িত্ব আর নিজের ক্যারিয়ার সব একসঙ্গে সামলান, এ যেন বাস্তবে দেবী শক্তি।