গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন বেছে বেছে বিরোধীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে বাড়িতে রাখা শস্যের ক্ষতি হয়েছে। জয়নগরে তৃণমূল নেতা খুনে অভিযুক্ত সাহাবুদ্দিনকে পিটিয়ে মেরেছে উত্তেজিত জনতা। এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে এলাকায় দুঃস্থ মেয়েদের বিয়ের জন্য সাহায্য করতেন এই তৃণমূল নেতা। অর্থের অভাবে কোনও মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না জানলে তিনি মেয়ের পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন, সাহায্য করতেন।
advertisement
আরও পড়ুনঃ চায়ের সঙ্গে ‘নোনতা’ খাচ্ছেন? অজান্তে বিষ ঢুকে ফোঁপরা শরীর, কী কী ক্ষতি হতে পারে?
এ দিন জোড়া খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সোমবারের পরে মঙ্গলবারও এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। খুনের পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি অন্য কোনও শত্রুতা রয়েছে, তা খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ।
স্থানীয়রা বলছেন, তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিনের উত্থানটা রূপকথার গল্পের মতো। জয়নগরের মহিষমারিতে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সইফুদ্দিনের। কর্মজীবনের শুরুতে বারুইপুর আদালতে মুহুরির কাজ করতেন। বিয়ে হয় সরিফা বিবি লস্করের সঙ্গে। স্থানীয়েরা বলেন, তার পরেই নাকি হুড়মুড়িয়ে ‘উন্নতি’ হয় সইফউদ্দিনের। বিয়ের পর বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। মুহুরির কাজ করার সুবাদে পুলিশের সঙ্গে ভাল চেনাজানা ছিল।
তবে সইফুদ্দিনের রাজনীতিতে পদার্পণ নাকি আচমকাই। বস্তুত, ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হতেই তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে সইফুদ্দিন। কিছুদিনের মধ্যে মুহুরির কাজ ছেড়ে দেন। তার র জয়নগর থানায় ডাকমাস্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রতিবেশীরা বলছেন, তখন থেকেই এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাকে সইফুদ্দিনের। ক্রমশ শাসকদলের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
২০১৮ সালে বামনগাছি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয় সইফুদ্দিনকে। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট পান স্ত্রী। জেতার পরেই স্ত্রী হন পঞ্চায়েত প্রধান। তারপর থেকে পুরো পরিবারের চালচলনই বদলে যায়। সইফুদ্দিনের এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, “এলাকায় ওঁর কথাতেই সব চলত।” ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে স্ত্রীর পাশাপাশি নিজেও ভোটে দাঁড়ান সইফুদ্দিন। এ বার সস্ত্রীক ভোটে জেতেন। এ বারও বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন স্ত্রী সেরিফা। মৃত সইফুদ্দিনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, “রোজ লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হত ওঁর হাত দিয়ে। জীবনযাত্রাতেও বদল এসেছিল। এখন আর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন না। চোখ ধাঁধানো বাড়িও তৈরি করেন।” যদিও সইফুদ্দিনের ব্যবসা ঠিক কিসের, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশের দাবি, ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে এই খুন। ঘটনার তদন্ত চলছে।
সুমন সাহা