শহিদ বেদিতে শুভেন্দুকে মাল্যদান না করতে দেওয়ার দাবিতে শহিদ বেদির সামনেই তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কুণাল ঘোষ, অখিল গিরি, সুফিয়ানরা ধরনায় বসেন। শেষে পুলিশের আবেদনে ধরনা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। তবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ কিংবা শেখ সুফিয়ানরা পুলিশকর্তাদের শর্ত দেন। শহিদ বেদিতে তাঁদের দেওয়া মালা যেন শুভেন্দু অধিকারী বা বিজেপি না খুলে দেয়। বিষয়টি পুলিশকে দেখতে বলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অবশেষে পুলিশি আশ্বাসে ধরনা প্রত্যাহার করা হয়। এ নিয়েও কুণাল ঘোষদের উদ্দেশ্যে কার্যত চ্যালেঞ্জের সুরে সরব হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ওদের সাহস থাকলে বসে থাকল না কেন? পালিয়েছে কেন? আমাকে শহিদ বেদিতে মালা দানে বাধা দিলে এদিন আমার সঙ্গে থাকা দশ হাজার লোক তুলে ওদের সামনের পুকুরে ফেলে দিত।’’
advertisement
বৃহস্পতিবার, নন্দীগ্রামে শহিদ স্মরণ। তৃণমূল বনাম বিজেপি। একই দিনে সম্মুখসমরে দুই ফুল শিবির। জোড়া আর পদ্ম। বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূলের কর্মসূচির পর বিকেলে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী। তেখালি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে মিছিল করে শহিদ বেদিতে পৌঁছন শুভেন্দু অধিকারী। মিছিলে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল নজর কাড়া। নিজ হাতে শহিদ বেদি পরিষ্কার ও গঙ্গাজল দিয়ে ধুইয়ে শহিদ বেদিতে মালা দেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু। শুভেন্দু আসার অনেক আগে থেকেই নন্দীগ্রামের কয়েকজন বিক্ষোভকারী দাবি জানাতে থাকেন, শহিদ বেদিতে যেন শুভেন্দু মালা দিতে না পারেন।
এই দাবিতে শহিদ বেদির সামনে শুরু হয় ধরনা। সেই ধরনা কর্মসূচিতেই যোগ দেন পূর্ব মেদিনীপুরের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ, শেখ সুফিয়ান, মন্ত্রী অখিল গিরিও। এরপর পুলিশের অনুরোধে ধরনা প্রত্যাহার করে নেন কুণাল ঘোষরা। তৃণমূল শর্ত দেয়, কোনও ভাবেই খোলা যাবে না শহিদ বেদির মালা। মালা খুললে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন কুণাল-সুফিয়ানরা। দেন থানা ঘেরাওয়েরও হুমকিও। তবে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ, শেখ সুফিয়ানদের প্রস্থানের পরেই পদ্মের নেতা-কর্মীদের প্রবেশ। একে একে খুলে ফেলেন শহিদ বেদিতে তৃণমূলের লাগানো ফুলের মালা।
বিজেপির আনা ফুল- মালা দিয়ে নব রূপে সাজানো হয় শহিদ বেদি। নন্দীগ্রামে ‘ফুল যুদ্ধ’-তে তখন সরগরম গোকুলনগর। এরপর কয়েকশো কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিকেলে মিছিল করে এসে সোজা শহিদ বেদিতে পৌঁছে শহিদ বেদির শুদ্ধকরণ করে শুভেন্দু মাল দেন। বেদিতে মাথা ঠুকে করেন প্রণাম। তারপর অংশ নেন সভায়। মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় বললেন, ‘‘৪১টা পরিবারের মধ্যে ৩০টির বেশি শহিদ পরিবার আমার সঙ্গে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে।’’ কুণাল ঘোষকে 'চোর' বলে তীব্র আক্রমণ করে শুভেন্দু এও বলেন, ‘‘এত সহজে এখানকার লোককে কেনাবেচা যায় না। আমি আবার প্রমাণ করে দেব নন্দীগ্রাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চায় না।’’ পাল্টা কুণাল ঘোষও শুভেন্দুকে বিশ্বাসঘাতক বলে সুর চড়ান। বলেন, ‘‘শুভেন্দুর কোনও অধিকারই নেই শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর।’’ এভাবেই বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রাম দিবসে সারাদিন ফুল মালা নিয়ে দুই ফুল শিবিরের কর্মসূচি ঘিরে সরগরম ছিল জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রাম।